‘মরার কান্দা সকলে কান্দে’ গানের স্রষ্টা কানাই শাহের স্মরণোৎসব আগামীকাল শুরু

মাসুদুর রহমান মাসুদ, ঝিকরগাছা (যশোর) 
আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২৩, ১৭: ২৫
Thumbnail image

যেজন গান জানে না//যে জন গান শোনে না//যেজন গান বোঝে না, আমি জানি সেজন মাওলারে ভালোবাসে না, মরার কান্দা সকলে কান্দে//জ্যান্তের কান্দা কেউ কান্দে না, আমি সব কাজের কাজি//মদিনাতে রাসুল আমি শ্রীক্ষেত্রে জগন্নাথ-সহ বিভিন্ন লোকগানের রচয়িতা হলেন ক্ষ্যাপা বাউল কানাই শাহ। যশোরের এই কৃতি সন্তানের তিরোধান দিবস উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী স্মরণোৎসব শুরু হচ্ছে আগামীকাল রোববার। 

 ১৩৯৮ সালের ১৩ কার্তিক কানাই শাহ মারা যান। তাঁর ৩৩ তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়ায় নিজের বসতবাড়িতে দুই দিনের কানাই শাহ স্মরণোৎসব আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে। শেষ হবে আগামী মঙ্গলবার সূর্যোদয়ের আগে। 

তিরোধান দিবসে প্রতিবছর কানাই শাহ স্মরণোৎসব করেন তাঁর অনুসারীরা। এ উপলক্ষে দু-এক দিন আগে থেকেই কানাই শাহের মাজার কেন্দ্রিক ভক্ত-শিষ্য ও সাধুদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। কানাই শাহ স্মৃতি সংঘ স্মরণোৎসব সফল করতে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে গুরু বন্দনা, গুরু দোয়া, সাধুসঙ্গ, আলোচনা ও বাউল সংগীত পরিবেশন। 

আগামীকাল রোববার গুরু বন্দনার মধ্য দিয়ে শুরু হবে কানাই শাহ স্মরণোৎসব। বিকেলে স্মরণোৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন ঝিকরগাছার বাঁকড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ (আইসি) ফকির পান্নু মিয়া। আগামী মঙ্গলবার সূর্যোদয়ের আগে কানাই শাহ স্মরণোৎসব শেষ হবে। 

কানাই শাহ স্মৃতি সংঘের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম (সাংবাদিক) বলেন, ‘এবারেও কানাই শাহ স্মরণোৎসবের আলোচনা সভায় থাকবেন গবেষক, দার্শনিক, কবি, সাহিত্যিক, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ।’ 

স্থানীয় লোক সংস্কৃতির গবেষক অধ্যাপক সফিয়ার রহমান বলেন, ‘ক্ষ্যাপা বাউল কানাই শাহ ছিলেন ফকির লালন সাঁইজির চতুর্থ ধাপের শিষ্য। আমি ক্ষ্যাপা বাউল কানাই শাহের রচিত গানের একটি পাণ্ডুলিপি বাংলা একাডেমিতে জমা দিয়েছি। কানাই শাহ যে সব গান রচনা করেছেন, সুর করে নিজেই গেয়েছেন তা সব পাওয়া মুসকিল। তাঁর গানগুলো গবেষণা করলে বাংলা লোকসাহিত্যের অতীত ও সম্ভাবনা অনেক কিছু খুঁজে পাওয়া যাবে।’ 

অধ্যাপক সফিয়ার রহমান আরও বলেন, ‘ক্ষ্যাপা বাউল কানাই শাহ লালন সাঁইজির আখড়ায় বাউল গানের সঙ্গে কোমর দুলিয়ে নাচ শুরু করেন বলেও একাধিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। বাউল কানাই শাহকে নিয়ে আরও গবেষণা দরকার।’ 

 ১৩০৩ সালের ৩ ভাদ্র কপোতাক্ষ নদের তীরে বাঁকড়া গ্রামে মুসলিম পরিবারে কানাই শাহ জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকে তিনি দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে বেড়ে ওঠেন। কিশোরবেলা থেকে তিনি মাটি-মানুষের গান লোকসংগীত চর্চা শুরু করেন। এক পর্যায় তিনি বাউল গান রচয়িতা, সুরকার ও শিল্পী হিসেবে খ্যাতি পান। 

 ১৯৮৩ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর আমন্ত্রণে কানাই শাহ কলকাতার শান্তি নিকেতনে বাউল সংগীত অনুষ্ঠানে স্বরচিত বাউল গান পরিবেশন করেন। ওই অনুষ্ঠানে কানাই শাহ ‘ক্ষ্যাপা বাউল’ উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯৭৮ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গে ৪ দিনব্যাপী বাউল মেলায় সেরা বাউল শিল্পী হিসেবে নির্বাচিত হন। 

কানাই শাহ জীবদ্দশায় সহস্রাধিক বাউল গান রচনা করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বাউল গানের চর্চা করে গেছেন। সারা দেশে তাঁর অসংখ্য ভক্ত শিষ্য রয়েছে। তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারের নিয়মিত বাউল গানের শিল্পী ছিলেন। তাঁর ছোট ছেলে শাহ আলম লালন উত্তরসূরি হিসেবে লোক সংগীত চর্চা করছেন। তিনি খুলনা বেতারের নিয়মিত লোকসংগীত শিল্পী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত