Ajker Patrika

ভুবন ভ্রমিয়া শেষে কুমির এসেছে ফিরে

এস এস শোহান, বাগেরহাট
ভুবন ভ্রমিয়া শেষে কুমির এসেছে ফিরে

সিংহল সমুদ্র থেকে মালয় সাগর– সে ঘুরেছে অনেক! তারপর ‘ভুবন ভ্রমিয়া শেষে’ ঠিক এক মাস পর ফিরে এসেছে আপন ঠিকানায়। তার মাথায় একটি ট্রান্সমিটার বসানো। সেই যন্ত্রের হিসাব বলছে, এই এক মাসে সে পাড়ি দিয়েছে দেড় শ কিলোমিটারের বেশি পথ। এই পথের সব নদীর জল-কাদার গন্ধ লেগে আছে তার গায়ে।

সুন্দরবনের জল-হাওয়ায় বেড়ে ওঠা কুমিরটির কোনো নাম নেই। থাকবেই-বা কী করে? আদিবাস ছিল মাদারীপুরের একটি ফার্মে। বেআইনিভাবে সেখানেই বড় হচ্ছিল সে। একদিন সেই খবর চলে যায় র‍্যাবের কাছে। ২০২২ সালে তারা উদ্ধার করে পাঠিয়ে দেয় সুন্দরবনে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কাছে।

জার্মান ফেডারেল মিনিস্ট্রি ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (জিআইজেড) সহযোগিতা নিয়ে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) এবং বন বিভাগ যৌথভাবে কুমির নিয়ে গবেষণা করছে। এই দলে অস্ট্রেলিয়ার কুমির গবেষক ড. সামারাভিরা ও পল বেরিও যুক্ত হয়েছেন। গবেষণার অংশ হিসেবে তাঁরা ১৩-১৬ মার্চের মধ্যে চারটি লোনাপানির কুমির ছেড়ে দেন সুন্দরবনের খালে। আর তাদের গতিবিধি জানতে মাথায় বসিয়ে দেওয়া হয় স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার।

এই গবেষণা প্রকল্পের সমন্বয়কারী সারোয়ার আলম দীপু বললেন, যে যন্ত্রটি কুমিরের মাথায় বসিয়ে দেওয়া হয়, তার ওজন দুই গ্রামের কম। এর মেয়াদ এক বছর। এই চিপে কুমিরের কোনো ক্ষতি হয় না।

যে চারটি কুমিরকে ছাড়া হয়, সেগুলোর দুটি পুরুষ, দুটি স্ত্রী। স্ত্রী দুটির একটি সুন্দরবনের করমজল বন্য প্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে বেড়ে ওঠা জুলিয়েট, অন্যটি যশোরের কেশবপুরে মাইকেল মধুসূদন দত্তের এলাকায় পাওয়া মধু। পুরুষ দুটির একটি মাদারীপুর থেকে র‍্যাব উদ্ধার করেছিল, অন্যটি সুন্দরবনের হাড়বাড়িয়া থেকে ফাঁদ পেতে ধরা।

করমজল বন্য প্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির জানান, চারটি কুমিরের তিনটি সুন্দরবনের জল-হাওয়ায় অবাধে ঘুরে বেড়ালেও একটি পুরুষ কুমিরের বারোমুখী স্বভাব। সে কিছুদিন সুন্দরবনে জিরোয়, তারপর গা মোচড় দিয়ে চলে যায় মোরেলগঞ্জের পানগুছিতে। সেখান থেকে বরিশালের বলেশ্বর নদে। এভাবে মাসভর টইটই। পরে মরা বলেশ্বর হয়ে পৌঁছায় চিতলমারীর শৈলদাহে। ১১ এপ্রিল রাতে স্থানীয় একটি খালের পাশ দিয়ে যাওয়া পিচ ঢালাই সড়কের ওপর উঠে ওম নিয়ে চলে যায় স্থানীয় একটি মৎস্য ঘেরে। সেই খবর পেয়ে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ ১২ এপ্রিল রাতে তাকে পাকড়াও করে। এরপর ১৩ এপ্রিল সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের চরাপুটিয়ায় আবার তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

সুন্দরবনের পানিতে এখন আবার সে হয়তো পুরোনো নারী সঙ্গীদের দেখা পাবে। তারপর এক নারী কুমির হয়তো তাকে বলবে, ‘এত দিন কোথায় ছিলেন?’ যেন চাঁদের উঠোন ছুঁয়ে ফিরে এসেছে চন্দ্রযান।

কুমির গবেষণার সঙ্গে যুক্ত থাকা করমজল বন্য প্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির বলেন, চিতলমারী থেকে আনা কুমিরটি এক মাসে ১৫০ কিলোমিটারের বেশি পথ পাড়ি দিয়েছে। পছন্দের জায়গা খুঁজতেই তার এতটা পথ পাড়ি দেওয়া।

কুমিরের চোখ সত্যিই এক আশ্চর্য জিনিস। এত রাস্তা সে চিনল কী করে! সুন্দর থেকে বরিশাল, তারপর চিতলমারী...। কোথায় সুন্দরবন, কোথায় বরিশাল—সবই জানে নাম না দেওয়া এই কুমির।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আমিনুল ইসলাম নন, শিক্ষা উপদেষ্টা হচ্ছেন অধ্যাপক আবরার

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোঁড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

উপদেষ্টা হচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আমিনুল ইসলাম

বসুন্ধরায় ছিনতাইকারী সন্দেহে ২ বিদেশি নাগরিককে মারধর

বিএনপির দুই পেশাজীবী সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত