Ajker Patrika

এক যুগ পর বেনাপোল পৌরসভা নির্বাচন, ইভিএমে ভোট গ্রহণে ধীর গতি

যশোর প্রতিনিধি
আপডেট : ১৭ জুলাই ২০২৩, ১৩: ১৬
এক যুগ পর বেনাপোল পৌরসভা নির্বাচন, ইভিএমে ভোট গ্রহণে ধীর গতি

নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে আসেন। সকাল ৮টায় শুরু হয় ভোট গ্রহণ। সকাল থেকে শান্তিপূর্ণ ভোট চললেও যশোরের বেনাপোল পৌরসভা নির্বাচনে সব কেন্দ্রেই ভোট গ্রহণে ধীর গতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইভিএমে ভোটাররা ভোট দেওয়ার বিষয়টি বুঝতে না পারার কারণে এমনটি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সকাল ৮টায় বেনাপোল বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে আসেন নুরজাহান বেগম (৪৫)। ভোটের লাইনে এসে দাঁড়িয়েছিলেন তিন ঘণ্টা। ঘড়ির কাঁটা সাড়ে ১০টা পার হলেও তিনি ভোট দিতে পারেননি। ক্ষোভ প্রকাশ করে নুরজাহান বলেন, ‘তাড়াতাড়ি ভোট দিয়ে চলে যাওয়ার জন্য ঘরের কাজ ফেলে সকালেই এসেছিলাম। কিন্তু তিন ঘণ্টা রোদের মধ্যে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও ভোট দিতে পারিনি। লাইন এগোচ্ছেই না।’

শুকুর আলী নামে আরেক ভোটার বলেন, ‘জীবনে প্রথম ইভিএম মেশিনে ভোট দেওয়ার জন্য আসলাম। তবে দীর্ঘ লাইন। ভোটের লাইন কমছে না। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে আমার চোখের সামনে মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছে ভোটাররা। তাই ভোট পরে দেব বলে চলে যাচ্ছি।’ 

ভবেরবেড় এলাকা থেকে ভোটকেন্দ্রে আসা তহমিনা খাতুন বলেন, ‘ইভিএমে ভোট দিতে ঝামেলা হয়েছিল। দুই মিনিট ধরে ভোট দিয়েছি। সঠিকভাবে না বোঝার কারণে এমনটি হয়েছে। ভোট দেওয়ার পরে দেখলাম সহজ।’

এই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমান বলেন, ‘সকাল থেকে শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণ চলছে। তবে ভোট গ্রহণে ধীর গতি। ভোটাররা কীভাবে ভোট দিতে হয় আমরা দেখিয়ে দিচ্ছি। তারপরও গোপন কক্ষে গিয়ে তিন-চারটা মেশিন দেখে ভোট দেওয়ার প্রক্রিয়া গুলিয়ে ফেলছেন। প্রথম দুই ঘণ্টায় ২০০ ভোটও পড়েনি। অথচ কেন্দ্রের বাইরে শত শত মানুষ অপেক্ষমাণ।’

এক যুগ পর বেনাপোল পৌরসভায় ভোট উৎসব আজ। ইভিএম পদ্ধতিতে পৌরসভার ১২টি কেন্দ্রে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। সীমানা জটিলতায় দীর্ঘদিন এ পৌরসভায় নির্বাচন বন্ধ ছিল। অনেক দিন পর ভোট হওয়ায় পৌরবাসীর মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। সকাল থেকে ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও মডেল নির্বাচন করতে ছয় স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মাঠে থাকছে সাদা পোশাকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও। ফলে কাউন্সিলর ও মেয়র পদে প্রভাব দেখানোর সুযোগ নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ইভিএমের কারণে ভোটগ্রহণে ধীর গতি লক্ষ্য করা গেছেনির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও বেনাপোল পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নৌকা প্রতীক, বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মফিজুর রহমান সজন মোবাইল ফোন প্রতীক ও জগ প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক আহ্বায়ক ফারুক হোসেন উজ্জ্বল। তবে ভোট গ্রহণের দুই দিন আগে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন ফারুক হোসেন।

নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামের কোনো প্রার্থী নেই। ফলে মেয়র পদে ভোটের লড়াই এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নাসির উদ্দীন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মফিজুর রহমানের মধ্যে। তবে কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে কেন্দ্রে মোবাইল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থীর কোনো পোলিং এজেন্ট নেই। এই প্রার্থীর অভিযোগ নৌকার প্রতীকের কর্মী সমর্থকেরা ভোটের আগে রাতে পোলিং এজেন্টদের ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। তাই তারা কেন্দ্রে আসেনি। এ বিষয়ে বেলা ১টায় সংবাদ সম্মেলন করবেন। এ ছাড়া ৯টি সাধারণ ওয়ার্ডে ৪৭ জন প্রার্থী ও সংরক্ষিত আসনে ১৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

সকাল সাড়ে ৯টায় বেনাপোল বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শনে আসেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নাসির উদ্দিন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ভোট উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণভাবে চলছে। সব কেন্দ্রেই ভোটারদের দীর্ঘ লাইন। দীর্ঘদিন পর ভোট হওয়াতে মানুষের মধ্যে উৎসব উদ্দীপনা কাজ করছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রথমবারের মতো ইভিএম মেশিনে ভোট গ্রহণ হওয়াতে অনেকের ভোট প্রদানে সমস্যা হচ্ছে। নিয়মকানুন না জানাতে ভোট দিতে সমস্যা হচ্ছে। এই সমস্যায় পড়ছেন কম লেখাপড়া জানা মানুষ ও বয়স্করা। যদিও আমরা প্রচারণাকালে ভোটারদের কীভাবে ভোট দিতে হয় সেটা দেখিয়ে দিয়েছি।’ 

নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আনিচুর রহমান বলেন, ৯টি বিদ্যালয়ে ১২টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ শান্তিপূর্ণ হচ্ছে। ইভিএমে ভোট দিতে পেরে ভোটাররা খুশি। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ১১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সব সময় উপস্থিত রয়েছেন। প্রতিটি কেন্দ্রে ৮ জন পুলিশ ও ১২ জন আনসার সদস্য রয়েছেন। তিন প্লাটুন র‍্যাব দুই প্লাটুন বিজিবির সঙ্গে মাঠে টহল দিচ্ছে। প্রতিটি বুথে বসানো হয়েছে একাধিক সিসি ক্যামেরা। যা রিটার্নিং কার্যালয় ও নির্বাচন কমিশন পর্যবেক্ষণ করছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) বেলাল হোসাইন বলেন, সকাল থেকে শান্তিপূর্ণ ভোট হচ্ছে। ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে আসতে পারে পুলিশ সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা নেই।

দেশের সবচেয়ে বড় বেনাপোল বন্দরে অবস্থিত বেনাপোল পৌরসভা। বন্দর থেকে সরকারের প্রতি বছর ৭ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়। বাণিজ্যিক ও শিল্প খাতে এ বন্দরের ভূমিকা যেমন অপরিসীম, তেমনি প্রার্থীদের কাছে লোভনীয়। ভোটাররা দাবি করছেন, প্রত্যেক ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ ঘরানার একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থী। সে ক্ষেত্রে কাউন্সিলররা নিজেদের জয় নিশ্চিত করতে ভোটারদের কেন্দ্রে আনার চেষ্টা করছেন। বিএনপি সমর্থকেরা কাউন্সিলর প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার পর মেয়র পদে কাকে ভোট দেবেন সেটার ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছুই। অনেকের ভাষ্য, যদি ব্যক্তি হিসেবে ভোট দেন সে ক্ষেত্রে এক ধরনের ফল। আর প্রতীক দেখে ভোট দিলে ফল হবে আরেক ধরনের। এ ছাড়া রয়েছে নতুন ভোটার। তারাও জয়-পরাজয় নির্ধারণে ভূমিকা রাখবেন বলে বন্দর নগরী জুড়ে রয়েছে আলোচনা এখন।

২০০৬ সালে বেনাপোল ইউনিয়নের ১১টি গ্রামের অংশ নিয়ে বেনাপোল পৌরসভা গঠনের পর ২০১১ সালের ১৩ জানুয়ারি প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সেখানে আর কোনো নির্বাচন হয়নি। সে নির্বাচনে বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম মেয়র নির্বাচিত হন। ২০১৫ সালের ১৩ জানুয়ারি ওই পরিষদের মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও আর নির্বাচন হয়নি। প্রথম শ্রেণির এই পৌরসভার নির্বাচন মামলার কারণে বন্ধ ছিল। বেনাপোল পৌরসভা নির্বাচনে ৩০ হাজার ৩৮৫ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত