সাতক্ষীরায় ৫ হাজার হেক্টর ঘের প্লাবিত, চাষিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ

আবুল কাসেম, সাতক্ষীরা
প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১৯: ৪৬

সাতক্ষীরায় অতিবর্ষণ ও নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে পাঁচ হাজার মাছের ঘের। ভেসে গেছে মাছ। চাষিদের কপালে এখন চিন্তার ভাঁজ। অনেকে চাষি ঋণ নিয়ে মাছ চাষাবাদ করেছেন, কীভাবে ঋণ শোধ করবেন এখন এ দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তাঁদের।

জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় ৮৫ হাজার হেক্টর ঘেরে মাছ চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ভেসে গেছে ৫ হাজার হেক্টর ঘেরের মাছ। ক্ষতির পরিমাণ ৬৩ কোটি টাকা। অতিবর্ষণ ও বেতনা নদীর রিংবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে এসব ঘের।

জেলার অধিকাংশ এলাকা জলাবদ্ধ ও লবণাক্ত হওয়ায় মাছ চাষ জেলার প্রধান অর্থকরী ফসল। বেশ কয়েক বছর মাছের উৎপাদন ছিল ভালো। অনেকে তাই বড় করার জন্য সাদা মাছ ধরেননি কয়েক বছর।

অন্যদিকে, প্রথমবারের মতো সাদা সোনা খ্যাত চিংড়ি মাছ ধরার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন চাষিরা। কিন্তু অতিবর্ষণ ও বেতনা নদীর রিংবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় হেক্টরের পর হেক্টর ঘের। ভেসে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে চাষিরা। সরকারি হিসেবে ক্ষতির পরিমাণ ৬৩ লাখ টাকা হলেও এর পরিমাণ শত কোটি টাকা ছাড়াবে। ঋণ পরিশোধের চিন্তায় দিশেহারা তাঁরা। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের দাবি সরকারি সহায়তার।

সাতক্ষীরার আহসাননগর এলাকার ঘের চাষি বিপ্লব কুমার রায় বলেন, ‘আমাদের এখানে প্রত্যেকের ঘেরের ওপর হাঁটুজল। সব ভেসে গেছে। আমরা এসব ঘেরগুলো কোনো না কোনো সংস্থা থেকে লোন নিয়ে করা। আমার ৮০ বিঘা জমিতে ঘের আছে। গ্রামীণ ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংক থেকে ১১ লাখ টাকা লোন নেওয়া। কিস্তি তো ছাড় পাওয়া যায় না। এ ছাড়া দোকানে ৫৫ লাখ টাকা বাকি। সরকার যদি ব্যবস্থা না নেয়, তবে আমাদের সব ছেড়ে চলে যেতে হবে।’

বিনেরপোতা এলাকার আবু রায়হান বলেন, ‘আমার ১০ বিঘার ঘের ভেসে গেছে। কোনো কিছু করার নেই। রাস্তায় রাস্তায় ভেসে বেড়াচ্ছি। বর্ষা ও বাঁধ ভেঙে যাওয়ার কারণে নতুন ও পুরোনো মাছ ভেসে গেছে। আমি ৪ লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত।’

অনেকে আবার কয়েক বছর মাছ ধরেননি। মাছ বড় করার জন্য ২-৩ বছর ঘেরে রেখেছিলেন। অতিবর্ষণে পানি বেড়ে গেছে। সেই পানি সরতে না পারায় বড় বড় মৃগেল, রুই, গ্লাস কার্প মাছ ভেসে গেছে।

‘মাছ চাষ করেই সংসার চালাই। ২-৩ বছর মাছ পুষে রেখেছি। জাল টানিনি। কাতলা মাছ একেকটা ৬-৭ কেজি, গ্লাস কার্প ১০-১২ কেজি। এবারের প্লাবনে আমার প্রায় ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’ বলেন, আহসাননগর এলাকার ইবাদত আলী।

ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা পাঠানো হয়েছে অধিদপ্তরে। সরকারি সহায়তা পেলে চাষিদের মধ্যে প্রণোদনা দেওয়ার আশ্বাস জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামের।

মৎস্য কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মাছ চাষের জন্য সাতক্ষীরা একটি বিখ্যাত জেলা। এখানে প্রায় ৮৫ হাজার হেক্টর জমিতে চিংড়ি ও সাদা মাছের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ৫ হাজার ৩০০ হেক্টর জমির ঘের প্লাবিত হয়েছে। এর জন্য প্রায় ৬৩ লাখ টাকা মাছ চাষিদের ক্ষতি হয়েছে। তাঁরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

এই মৎস্য কর্মকর্তা আরও বলেন, সদর উপজেলায় এমনও হয়েছে মাছ ঘের থেকে খালে চলে এসেছে। মাছ ধরছে অন্যরা। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের তালিকা সরকারের কাছে পাঠিয়েছি। প্রণোদনা পেলে চাষিদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। আর সহজ শর্তে ঋণের জন্য আমরা ব্যাংকগুলোর সঙ্গে ট্যাগ করাচ্ছি চাষিদের।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত