যশোরে বড় ভাইয়েরা প্রার্থী, প্রস্তুত ‘কিশোর গ্যাং’

যশোর প্রতিনিধি
আপডেট : ১২ মে ২০২৪, ১০: ৪৭
Thumbnail image

তৃতীয় ধাপে আগামী ২৯ মে যশোর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে আলোচনায় এসেছে ‘কিশোর গ্যাং’। জানা গেছে, নির্বাচনে ‘কিশোর গ্যাং’ সদস্যদের বড় ভাইয়েরা প্রার্থী হওয়ায় তাদের মাঠে নামানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাঁদের লক্ষ্য, নির্বাচনী মাঠে সন্ত্রাসের মাধ্যমে আতঙ্ক সৃষ্টি করা; যাতে সাধারণ ভোটাররা ভোটকেন্দ্রমুখী না হন।

এদিকে কিশোর গ্যাং নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন সাধারণ প্রার্থীরা। তবে সন্ত্রাস ও কিশোর গ্যাং মোকাবিলায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়া আছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। তাদের ভাষ্য, নির্বাচনের মাঠে যেকোনো অপতৎপরতার বিরুদ্ধে প্রশাসন ‘জিরো টলারেন্স’ নিয়ে মাঠে থাকবে।

চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান জেলা যুবলীগ সভাপতি মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথ, যুবলীগ নেতা তৌহিদ চাকলাদার ফন্টু, যুব মহিলা লীগের নেত্রী ফাতেমা আনোয়ার, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল ও যুবলীগ নেতা শফিকুল ইসলাম জুয়েল। এ ছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে সুলতান মাহমুদ বিপুল, কামাল খাঁ, মনিরুজ্জামান, শাহজাহান কবীর শিপলু ও শেখ জাহিদুর রহমান; মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জ্যোৎস্না আরা বেগম মিলি, বাশিনুর নাহার ও শিল্পী খাতুন ভোটের মাঠে রয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ‘ঘরের মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা’ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এর মধ্যে ‘হাইব্রিড নেতা’, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, কিশোর গ্যাংয়ের গডফাদার, অস্ত্র-মাদকের কারবারিও নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। আর এতে আতঙ্কিত বোধ করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, যশোর শহর ও শহরতলির বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় প্রায় অর্ধশত কিশোর গ্যাং সক্রিয় রয়েছে। একেকটি গ্রুপে ৮ থেকে ১৬ জন করে সদস্য রয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় একাধিক গ্রুপও সক্রিয় রয়েছে। এসব গ্রুপের সঙ্গে জড়িতদের বয়স ১৪ থেকে ২১ বছর পর্যন্ত। বিভিন্ন অপরাধে জড়িত এই কিশোরেরা দেশি অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে; পাশাপাশি চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা এমনকি অপহরণ, বোমাবাজি ও হত্যাকাণ্ডের মতো গুরুতর অপরাধেও জড়িত তারা। এদের বড় ভাই হিসেবে পরিচিত একাধিক প্রার্থীও এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

যশোর পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে, যশোরে সন্ত্রাসী তৎপরতা, খুন, চাঁদাবাজি, মাদকের কারবারসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের অর্ধশত ‘কিশোর গ্যাং’য়ের নাম জড়িয়ে রয়েছে। তাদের নেপথ্যের একাধিক নিয়ন্ত্রণকারী নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। এ কারণে এই প্রার্থীরা নির্বাচনী পরিবেশ ঘোলাটে করতে কিশোর গ্যাংকে মাঠে নামানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাঁদের টার্গেট, নির্বাচনী মাঠে সন্ত্রাসের মাধ্যমে আতঙ্ক সৃষ্টি করা; যাতে সাধারণ ভোটাররা ভোটকেন্দ্রমুখী না হন।

চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী শফিকুল ইসলাম জুয়েল বলেন, ‘নির্বাচনে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। অনেক প্রার্থীর প্রচারে আমরা তাদের দেখছি। এতে সাধারণ ভোটার থেকে প্রার্থীরাও আতঙ্কিত। সুষ্ঠু ভোট গ্রহণে এসব কিশোর গ্যাংকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজর রাখা উচিত। শুধু কিশোর গ্যাং নয়; যারা এসব কিশোরের পৃষ্ঠপোষক ও নিয়ন্ত্রণকর্তা, তাদেরও নজরদারির মধ্যে রাখা উচিত।’

যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কিশোর গ্যাং বা কোনো সন্ত্রাসী চক্রেকে নির্বাচনী মাঠে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সুযোগ দেওয়া হবে না। যেকোনো অপতৎপরতা পুলিশ আইনানুগভাবে কঠোর হাতে দমন করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত