তীব্র শীতেও জমে উঠেছে সাগরদাঁড়ির মধুমেলা

কামরুজ্জামান রাজু, কেশবপুর (যশোর)
প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১৫: ৫০
আপডেট : ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১৫: ৫৫

তীব্র শীতেও হাজারো দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখর সাগরদাঁড়ির মধুমেলা। মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের বসতভিটা, কপোতাক্ষ নদের পাড়, বিদায় ঘাট, কবির স্মৃতি বিজড়িত বুড়ো কাঠবাদাম গাছতলা ও মধুমেলা প্রাঙ্গণ মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। মাইকেল মধুসূদন দত্তের ২০০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গত ১৯ জানুয়ারি থেকে সাগরদাঁড়িতে শুরু হয়েছে নয় দিনব্যাপী এই মধুমেলা। 

আজ বুধবার মেলার ষষ্ঠ দিন সকাল থেকে মেলার মাঠসহ কপোতাক্ষ নদ পাড়ে প্রচুর লোক সমাগম চোখে পড়ে। এবারের মধুমেলায় মধুমঞ্চে কেশবপুর ও যশোরের বিভিন্ন শিল্পীগোষ্ঠীসহ কবি, সাহিত্যিক ও শিল্পীদের আলোচনা, কবিতা, সংগীত পরিবেশনার পাশাপাশি প্যান্ডেলে সার্কাস, জাদু প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। আছে মোটরসাইকেল ও মাইক্রোবাসের রোমাঞ্চকর খেলা ‘মৃত্যুকূপ’। 

শিশুদের বিনোদনের জন্য রয়েছে নাগরদোলাসহ নানা আয়োজন। মেলার মাঠে কুটির শিল্পসহ ছোট-বাড় প্রায় ৫ শ স্টল বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছে। হরেক রকমের পান, মটকা চা, ফুচকা-চটপটি, আচার ও মোয়া-মুড়ির দোকানগুলোতে রয়েছে দর্শনার্থীদের ভিড়। মেলার মাঠের এক পাশে রয়েছে আসবাবপত্রের দোকান। 

কপোতাক্ষ নদ পাড়ের কবির স্মৃতি বিজড়িত কাঠবাদাম গাছ তলার পাশে বসানো হয়েছে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট নামে একটি চায়ের স্টল। ওই স্টলে কথা হয় ঢাকার বাসাবো থেকে আসা রোজিনা খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, তার কলেজপড়ুয়া ছেলে শাহেদ খান ও স্কুলপড়ুয়া ছেলে জায়েদ খানকে নিয়ে সাগরদাঁড়ি মধুমেলায় এসেছেন। 

সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার মানিকহার গ্রাম থেকে এসেছেন মুজিবুর রহমান, তবিবুর রহমান, মহব্বত হোসেন। তাঁরা তিন বন্ধু। সারা দিন কপোতাক্ষ নদ পাড়, মেলার মাঠ ঘুরে বিকেলে মধুমঞ্চের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান তাদের মুগ্ধ করেছে। প্রতি বছরই মেলায় আসেন।

মুজিবুর রহমান জানান, মধুমেলা তাঁদের প্রাণের মেলায় পরিণত হয়েছে। কিন্তু কপোতাক্ষ নদের ওপর সেতু নির্মাণ না হওয়ায় মেলার সময় দর্শনার্থীদের যাওয়া আসায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়। 

মধুমেলায় আগত দর্শনার্থীরা মিষ্টির দোকান থেকে মিষ্টি কিনছেন। ছবি: আজকের পত্রিকামেলার মাঠে রয়েছে বাহারি ও মুখরোচক সব মিষ্টির দোকান। পরিতোষ নন্দীর দোকানে বিশাল আকারের একটি রাজভোগ মিষ্টি ৭০০ টাকা এবং একটি বালিশ মিষ্টি ৩০০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। দোকানের কর্মচারী শিমুল ঘোষ জানান, দর্শনার্থীরা মিষ্টি কেনার থেকে দেখতে আসছে বেশি। 

সাতক্ষীরা থেকে আসা আসিফ হোসেন বলেন, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মধুমেলায় এসেছি। মেলা থেকে ছেলে-মেয়েদের জন্য বিভিন্ন খেলনা কেনা হয়েছে। মধুমেলায় এসে কবির বসতভিটা, কপোতাক্ষ নদ পার, বিদায় ঘাট, কবির স্মৃতি বিজড়িত বুড়ো কাঠবাদাম গাছতলা ও মধুমেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে খুবই ভালো লেগেছে।

বাগেরহাট শহর থেকে মেলা দেখতে আসা রায়হান হোসেন বলেন, মধুমেলার কথা অনেক শুনেছি, কিন্তু কখনো আসা হয়নি। এবারই প্রথম এসেছি। মেলার মাঠ ও কপোতাক্ষ নদ পার ঘুরে বিভিন্ন প্যান্ডেলের অনুষ্ঠান দেখে মুগ্ধ হয়েছি। 

মধুমেলার মাঠ ঘুরে বিভিন্ন স্টল গুলোতে নারী দর্শনার্থীদের সাংসারিক মালামালসহ ছেলেমেয়েদের জন্য বিভিন্ন খেলার সামগ্রী কিনতে দেখা যায়।

কেশবপুরের পাঁজিয়া গ্রাম থেকে পরিবার নিয়ে এসেছেন আব্দুর রহমান নামে এক কৃষক। তিনি জানান, এবারের মেলায় কৃষিবিষয়ক স্টল না থাকায় কিছুটা হলেও মেলার আকর্ষণ কম হয়েছে। তবে এখানকার চমৎকার পরিবেশ তাঁদের ভালো লেগেছে।
 
দর্শনার্থীরা কুটির শিল্পের দোকান থেকে বিভিন্ন মালামাল দেখছেন। ছবি: আজকের পত্রিকাসাগরদাঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সুভাষ দেবনাথ বলেন, মধুমেলা উপলক্ষে সাগরদাঁড়িসহ চারপাশের গ্রামগুলোতে শুরু হয়েছে আত্মীয়-স্বজনদের আতিথেয়তা। মধুকবির ২০০তম জন্মবার্ষিকীতে মেলা সাত দিন দিন থেকে বাড়িয়ে নয় দিন করায় মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে।

কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তুহিন হোসেন বলেন, মেলায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা আসছেন। সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে এ মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যশোর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে নয় দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এ মধুমেলা আগামী ২৭ জানুয়ারি শেষ হবে।

উল্লেখ্য, ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি যশোরের কেশবপুর উপজেলার কপোতাক্ষ নদের তীরে সাগরদাঁড়ি গ্রামের বিখ্যাত দত্ত পরিবারে জন্ম নেন মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত ।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত