Ajker Patrika

নদীতে জেগে উঠছে বালুর দ্বীপ

হিরামন মণ্ডল সাগর, বটিয়াঘাটা
আপডেট : ২১ এপ্রিল ২০২২, ১৪: ১৮
নদীতে জেগে উঠছে বালুর দ্বীপ

খুলনার ডুমুরিয়া, বটিয়াঘাটা ও পাইকগাছা উপজেলার গা ঘেঁষে বয়ে চলা শত শত বছরের ভদ্রা নদী। একসময় শত শত বাড়িঘর, জমি-জায়গা, পুকুর, হাজার হাজার বিঘা জমি, লিজঘের, বিলীন হয়ে যায় এই ভদ্রা নদীতে। এতে অনেক পরিবার হয়েছে নিঃস্ব।

কালের পরিবর্তে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে সেই রাক্ষসী মায়াবী ভদ্রা নদী। একসময় ৩০০ থেকে ৪০০ হাত, এমনকি কোথাও কোথাও তারও বেশি গভীরতা ছিল এই নদীর। কোনো যানবাহন নদীতে তলিয়ে গেলে তা আর খুঁজে পাওয়া যেত না। একসময় এই নদী ছিল দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে যোগাযোগের একমাত্র কেন্দ্র। সে সময় এই নদীতে লঞ্চ, স্টিমারসহ বিভিন্ন মালবাহী, পণ্যবাহী ভারী নৌযান চলাচল করত। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই নদীতে ঢাকা থেকে বরিশাল, টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, পাটুরিয়া থেকে খুলনা, গোপালগঞ্জ, টুঙ্গিপাড়া, বাগেরহাট, যশোর, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা থেকে দক্ষিণ অঞ্চল সুন্দরবন কয়রা, বেদকাশি, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা, আশাশুনি, ঘড়িলাল, বটিয়াঘাটা, দাকোপ, পাইকগাছা, কালাবগী, সুতারখালী, লাউডোবসহ বিভিন্ন অঞ্চলের লঞ্চ স্টিমার, ইঞ্জিনচালিত ট্রলার ও নৌকায় চলাচল করত শত শত যাত্রী। এখন এসব নৌযান নদীতে দেখা যায় না। নাব্যতা হারিয়ে নদীর মাঝে উঠেছে বিশাল বালুর দ্বীপ। ফলে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে এই নদী। এতে খুলনার দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের বিভিন্ন বড় বড় ব্যবসা-বাণিজ্য, নিগম, পৌরসভা, উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার, বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান আজ হারিয়ে হওয়ার পথে। অচিরেই এই নদীর জীবন ফিরিয়ে না আনলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল হয়ে যাবে মরুভূমি। দেখা দেবে খাদ্যের সংকটসহ নানাবিদ সমস্যা ও দুর্ভিক্ষ। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বটিয়াঘাটা উপজেলার ভদ্রা নদীর বারোআড়িয়া চৌমুহনা ও গাওঘরা, শরাফপুর, কাঞ্চননগর, উত্তর শৈলমারী, বটিয়াঘাটা ব্রিজসংলগ্ন এলাকায় ভাটার সময় মানুষ হেঁটে নদী পার হচ্ছে। কারণ গাওঘরা-শরাফপূরে নদীতে হঠাৎ করে জেগে উঠেছে বালুর দ্বীপ। ফলে ভাটার সময় নৌযান চলাচল করতে পারছে না। 

এ বিষয়ে মাঝি অরুণ দাস বলেন, ‘গাওঘরা-শরাফপুর খেয়াঘাটে আমি দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে যাত্রী পারাপার করছি। আমার বয়সের অধিকাংশ জীবন পার করেছি যাত্রী পারাপার করে। এখন নদীতে ভাটার সময় নৌকা চালাতে পারছি না।’

ঘাট ইজারাদার মো. শরিফ জানান, ‘আমি প্রতিবছর খুলনা জেলা পরিষদ থেকে ১২ লাখ টাকা দিয়ে ঘাটটি ইজারা নেই। কিন্তু এবার ঘাটের যে অবস্থা, তাতে আমি অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হব। যে টাকা দিয়ে ঘাট ইজারা নিয়েছি, সেই টাকা এ বছর আর তোলো সম্ভব হবে না।’

বারোআড়িয়া-রায়পুর ঘাট ইজারাদার মো. ইবাদুল জানান, সরকার ঘাট থেকে প্রতিবছর ২-৩ লাখ টাকা ইজারা নিয়ে থাকে। নদীতে জোয়ার থাকলে মানুষ পারাপার হয়। ভাটা হলে কেউ কাদা মেখে নৌকায় উঠতে চায় না। ভাটার সময় বালুর চরে নৌকা আটকে যায়। 

বাজার কমিটির সভাপতি মিলন কান্তি মল্লিক জানান, এই বাজারে একসময় ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা শহরের ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে আসতেন। প্রতি শুক্রবার এই বাজারে সাপ্তাহিক হাট বসত। তখন হাজার হাজার লোকের সমাগম হতো। কিন্তু আজ আর এখানে সেরকম জনসমাগম হয় না। কারণ একটাই, যোগাযোগব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইঞ্জিনচালিত বাল্কহেড বোর্ডের খুলনার সাবেক সভাপতি সুশান্ত সরকার জানান, এখন আগের মতো নদীতে নৌকা চলাচল করতে পারে না। বালু পড়ে অধিকাংশ নদীনালা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে এই পেশার মানুষ এখন অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। 

হাট-বাজার উন্নয়ন কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মমিনুর রহমান বলেন, ‘নদী-নালা যেভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাতে অচিরেই নৌচলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। সরকার নদী খনন ও হাট-বাজারের উন্নয়নকাজ চলমান রেখেছে। আমি এই সমস্যাগুলো নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জাতীয় নির্বাচন: ভোট কমিটির নেতৃত্বে ডিসি–ইউএনওকে না রাখার চিন্তা

মাগুরার শিশুটি এখনো অচেতন, চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান

ঈদে পুলিশের সহযোগী ফোর্স হবে বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মী, পাবে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা

তিন নারী আমার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ: তারেক রহমান

গত দশ বছর ভিসা না পাওয়ার কারণে বাংলাদেশে আসতে পারিনি: মাইলাম

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত