স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার মৃত্যু: বাড়িঘর–ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ভাঙচুর, আগুন

ভেড়ামারা (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি 
প্রকাশ : ০৯ আগস্ট ২০২৩, ১৯: ০৬
আপডেট : ০৯ আগস্ট ২০২৩, ১৯: ২০

আহত পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের সঙ্গে হামলাকারীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশসহ অন্তত আটজন আহত হয়েছেন। 

থমথমে অবস্থা বিরাজ করায় সকাল থেকে শহরে দোকানপাটসহ সবকিছু বন্ধ রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। 

এর আগে আজ বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আহত পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক সঞ্জয় কুমার প্রামাণিক মারা যান। এ খবর শহরে ছড়িয়ে পড়লে সাড়ে ১০টার দিকে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা–কর্মীরা শহরের ডাকবাংলার সামনে জড়ো হন। 

এরপর তারা লাঠিসোঁটা দিয়ে হামলা মামলার প্রধান আসামি ও জাসদ–যুবজোটের নেতা মোস্তাফিজুর রহমান শোভনের শহরের কাচারিপাড়া কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর বাড়িতে ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয়। পাশের দোতলা বাড়িতেও ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। এরপর মোস্তাফিজুর রহমানের চাচা জানবারের রড সিমেন্টের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা এবং আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ভেড়ামারায় সেচ্ছাসেবক লীগ নেতার মৃত্যুর ঘটনায় শহরে তাণ্ডব।

গোডাউন মোড় এলাকায় আসামি মোস্তাফিজুর রহমানের ভগ্নিপতি রবিউল ইসলামের দোতলা বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এতে দোতলা ভবনের বিভিন্ন কক্ষে থাকা আসবাবপত্র পুড়ে ছাই হয়ে যায়। 

পরে শহরের বামনপাড়ায় মামলার দুই নম্বর আসামি ইয়ামিন হোসেনের বাড়ি ও চাচা সালাউদ্দীনের পৃথক দুটি দোতলা বাড়িতেও হামলা চালায়। ইয়ামিনের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর হামলাকারীরা শহরের ভেড়ামারা-দৌলতপুর সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ নিতে গেলে তাদের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের অন্তত সাতজন ও এক পুলিশ সদস্য আহত হন। তাদের ভেড়ামারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। 

হামলার শিকার রবিউল ইসলামের ভাই শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন যুবক অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে বাড়ির প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে ও ভয়াবহ ভাঙচুর চালায়। পরে দোতলায় রাখা টায়ারে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় ঘরের এসি বিস্ফোরণ ঘটে। বিভিন্ন কক্ষে থাকা আসবাবপত্র পুড়ে ছাই হয়ে যায়।’ 

উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর সোলাইমান মাস্টার বলেন, আমরা দলীয় নেতা কর্মীরা ডাকবাংলোর সামনে অবস্থান করছিলাম। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা তৃতীয় পক্ষের কেউ ঘটাতে পারে বলে জানান তিনি। ভেড়ামারায় সেচ্ছাসেবক লীগ নেতার মৃত্যুর ঘটনায় শহরে তাণ্ডব।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামিমুল ইসলাম ছানা বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছিলাম। আসামিরা ইতিপূর্বে অনেক অপকর্মের ঘটনা ঘটিয়েছে, অতীতের ক্ষতিগ্রস্ত বিক্ষুব্ধরা এ ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছে। আমাদের দলের কেউ এতে জড়িত নয়। তবে কিছু ছাত্রলীগের কর্মীরা আমাদের সমাবেশে আসার পথে পুলিশ হামলা করে। এতে ছয় থেকে সাতজন আহত হয়েছেন।’ ভেড়ামারায় সেচ্ছাসেবক লীগ নেতার মৃত্যুর ঘটনায় শহরে তাণ্ডব।

উপজেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘মোস্তাফিজুর রহমান শোভন তার ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতার ওপর হামলা হয়েছে। মোস্তাফিজুর রহমান শোভন যেহেতু যুবজোটের নেতা ছিলেন তাই এ ঘটনাই দল দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং আমরা শোভনকে দল থেকে অব্যাহতি দিয়েছি। কিন্তু এ ঘটনাকে পুঁজি করে আওয়ামী লীগের কিছু অতি উৎসাহী নেতা কর্মী এ ঘটনায় জাসদকে জড়ানোর চেষ্টা করছে।’ 

ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনার পর পরই দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হয়। শহরজুড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’ আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনায় পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন। 

উল্লেখ্য, আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে গত বুধবার (২ আগস্ট) রাতে উপজেলার গোডাউন মোড় এলাকায় ভেড়ামারা পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক সঞ্জয় কুমার প্রামাণিককে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে দুর্বৃত্তরা। এ সময় আরও দুই কর্মী আহত হন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত