‘১৮ বছরের কর্মজীবনে এত লাশের মিছিল আগে দেখিনি’

প্রতিনিধি, যশোর 
আপডেট : ১৩ জুলাই ২০২১, ১৩: ২৭
Thumbnail image

‘আমার সামনেই অর্ধশতাধিক রোগী মারা গেছেন। তাঁদের অনেককেই ছটফট করতে করতে মারা যেতে দেখেছি। কিন্তু আমাদের হাতে কিছুই করার ছিল না।’ এমনটিই বলছিলেন যশোর সদর হাসপাতালের করোনা ডেডিকেটেড ইউনিটের ওয়ার্ড ইনচার্জ হাসিয়া খাতুন।

হাসিয়া খাতুন অনেকটা আক্ষেপ নিয়েই বলছিলেন, ‘এর আগেও অনেক মৃত্যু দেখেছি। অনেক যন্ত্রণাকাতর মানুষকে সেবা দিয়েছি। কিন্তু ১৮ বছরের কর্মজীবনে এত লাশের সারি আর দেখিনি। যেন মৃত্যুর মিছিলে যোগ দিচ্ছেন একেকজন। চাকরিজীবনে এর আগে কখনো এতটা অসহায় বোধ করিনি।’

যশোর সদর হাসপাতালে করোনা ইউনিট চালুর শুরু থেকেই দুটি ওয়ার্ডের দায়িত্বে আছেন জ্যেষ্ঠ এই সেবিকা হাসিয়া খাতুন। গত রোববার পর্যন্ত ওই দুটি ওয়ার্ডে মোট ১০৭ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনায়। তিনি জানান, দায়িত্ব পালনকালে এক দিনে সর্বোচ্চ চারজনের মৃত্যু দেখেছেন তিনি। এ সময়ে নানা প্রতিকূলতারও সম্মুখীন হতে হয়েছে তাঁকে। উপেক্ষা করতে হয়েছে প্রভাবশালীদের চোখ রাঙানি। চাকরিচ্যুত হওয়ার হুমকিও পেয়েছেন তিনি।

হাসিয়া খাতুন বলেন, ৫ জুলাই হিরো গাজী নামের একজন করোনা রোগীকে রেড জোনে আনা হয়। এ সময় তাঁর অক্সিজেনের খুবই প্রয়োজন ছিল। কিন্তু প্রভাবশালী এক নেতার স্বজনেরা অক্সিজেন দিতে চাচ্ছিলেন না। অথচ সে সময় তাঁদের রোগীর অক্সিজেনের কোনো দরকার ছিল না। তারপরও তাঁরা জোর করে সেটি দখলে রাখেন। কিন্তু হিরো গাজীর অবস্থা বেগতিক হওয়ায় একপ্রকার যুদ্ধ করেই তাঁকে অক্সিজেন সরবরাহ করতে হয়েছে আমাকে। এ সময় প্রভাবশালী ওই ব্যক্তির স্বজনেরা আমাকে বিভিন্নভাবে শাসিয়ে যান। চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেওয়া হয় আমাকে। এমন ঘটনা নিত্য দিনের।’

এই ফ্রন্ট লাইনার জানান, দুটি ওয়ার্ডে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্টের ৭১টি পয়েন্ট আছে। অথচ বর্তমানে সেখানে শতাধিক রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এসব রোগীর সবারই অক্সিজেন প্রয়োজন। অতিরিক্ত যাঁরা আছেন, অনেক সময়ই তাঁদের জরুরি ভিত্তিতে অক্সিজেন সরবরাহ করার প্রয়োজন হয়। কিন্তু সরবরাহ কম থাকায় সেটি দেওয়া অনেক সময় সম্ভব হয় না। তখন রোগীদের ছটফটানি সহ্য করা যায় না। আবার অনেক সময় সিলিন্ডার রিফিল করতে পাঠানো হয়। তখনো কিছুটা সমস্যা দেখা দেয়। এ সময় রোগীদের কষ্ট দেখে খুবই খারাপ লাগে।

হাসিয়া খাতুন আরও বলেন, ‘গত বছরের জুন মাসে স্বামী-সন্তানসহ আমার পরিবারের ৯ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তখনো আমি টিকা নিইনি। কিন্তু পরিবারের আক্রান্ত সবাইকে সে সময় সেবা দিয়েছি। সেটিই ছিল আমার অনুপ্রেরণার মূল উৎস।’ তিনি বলেন, ‘দায়িত্ব পালনকালে আমার তিন সহকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তখন একটু খারাপ লাগলেও দমে যাইনি কেউ; বরং রোগীদের অসহায়ত্ব, কষ্ট আমাদের কাজে আরও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।’

জ্যেষ্ঠ এই সেবিকা বলেন, ‘আমরা করোনা যুদ্ধে জিততে চাই। তবে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। আমরা যেমন আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছি, তেমনি রোগী, বিশেষ করে তাঁদের স্বজনকে আরও ধৈর্যশীল হতে হবে। কারণ রোগীর প্রয়োজনটি আমরা বুঝি, চিকিৎসকেরা বোঝেন। তাঁদের পরামর্শ নিয়েই আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছি। আমরা কখনোই চাই না একজন রোগী মারা যাক; বরং আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকে, সুস্থ করে তাদের দ্রুত ছুটি দেওয়ার; যাতে অন্য আরেকজন মুমূর্ষু রোগী সেবা পান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শপথ নিয়েই বাইডেনের নীতি বাতিল ও ১০০ নির্বাহী আদেশের ঘোষণা ট্রাম্পের

শাহজালাল বিমানবন্দরে চাকরি নেননি মনোজ কুমার, বিজ্ঞাপনচিত্র নিয়ে বিভ্রান্তি

বিপিএলে আতশি কাচের নিচে চল্লিশের বেশি ক্রিকেটার

নতুন ভোটার যাচাই: জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব পাচ্ছেন শিক্ষকেরা

বিদ্যালয়ে একই পরিবারের ১৬ জনের চাকরি, তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত