প্রবেশ ফি নিয়ে বন কর্মকর্তার সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা, হরিণ শিকারের মামলায় কারাগারে যুবক

বাগেরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ২১: ২৬
আপডেট : ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ২১: ৪৪

বাগেরহাটের শরণখোলায় বাজার থেকে ডেকে নিয়ে এক যুবককে হরিণ শিকারের মামলায় আটকের অভিযোগ উঠেছে বন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় চায়ের দোকান থেকে ডেকে নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার তাঁর বিরুদ্ধে এ মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। 

পরিবার ও স্থানীয়দের অভিযোগ, সহকারী বন সংরক্ষকের (এসিএফ) কাছে অতিরিক্ত ফি আদায়ের কারণ জানতে চাওয়ায় তাঁকে ধরে নিয়ে রাতভর মারধর ও নির্যাতন করে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। 

তবে বন বিভাগ বলছে, প্রকৃত অপরাধী হওয়ায় ওই ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। 

আটক জুয়েল ঢাকার ডেমরা এলাকার বাসিন্দা। তিনি ঈদের এক দিন আগে উপজেলার খুড়িয়াখালী গ্রামে শ্বশুর বাদশা হাওলাদারের বাড়িতে স্ত্রীসহ বেড়াতে এসেছিলেন। 

পরিবার ও স্থানীয়রা বলছে, গতকাল সন্ধ্যায় জুয়েলকে শরণখোলা বাজারের একটি চায়ের দোকান থেকে ডেকে নিয়ে যান সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মাহাবুব হোসেন। আজ সকালে তাঁকে পূর্ব সুন্দরবনের বগি স্টেশনের চর খালি টহল ফাঁড়িসংলগ্ন অভয়ারণ্য থেকে হরিণ শিকারের জন্য ফাঁদ পাতার অভিযোগে আটক দেখায় বন বিভাগ। এ সময় তাঁর কাছ থেকে ১৫০ ফুট হরিণ শিকারের ফাঁদও উদ্ধার করা হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। 
 
বন বিভাগের দাবি, নিয়মিত টহল চলাকালে বগি স্টেশনের চর খালি টহল ফাঁড়ির নিকটবর্তী অভয়ারণ্য থেকে হরিণ ধরার ১৫০ ফুট ফাঁদসহ জুয়েল নামে এক শিকারিকে আটক করা হয়। আজ ভোররাতে তিনি আরও দুজন শিকারিকে সঙ্গে নিয়ে বনের অভ্যন্তরে ফাঁদ পেতেছিলেন। বনকর্মীরা তাঁদের আটক করার সময় দুজন পালিয়ে যান। পালিয়ে যাওয়া দুজনের নাম -রিচয় এখনো জানতে পারেননি তাঁরা। এ ঘটনায় আজ মামলা দায়ের করে জুয়েলকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। 

এ বিষয়ে জুয়েলের স্ত্রী সাথী বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঈদের আগের দিন আমি স্বামীকে নিয়ে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি বেড়াতে আসি। সে জঙ্গলে (সুন্দরবন) যাওয়ার জন্য পরিচিতদের সাথে কথা বলছিল। কিন্তু বনে প্রবেশের ফি অনেক বেশি হওয়ায়, সে এসিএফকে কয়েকবার ফোন দেয়। এতে তিনি বিরক্ত হয়ে বাজার থেকে আমার স্বামীকে ধরে নিয়ে যায়। একদিন পরে হরিণ শিকারের মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়ে দিয়েছে।’ 

সাথী বেগম আরও বলেন, ‘আমার স্বামী বাজারে যাওয়ার সময় টি-শার্ট ও ট্রাউজার পরে ছিল। কিন্তু তাকে আদালতে নেওয়ার সময় পুরোনো একটা লুঙ্গি পরিয়ে নিয়ে গেছে। আদালতে যখন দেখা হয়েছে, দেখি মুখে মারের দাগ। শুনেছি অনেক মেরেছে স্যাররা। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’ 

জুয়েলের শ্বশুর বাদশা হাওলাদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মেয়ে এবং জামাই ঢাকা থেকে ঈদের ছুটিতে বেড়াতে এসেছে। ফিরে যাওয়ার আগে জামাই সুন্দরবনে ঘুরতে যেতে চায়। কিন্তু রাজস্ব বেশি মনে হওয়ায় কী মনে করে যেন এসিএফ স্যারকে ফোন দেয়। ফোনে একটু কথা-কাটাকাটি হওয়ায় জামাইকে ধরে নিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে দিয়ে দিছে।’ 

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রিয়াদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বুধবার বিকেলে আমরা কয়েকজন বাজারে একটি চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। এ সময় এসিএফ স্যার দোকানের সামনে এসে তাকে (জুয়েল) ডেকে নিয়ে যায়। এরপর শুনি তাঁকে হরিণ শিকারের ফাঁদসহ আটক করা হয়েছে।’ 

এ বিষয়ে সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরান হোসেন রাজীব বলেন, ‘জুয়েলের শ্বশুর আমাকে জানান, তাঁর জামাতাকে বন বিভাগের লোকজন ধরে নিয়ে গেছে। আমি বিষয়টি শুনে রাতেই বন বিভাগের অফিসে যাই। সহকারী বন সংরক্ষক আমাদের জানায়, তাঁর সাথে মোবাইল ফোনে একাধিক বার অশোভন আচরণ করেছে সে। সব শুনে জুয়েলকে স্টেশনে দেখে আমরা চলে আসি।’ 

তবে মিথ্যা মামলার অভিযোগ অস্বীকার করে শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মাহাবুব হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চরখালী ক্যাম্পের বনরক্ষীরা এক শিকারিকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করেছে। আমাকে তারা বিষয়টি জানিয়েছে। এর বেশি কিছু আমার জানা নেই। অপরাধী ছাড়া কাউকে আটক করা হয় না। এখন অপরাধীরা তো অনেক কিছুই বলতে পারে।’ 
 
এ বিষয়ে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী নুরুল করীম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আটকের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে বা মারধর করা হয়েছে, এমন কোনো অভিযোগ আমার কাছে আসেনি।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত