খুলনা-মোংলা রেলপথে ৩১ অক্টোবর পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল এবং ৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে উদ্বোধন করা হবে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী। ইতিমধ্যে এই রেলপথ প্রকল্পের ৯৯ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। রেলপথ চালু হলে পণ্য পরিবহনে গতিশীলতা বাড়বে ও খরচ কমবে বলে মনে করছেন এই অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা। 

আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় ফুলতলা রেলস্টেশন থেকে খুলনা-মোংলা রেলওয়ে প্রকল্পের এলাইনমেন্ট (সেতু নম্বর-১০) পর্যন্ত এবং পরে বেলা ১টায় মোহাম্মদনগর রেলস্টেশন থেকে মোংলা রেলস্টেশন পর্যন্ত মোটর ট্রলিতে পরিদর্শন করেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। 

এ সময় রেলমন্ত্রী বলেন, ‘সমস্ত কাজ আমাদের হয়ে গেছে। শুধু স্লিপার, রেল আর ব্লাস্ট বসবে। এতে খুব বেশি হলে এক সপ্তাহ সময় লাগবে। আশা করছি, আগামী ২৫ বা ২৬ তারিখের মধ্যে কাজ শেষ হবে। তারপর ৩১ তারিখে ট্রায়াল রান করব, আবার আসব। পূর্ণাঙ্গ একটি ট্রেন নিয়ে মোংলা পর্যন্ত যাব ৩১ অক্টোবর। পরে প্রধানমন্ত্রী ৯ নভেম্বর এই রেলপথ প্রকল্প উদ্বোধন করবেন।’ 

রেলমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ট্যাম্পিংয়ের কাজ কিছু অংশে বাকি আছে। আমরা নিজেরাও দেখেছি। এর ভেতরেই এগুলো সম্পন্ন হবে। এরপরে যখন ৩১ তারিখে আমরা একসঙ্গে যাব, সেদিন আপনারা মন্তব্য করবেন। এ জায়গায় এই ত্রুটিগুলো রয়ে গেছে।’ 

খুলনা-মোংলা রেলপথের মাধ্যমে পর্যটনক্ষেত্র সুন্দরবনের সঙ্গে সমুদ্রবন্দর মোংলা যুক্ত হচ্ছে উল্লেখ করে নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘এর ফলে শুধু বাংলাদেশ নয় ভারত, নেপাল, ভুটানসহ অন্য প্রতিবেশী দেশগুলো এই বন্দরটি ব্যবহারের মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হবে।’ 

নির্মাণসংশ্লিষ্টরা জানান, আগামী ১০ দিনের মধ্যেই এই প্রকল্পের শতভাগ কাজ সম্পন্ন হবে। ২০১০ সালে খুলনা-মোংলা রেললাইন প্রকল্প অনুমোদনের পর বিভিন্ন জটিলতায় নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে। পাঁচ দফায় মেয়াদ বাড়ে প্রকল্পটির। অবশেষে এখন কাজ একেবারেই শেষ পর্যায়ে। রূপসা নদীর ওপর ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রেলসেতুর পুরোটাই দৃশ্যমান। 

খুলনার ফুলতলা থেকে লতার মোড় পর্যন্ত এবং অন্য প্রান্তে মোংলা থেকে মোস্তফার মোড় পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার রেলপথ বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। লতার মোড় থেকে মোস্তফার মোড় পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার রেলপথ বসানো বাকি আছে। ১১টি প্ল্যাটফর্মের মধ্যে নির্মাণকাজ হয়েছে সবগুলোর। এ ছাড়া শেষ হয়েছে ১০৭টি ছোট ব্রিজ ও ৯টি আন্ডারপাসের কাজ। এরই মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবেও চলেছে রেল। সব মিলয়ে এখন পর্যন্ত খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৯৯ শতাংশ। শেষ পর্যায়ে বিভিন্ন স্থানে রেলপথের ফিনিশিংয়ের কাজ, সিগন্যালিং ও টেলিকমিউনিকেশনের কাজ চলছে। 

এখন কাজ একেবারেই শেষ পর্যায়ে। এরই মধ্যে রূপসা নদীর ওপর সাতটি স্প্যানসহ ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলসেতুর পুরোটাই দৃশ্যমান। ২০১৭ সালের ১৫ অক্টোবর রূপসা রেলসেতুর পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন ২৫ জুন সপ্তম ও শেষ স্প্যানটি বসে রূপসা রেলসেতুতে। রেলসেতুর ভায়াডাক্টের ৮৫৬টি পাইল বসানো হয়েছে। মূল সেতুর পাইল ৭২টি, পাইল ক্যাপ ৮টি, বিয়ারিং ৩২টি সম্পন্ন হয়েছে। সেতুটির উপরিভাগ তৈরি করা হয়েছে স্টিলের গার্ডার এবং আরসিসি ডেকের সমন্বয়ে। এর মধ্যে রূপসা নদীর ওপর রেলসেতু নির্মাণ করে লার্সেন অ্যান্ড টার্বো এবং রেললাইন নির্মাণের কাজ করে ইরকন ইন্টারন্যাশনাল। 

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইরকন ইন্টারন্যাশনালের সহকারী ব্যবস্থাপক অসীম বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা ২৬ অক্টোবর ট্রায়াল লাইন করব। এইরকম আশাবাদী হয়েই কাজ করছি।’