২৫০ কোটির প্রকল্প: ৫ কিলো সড়ক, চার বছরে নির্মাণ আধা কিলো

ফয়সাল পারভেজ, মাগুরা
প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ১০: ০০

মহাসড়কের ৫ কিলোমিটার নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় আড়াই শ কোটি টাকা। চার বছরে এই সড়কের মাত্র আধা কিলোমিটার নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। সড়কে ছোট-বড় মিলিয়ে ৯টি সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করার কথা। এর মধ্যে মোটে তিনটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এদিকে সড়ক তৈরিতে যে পরিমাণ জমি অধিগ্রহণের কথা, এর ৩ ভাগের ১ ভাগও এখনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি।

বলা হচ্ছে মাগুরার ‘মাগুরা-শ্রীপুর মহাসড়ক বাঁক সরলীকরণসহ সম্প্রসারণ প্রকল্পের’ কথা। ২৪৭ কোটি টাকার এ প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের জুনে। এখন তা বাড়িয়ে ২০২৬ সাল করা হয়েছে। মাগুরা শহরে যাতে যানজট না হয়, এ লক্ষ্যে এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। সেই যানজট নিরসন তো দূরের কথা, সরকার পরিবর্তন, সময় বাড়ানো, প্রকল্পের কচ্ছপগতি—সব মিলিয়ে গোটা সড়কের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বেড়েছে জনসাধারণের দুর্ভোগ।

২০২০ সালের ১০ আগস্ট এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এরপরই জমিগ্রহণ নিয়ে শুরু হয় জটিলতা। সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কাজ শুরু হওয়ার চার বছরেও ৩০ শতাংশের বেশি জমি বুঝে পাওয়া যায়নি। উল্টো চলছে জমি নিয়ে ডজনখানেক মামলা।

এই প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যশোরের মেসার্স শামীম চাকলাদার। জানা গেছে, যশোরের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহীন চাকলাদারের স্বজনেরা এই প্রতিষ্ঠানের মালিক। জমি অধিগ্রহণ প্রসঙ্গে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক শাহাদত হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়ছে। এতে আমাদের ক্ষতি হয়ে গেছে। সরকার জমি এখনো সব বুঝিয়ে দেয়নি। এখন বিপদে পড়েছি।’ তবে সরকার পরিবর্তনে তাঁদের ওপর কোনো চাপ নেই বলে দাবি করেন তিনি।

মাগুরা শহরের পারনান্দুয়ালী বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে সদর উপজেলার নিজনান্দুয়ালী গ্রাম হয়ে শ্রীপুর উপজেলার আঠারখাদা পর্যন্ত ১৮ ফুট চওড়া দুই লেনের এ সড়ক। ঝিনাইদহ থেকে আসা গাড়ি মাগুরা শহরে প্রবেশ না করে যাতে ঢাকা মহাসড়কে উঠতে পারে, সে জন্য এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। ৫ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার এই সড়কে কালভার্ট ও ছোট সেতু রয়েছে ৮টি। আর গার্ডার সেতু রয়েছে একটি। গার্ডার সেতু ও ২টি কালভার্টের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। বাকিগুলোর কোনো অগ্রগতি নেই।

পারনান্দুয়ালী এলাকার বাসিন্দা আহাম্মদ হোসেন বলেন, বাঁক সরলীকরণ বলেন আর বাইপাস বলেন, এটার কোনো দরকার ছিল না। কারণ, শহরে চার লেন হয়েছে। সামান্য যানজট হলেও তা প্রকট নয়। প্রকল্প এনে জমি বিক্রির একটা ব্যবসা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিয়ে কমিশন-বাণিজ্য ছাড়া এ প্রকল্প কোনো কাজের নয়।

গত মঙ্গলবার পারনান্দুয়ালী এলাকার ওই সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের যে অংশে কাজ চলমান, সেই অংশের মাঝে বিদ্যুতের খুঁটি রয়েছে। ফলে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে স্থানীয়রা। সড়কটি পারনান্দুয়ালী এলাকায় নবগঙ্গা নদীর ওপর ২০০ মিটার গার্ডার সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। গত সপ্তাহে টানা বর্ষণে সেতুটির পারনান্দুয়ালী অংশের পিলারের নিচে মাটি ও বালু সরে গাঁথুনি বের হয়ে গেছে। ওই পিলার ধসে যেতে পারে বলে শঙ্কায় স্থানীয়রা।

বেহাল এই সড়কের দায় এখন আর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিতে চাইছে না বলে সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। তবে মাগুরা সড়ক বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী শিমুল হোসাইন বলেন, যারা জমি নিয়ে মামলা দিয়েছে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। প্রকল্পটির খরচ যা ধরা হয়েছে, তা-ই থাকবে।

জমি অধিগ্রহণের জটিলতা প্রসঙ্গে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘জমি অধিগ্রহণ হলে কাজ পুরোপুরি শেষ হবে। এখন কবে এসব মামলা নিষ্পত্তি হবে, সেটা বলা যাচ্ছে না। প্রকল্পের কাজ দুই বছর বাড়ানো হয়েছে। বেশির ভাগ কাজ এখনো বাকি রয়েছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত