যশোরের চৌগাছার জগদীশপুর ইউপির নৌকা প্রতীক পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তবিবর রহমান খান। অন্যদিকে আপন ভাতিজা ঘোড়া প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমেছেন। তিনিও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে না পেয়ে বিদ্রোহী হয়েছেন। শেষ পর্যন্ত ভাতিজার সমর্থনে নিজেই সরে দাঁড়ালেন তবিবর রহমান। ফলে আপাতত এ ইউনিয়নে নৌকার কোনো প্রার্থী নেই। 

নৌকার প্রার্থী তবিবর অভিমানে, পারিবারিক কোন্দলে নাকি তৃতীয় পক্ষের ষড়যন্ত্রে সরে গেলেন সে বিষয়টি এখন উপজেলার প্রধান আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী মাসুদ চৌধুরী বিষয়টিকে ষড়যন্ত্র বলে আখ্যায়িত করেছেন। 

আজ রোববার বেলা ১২টার দিকে চৌগাছার সাংবাদিকদের একটি সংগঠনের কার্যালয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী ভাতিজা আজাদ রহমান খানকে পাশে বসিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তবিবর রহমান। আজাদ রহমান উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। 
 
সংবাদ সম্মেলনে তবিবর রহমান বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে জগদীশপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসছি। এবারও আমার প্রতি আস্থা রেখে দলীয় সভানেত্রী আমাকে নৌকা প্রতীক দেন। তবে শারীরিক অসুস্থতার কারণে আগামী ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে নিজের নির্বাচনী কার্যক্রম থেকে নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছি। 

তিনি আরও বলেন, আমার শারীরিক অসুস্থতার কারণে নির্বাচনের আগেই আমাকে বিদেশে চিকিৎসা নিতে যেতে হবে। তবে প্রার্থিতা থেকে সরিয়ে নিলেও রাজনীতিতে সক্রিয় থাকছেন বলে এ প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন তবিবর রহমান। 

লিখিত বক্তব্যে তবিবর রহমান শারীরিক অসুস্থতার কথা বললেও প্রকৃতপক্ষে পরিবারের সম্প্রীতি বজায় রাখতে তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে একান্ত আলোচনায় তিনি বিষয়টি স্বীকার করেছেন। 

একাধিক দলীয় সূত্র জানিয়েছে, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় নৌকার একটি পথসভা থেকে কর্মীরা বিদ্রোহী প্রার্থী ও তবিবর খানের আপন ভাতিজা আজাদ রহমান খানের অফিসে হামলা চালায়। এ সময় আজাদ রহমান খান ও তাঁর দুই সমর্থক গুরুতর জখম হন। আজ সংবাদ সম্মেলনেও তিনি মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়ে চাচার পাশে বসে ছিলেন। তবিবর রহমান যুক্তরাষ্ট্রেরও নাগরিক। তাঁর স্ত্রী সন্তানেরা সেখানে থাকেন। 

শুক্রবার রাতে নৌকা সমর্থকদের হামলায় বিদ্রোহী প্রার্থী তাঁর দুই সমর্থক আহত হয়ে চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। থানায় মামলাও নেওয়া হয়নি। ক্ষোভে দুঃখে আজাদ রহমান একপর্যায়ে আত্মহত্যার হুমকি দেন। বিষয়টি নিয়ে পরিবারের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এরপর নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তবিবর রহমান। 

এর আগে বিষয়টি নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকে বসেন তবিবর রহমান। সর্বশেষ আজ সকাল ১০ টায়ও উপজেলা আওয়ামী লীগের বাসস্ট্যান্ডের কার্যালয়ে এ নিয়ে শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে আলোচনা হয়। এরপরই তিনি সংবাদ সম্মেলন করেন। 

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া তবিবর রহমান খান বলেন, নৌকার প্রার্থী হিসেবে কাউকে সমর্থন দিতে পারি না। শারীরিক কারণে নিজেকে নির্বাচনী কার্যক্রম থেকে সরিয়ে নিয়েছি। আগামী ৯ নভেম্বর আমেরিকা চলে যাব। বিদ্রোহী প্রার্থী ভাতিজাকে পাশে বসিয়ে সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে তিনি বলেন, পরিবারের ভুল বোঝাবুঝি থেকে ইউনিয়নের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ভুল বার্তা যাচ্ছিল। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফুলসারা ইউপি চেয়ারম্যান মেহেদী মাসুদ চৌধুরী বলেন, আমি এটা গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে মনে করছি। প্রিয় নেত্রী যাকে মনোনয়ন দিয়েছেন তিনি দীর্ঘদিন যাবত ওখানে চেয়ারম্যান। সেখানে বারবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয় লাভ করেছে। ওখানে আওয়ামী লীগ এত দৈন্যদশায় পড়েনি যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রত্যাহার করতে হবে। কয়েক দিন আগেই তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। নৌকা জনপ্রিয় প্রতীক, এখানে আত্মীয়তা করার কোনো সুযোগ নেই। আমরা তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেব, কীভাবে তিনি ভ্রাতুষ্পুত্রকে সমর্থন দেন! এটা আমরা কেন্দ্রে লিখিতভাবে জানাব। আশা করি দল বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করবে। 

এ দিকে আজ দুপুরের পর থেকেই অন্য একটি ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থী নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছেন বলে এলাকায় কানাঘুষা চলছে। ওই প্রার্থী দুপুরে বিষয়টি নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথাও বলেছেন বলে জানা গেছে। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (বিকেল সাড়ে ৩ টা) এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।