যশোরে নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতনে যুবদল নেতার মৃত্যুর অভিযোগ

­যশোর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০: ৩৬
আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০: ৫১
আতিক হাসান সরদার। ছবি: সংগৃহীত

যশোর সদরের ডাকাতিয়া গ্রামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্যাতনে আতিক হাসান সরদার (৩৯) নামে এক যুবদল নেতার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাড়ির আঙিনায় লিচুগাছে বেঁধে মারপিটের পর খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতেই তাঁর মৃত্যু হয়। ময়নাতদন্ত শেষে গত বুধবার সন্ধ্যায় মরদেহ বাড়িতে আনা হয়।

মাদক উদ্ধারের নামে হাসানকে নির্যাতন করা হয় বলে স্বজনদের অভিযোগ। তাঁর বিরুদ্ধে বেশ কয়েক বছর আগে একটি মাদকের মামলা ছিল।

তবে নির্যাতনের বিষয়টি স্বীকার না করলেও ঘটনাটি তদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন যশোর সেনাক্যাম্পের কর্মকর্তারা।

হাসানের স্বজনদের অভিযোগ, মঙ্গলবার দুপুরে ছাগলের জন্য কাঁঠালপাতা কিনতে মোটরসাইকেল চালিয়ে বাড়ি থেকে বের হন হাসান। এরপর থেকে তাঁর খোঁজ ছিল না। সন্ধ্যার পর সাদা পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মাইক্রোবাসে করে হাসানকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। এর পরপরই আসে সেনাবাহিনীর দুটি গাড়ি।

হাসানের বাবা আব্দুর রাজ্জাক সরদার বলেন, ‘ওরা (সেনাবাহিনী) পৌঁছানোর সাথে সাথে এলাকার বিদ্যুৎ চলে যায়। চার-পাঁচজন আমার ছেলেকে আমারই উঠোনের লিচুগাছে ঝোলায়। অন্যরা আমাদের দূরে সরিয়ে দেয়। তারপর শুরু করে মারধর। কাঠ দিয়ে পেটাতে থাকে। ছেলের আর্তনাদ সহ্য করতে না পেরে ওর মা (মনোয়ারা বেগম) ছুটে যায় ছেলের কাছে। তাকেও মেরে দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়, বউমা স্বামীকে বাঁচাতে গিয়ে মার খেয়ে ফিরে আসে। দীর্ঘক্ষণ মারপিটের পর হাসানকে নিয়ে যায় নূরপুর কাসেমের মোড়ে। সেখানেও নাকি মেরেছে। পরে আবার বাড়িতে এনে পেটায়। প্রায় মরা অবস্থায় বউমার সামনে ছেলেকে ফেলে রেখে যায়।’

হাসানের স্ত্রী শান্তা বেগম অভিযোগ করেন, ‘সেনাবাহিনী যখন গরু পিটানোর মতো পিটাচ্ছিল, তখন আমি ও আমার বড় ছেলে গিয়ে জড়ায়ে ধরেছিলাম। ওরা আমাদেরও মেরেছে। রাত সাড়ে ৮টার দিকে আমাকে ডেকে প্রায় মরা অবস্থায় হাসানকে ফেলে রেখে যাওয়ার সময় আমাকে দিয়ে জোর করে বলায় “আমার স্বামীকে সুস্থ অবস্থায় বুঝে পেয়েছি।” সেটি ভিডিও করে নেয়। ওরা আমাকেও বলে মাদক উদ্ধার না হলে তোকেও পেটাব, ছেলেদেরও পেটাব।’

কাশিমপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম উজ্জ্বল বলেন, আতিক হাসান যুবদলের কাশিমপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।

হাসানের মা মনোয়ারা বেগম শোকে কথা বলার শক্তি হারিয়েছেন। তাঁর হাতেও আঘাতের চিহ্ন।

নিহতের চাচাতো ভাই তারেক ও মুকুল জানান, গাড়িগুলো চলে গেলে হাসানকে দ্রুত যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দুই ঘণ্টা চিকিৎসা দেওয়ার পর ডাক্তাররা ঢাকা অথবা খুলনায় নিতে বলেন। দেরি না করে পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ভোররাত ৪টার দিকে মারা যান হাসান।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মোহসীনুল হক ফরাজী বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই।’

স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খুলনা মেডিকেল কলেজ মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে বুধবার সন্ধ্যায় হাসানের লাশ ডাকাতিয়া গ্রামে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। সেখানে বাদ এশা জানাজা হয়। জানাজায় কাশিমপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আইয়ুব হোসেন এবং হাসানের বাবা আব্দুর রাজ্জাক সরদার বক্তব্য রাখেন।

জানাজায় অংশ নেন সদর উপজেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক আঞ্জুরুল হক খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, সদর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক তানভীর রায়হান তুহিন, আবুল কালাম আজাদসহ স্থানীয় বাসিন্দারা। জানাজা শেষে আতিককে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

নির্যাতনে যুবদল নেতার মৃত্যুর বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এখনো কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।’

নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়ে যশোর সেনাক্যাম্পের কর্মকর্তা মেজর সঞ্চয়ন বড়ুয়া সাংবাদিকদের বলেন, এ ধরনের কোনো ঘটনা তাঁর জানা নেই। তবে নিরপরাধ কারও ওপর অন্যায়-অত্যাচার চালানো হলে অবশ্যই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইসরায়েলের ‘হৃৎপিণ্ড’ তেল আবিবে হুতিদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

সাগরে নিম্নচাপ, কত দিন বৃষ্টি হতে পারে জানাল আবহাওয়া দপ্তর

শেখ মুজিব ও জিয়াউর রহমান যার যার স্থানে শ্রেষ্ঠ: গয়েশ্বর

র‌্যাব বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি: নূর খান লিটন

হাসিনার আমলে রাশিয়ার সঙ্গে ১০০ কোটি ডলারের অস্ত্র চুক্তি, জড়াল টিউলিপের নামও

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত