Ajker Patrika

কুষ্টিয়ার পান থেকে বছরে দেশে আয় ১২ কোটি টাকা, রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও

দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি 
আপডেট : ২৮ নভেম্বর ২০২৩, ১৭: ৫৯
কুষ্টিয়ার পান থেকে বছরে দেশে আয় ১২ কোটি টাকা, রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও

স্বাদের দিক থেকে সুনাম রয়েছে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের পানের। কুষ্টিয়াসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি জেলায় পান সরবরাহ করা হয়। এখন এ পান দেশের সীমানা পেরিয়ে যাচ্ছে বিদেশেও। এতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি স্থানীয় বাজারের তুলনায় বেশি দামে পান বিক্রি করায় লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা।

তবে কৃষকেরা বলছেন, এ অঞ্চলে একটি পান গবেষণা কেন্দ্র তৈরি করা সম্ভব হলে পান চাষকে আরও সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি তৈরি হবে নতুন উদ্যোক্তা। এতে যেমন বাড়বে নতুন কর্মসংস্থান, বাড়বে রপ্তানি। অর্জন হবে বৈদেশিক মুদ্রা। প্রতিদিন দৌলতপুর থেকে ৩-৪ টন পান রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে, যা রপ্তানিকারকদের কাছে ৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করেন ফড়িয়ারা।

ভৌগোলিক ও উপকরণের সহজলভ্যতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে এ অঞ্চলের চাষিরা অর্থকরী ফসল হিসেবে পান চাষ করে আসছেন। অন্য ফসল চাষাবাদের পাশাপাশি হাজার খানেক কৃষক পান চাষে জড়িত। কয়েক বছর ধরে মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, জর্ডানসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে রপ্তানি হচ্ছে কুষ্টিয়ার পান।

তবে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, পান চাষকে আরও সমৃদ্ধ করতে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। পাশাপাশি সরকারিভাবে এসব পান বাইরে রপ্তানির উদ্যোগও হাতে নিয়েছে তারা, যা দ্রুত কার্যকর হবে, এর ফলে আরও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব বলে মনে করছেন।

দৌলতপুর উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য মতে, এই অঞ্চলে স্থানীয় বাজার থেকে বছরে পান বিক্রি করে আয় অন্তত ১২ কোটি টাকা। উপজেলাটিতে পান চাষ হয় প্রায় ৪৯০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নে। তবে বিদেশে পান রপ্তানির সঠিক হিসাব নেই কৃষি কার্যালয়ে।

দৌলতপুরের হোসেনাবাদ এলাকার এক বরজ থেকে পান সংগ্রহ করছেন চাষি।পান চাষকে কেন্দ্র করে এই উপজেলায় গড়ে উঠেছে দুটি পান বাজার ও হাট। সেখান থেকে চাষিদের কাছ থেকে ফড়িয়া বা আড়তদাররা পান কিনে দেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেন। মাঝে মাঝে অন্য অঞ্চলের ব্যবসায়ীরাও এসব বাজার থেকে পান কিনে নিয়ে যান। দেশে ৮০টি পান পাতাকে এক বিড়া বা এক পণ হিসেবে বিক্রি করা হয়। পানের এসব খেতকে স্থানীয়ভাবে বলা হয় ‘পান বরজ’। চাষিরা বরজ থেকে পান ভেঙে বাজারে বিক্রি করে থাকেন।

পান চাষ নিয়ে কথা হয় কয়েকজন প্রবীণ পানচাষির সঙ্গে। যাঁরা দুই যুগের বেশি সময় ধরে পান চাষাবাদে জড়িত। তাঁদের মধ্যে নজু ইসলাম নামের এক চাষি জানান, এখন বর্তমানে পানের বাজারদর ভালো। স্থানীয় বাজারে ১০০ থেকে ১২০ টাকা পণ বিক্রি হচ্ছে। আর যে পানটি রপ্তানির জন্য ফড়িয়ারা নিচ্ছেন সেটা ১৫০-১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তাঁর এই দীর্ঘ আবাদে পান বাইরে রপ্তানি শুরুর পর থেকে ভালো লাভের কথা জানান।

কালু নামের তারাগুনিয়া এলাকার আরেক চাষি জানান, আধুনিক পদ্ধতিতে পান চাষ করা গেলে রপ্তানিযোগ্য পানের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে। কুষ্টিয়ায় পান গবেষণা কেন্দ্র থাকলে আরও ভালো পরামর্শ নেওয়া সম্ভব হতো।

এদিকে রপ্তানির জন্য পান সংগ্রহকারকদের বলা হয় ফড়িয়া (ব্যবসায়ী)। আর সেই পানকে বলা হয় ‘সাপ্লাই পান’। পলাশ নামের এক ফড়িয়া জানান, রপ্তানিযোগ্য পান সরাসরি চাষিদের বরজ থেকে সংগ্রহ করা হয়। যেসব চাষি সাপ্লাই পান বিক্রি করতে ইচ্ছুক, তাঁরা ফড়িয়াদের সংবাদ দেন। ফড়িয়ারা খেতে গিয়ে নিজস্ব লোকজন দিয়ে পান সংগ্রহ করেন।

তিনি বলেন, রপ্তানির জন্য সব খেত থেকে পান সংগ্রহ করা হয় না। আকারে বড়, ওজনে ভালো, সুন্দর রং এবং রোগবালাইমুক্ত পান সংগ্রহ করা হয়। চলতি বাজারমূল্যের তুলনায় বেশি দামে এসব পান ক্রয় করা হয়।

এই ব্যবসায়ী আরও বলেন, খেতের সেরা পানগুলোই নেওয়া হয়। ফড়িয়ারা সারা দিন খেত থেকে পান সংগ্রহ করে ঢাকায় রপ্তানিকারকদের কাছে পৌঁছে দেন। দিন দিন রপ্তানি পানের চাহিদা বাড়ছে। দৌলতপুর থেকে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ টন পান সৌদি আরব, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানো হচ্ছে, যা ঢাকা এয়ারপোর্টে বিক্রি হয় ৫০০ টাকা কেজিতে।

দৌলতপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘দৌলতপুরে ৪৯০ হেক্টর জমিতে পান চাষ হচ্ছে। এতে স্থানীয় বাজার থেকে বছরে অন্তত ১২ কোটি টাকা আয় হয়। তবে বিদেশে রপ্তানির বিষয়টি আমাদের জানা নেই।’

কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. হায়াত মাহমুদ বলেন, জৈব পদ্ধতিতে নিরাপদ পান উৎপাদনে কৃষি অফিস পানচাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছে। কুষ্টিয়া থেকে প্রচুর পান বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে এখন। সরকারিভাবে পান বাইরে রপ্তানির উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে। দ্রুত কার্যকর হবে, ফলে আরও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে। এতে কৃষকেরাও বেশি লাভবান হবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আ. লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, তারাই সিদ্ধান্ত নেবে: বিবিসিকে প্রধান উপদেষ্টা

‘মবের হাত থেকে বাঁচাতে’ পলকের বাড়ি হয়ে গেল অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প

স্বাধীনতা পদক পাচ্ছেন এম এ জি ওসমানীসহ ৮ জন

কনের বাড়িতে প্রবেশের আগমুহূর্তে হৃদ্‌রোগে বরের মৃত্যু

বগুড়ায় মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় ছাদ থেকে পড়ে নার্সিং শিক্ষার্থীর মৃত্যু

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত