প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত প্রতিমাশিল্পীরা

মো. মাহবুব-উল-আহসান উল্লাস, খোকসা (কুষ্টিয়া), প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৯ আগস্ট ২০২১, ১৮: ৪৫

চলতি বছরের ১১ অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাচ্ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ‘দুর্গোৎসব’। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে কুষ্টিয়ার খোকসায় প্রতিমা বানাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা। 

এবার দেবী দুর্গার আগমন ঘটবে ঘোটকে করে এবং গমন করবেন দোলায় করে।

সরেজমিন ঘুরে প্রতিমা শিল্পীদের ব্যস্ততার চিত্র দেখা গেছে। প্রতিমা শিল্পীদের নিপুণ আঁচড়ে তৈরি হচ্ছে একেকটি প্রতিমা। অতি ভালোবাসায় তৈরি করা হচ্ছে দুর্গা, সরস্বতী, কার্তিক, লক্ষ্মী, গণেশ, অসুর ও শিবের মূর্তি। ইতিমধ্যে প্রায় প্রতিটি মণ্ডপে দেবীর মূর্তি নির্মাণের অবকাঠামো তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। 

জেলা পূজা উদ্‌যাপন কমিটির তথ্য মতে, এবারে খোকসা উপজেলায় ৬১টি মণ্ডপে পূজা হবে।

কথা হয় পৌর এলাকার কমলাপুরের প্রতিমাশিল্পী শ্রী সুকুমার ভাস্কর (৫৫) এর সঙ্গে। তিনি খোকসা কেন্দ্রীয় দুর্গা মন্দিরে প্রতিমা তৈরির করছে। তিনি বলেন, এ বছর ১৫ টি প্রতিমা তৈরির কাজ পেয়েছি। একটা প্রতিমা তৈরির জন্য পারিশ্রমিক হিসেবে ২৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা নিয়ে থাকি। আমরা চারজন একসঙ্গে কাজ করছি। একটি দুর্গা প্রতিমা তৈরি করতে সময় লাগে কমপক্ষে ১০ দিন। তবে একবারে একটি প্রতিমা তৈরি করা যায় না। কারণ কাদামাটি না শুকালে রং এর কাজ কারা যায় না।

তিনি আরও বলেন, প্রতিমা তৈরিতে এঁটেল ও বেলে মাটি ছাড়াও বাঁশ-খড়, ধানের কুঁড়া, দড়ি, লোহা, পাট, কাঠ, রং, বিভিন্ন রঙের সিট ও শাড়ি-কাপড়ের প্রয়োজন হয়।

আরেক প্রতিমাশিল্পী দেবাশীষ রায় বলেন, সারা বছর এই সময়টির জন্য অপেক্ষায় থাকি। বছরের অন্য সময় তেমন কাজ না। এই সময় ব্যস্ততা বেড়ে যায়। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়লেও সে অনুপাতে প্রতিমা তৈরির মজুরি আনুপাতিক হারে বাড়েনি।

প্রতিমাশিল্পী শ্রী প্রবীর বলেন, দুর্গা পূজার দেড় মাস আগে থেকে বিভিন্ন স্থানে প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। একটি বড় মূর্তি তৈরি করতে সময় লাগে সাত থেকে ১০ দিন। অন্যদিকে এক একটি ছোট মূর্তি তৈরি করতে সময় লাগে চার থেকে ছয় দিন। বর্তমানে মূর্তি তৈরির প্রাথমিক কাজ চলছে। এরপর রঙের কাজ করা হবে। সব কাজ শেষ হলে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই মণ্ডপের প্রতিমা বসানো হবে।

খোকসা কেন্দ্রীয় দুর্গা মন্দির কমিটির সভাপতি প্রদীপ বিশ্বাসের বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে শারদীয় দুর্গা পূজা। প্রতি বছরের মতো এবারও এ উৎসবটি জাঁকজমকভাবে উদ্‌যাপন করা হবে। তিনি আরও বলেন, করোনা সংক্রমণ নিয়ে আমরা শঙ্কিত। করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলে উৎসবের পরিধি ছোট করতে হবে।

জানিপুর ইউনিয়নের ইচলাট দুর্গা মন্দিরের সভাপতি কাজল ঘোষ বলেন, দুর্গাদেবীকে বরণ করে নিতে আমাদের মণ্ডপে প্রতিমা তৈরি ও সাজসজ্জার কাজ চলছে। তিনি আরও বলেন, গত বারের চেয়ে এ বছর প্রতিমা তৈরির খরচ বেশি হচ্ছে। 

কথা হয় কুষ্টিয়া জেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জয়দেব বিশ্বাসের সঙ্গে। তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে গতবারের ন্যায় এবারেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজা করতে হবে। তিনি আরও বলেন, নির্বিঘ্নে পূজা পালন করতে প্রশাসন থেকে আমরা সার্বিক সহযোগিতা পাচ্ছি।

খোকসা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মামুনুর রশিদ বলেন, দেবী বিসর্জন পর্যন্ত স্বেচ্ছাসেবী টিমসহ প্রশাসনিক নজরদারি সার্বক্ষণিক থাকবে। প্রতিটি পূজামণ্ডপের জন্য টহল পুলিশ এবং পূজামণ্ডপগুলোর জন্য মোবাইল টিম থাকবে। সার্বক্ষণিক টহল পুলিশ ব্যবস্থাও জোরদার করা হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত