২৬ ঘণ্টা পরেও গড়াই নদে নিখোঁজ ঢাবি শিক্ষার্থীর সন্ধান মেলেনি

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৩ জুন ২০২৩, ২১: ৪০
আপডেট : ১৩ জুন ২০২৩, ২২: ০৬

ঘুরতে এসে কুষ্টিয়ার গড়াই নদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী তানভীর আহমেদ নিখোঁজের ২৬ ঘণ্টা পরেও সন্ধান মেলেনি। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে ডুবুরি দলের সদস্যরা তাঁদের উদ্ধার অভিযান শেষ করেন। কাল আবার অভিযান চালানো হবে বলে জানা গেছে। 

গতকাল সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফার্মেসি বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ১৩ জন শিক্ষার্থী মেহেরপুর ও কুষ্টিয়ার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরতে আসেন। কুষ্টিয়ায় তাঁরা সার্কিট হাউসে খাওয়া-দাওয়া শেষে ছেঁউড়িয়া লালন আখড়াবাড়িতে যান। সেখান থেকে শিলাইদহে কুঠিবাড়ি যাওয়ার পথে কুমারখালী লাহিনীপাড়া এলাকায় গড়াই নদে রেলসেতুর নিচে তিন বন্ধু নামেন। এ সময় তারা সাঁতরে গড়াই নদ পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করেন। দুই বন্ধু তীরে উঠতে সক্ষম হলেও তানভীর নদে তলিয়ে যান। 

খবর পেয়ে কুমারখালী ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধার অভিযান শুরু করেন। পরে রাতে খুলনা থেকে আসা ডুবুরি দলের ছয় সদস্য উদ্ধারকাজ শুরু করেন। রাত ১০টা পর্যন্ত নিখোঁজের সন্ধান পাওয়া না যাওয়ায় ডুবুরিরা কাজ বন্ধ রাখেন। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে সারা দিন উদ্ধার অভিযান চালিয়ে সন্ধ্যার দিকে বন্ধ করেন। কাল বুধবার সকালে পুনরায় আবার উদ্ধারকাজ শুরু করবেন। 

নদ থেকে সাঁতরে কূলে ওঠা অপর দুই শিক্ষার্থী অতিরিক্ত পানি খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁদের কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে একজন খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের ছেলে। বাকি সহপাঠীরা এখন পর্যন্ত গড়াই নদের ঘটনাস্থলে অপেক্ষা করছেন। 

ডুবুরি দলের প্রধান সাইদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে সোমবার রাতে অভিযান শুরু করি। আজ ভোর থেকে পুনরায় উদ্ধার অভিযান চালাই। এ সময় ঘটনাস্থলের আশপাশের এলাকা তল্লাশি চালিয়েও নিখোঁজ শিক্ষার্থীর কোনো সন্ধান পাইনি।’ 

কুষ্টিয়া গড়াই নদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নিঁখোজতিনি বলেন, ‘ঘটনাস্থলের নদীর গভীরতা ৩০ থেকে ৩৫ ফুট আর নদে প্রচণ্ড স্রোত। মনে হচ্ছে কোনো গর্তে বালুর চাপা পড়েছে। আমরা কাল (বুধবার) সকাল থেকে পুনরায় উদ্ধারকাজ শুরু করব। উদ্ধারকাজে সহযোগিতা করছে কুমারখালী উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান।’ 

এদিকে আজ (মঙ্গলবার) বরগুনা থেকে কুষ্টিয়ায় আসেন নিখোঁজ শিক্ষার্থীর বাবা বরগুনা সরকারি কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আব্দুল মালেক, ছোট ভাই তাহমিন ও চিকিৎসক বোন-ভগ্নিপতিসহ আত্মীয়-স্বজনেরা। ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাঁরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। সকাল থেকেই গড়াই নদের পাড়ে সন্তানের খোঁজে অপেক্ষা করতে থাকেন তাঁরা। সারা দিন অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হয় না। মাঝে মাঝে ডুকরে ডুকরে কেঁদে ওঠেন স্বজনেরা। এ সময় এলাকাবাসীকে তাঁদের সান্ত্বনা দিতে দেখা যায়। 

 নিখোঁজ তানভীরের খালু বরগুনা চাখার শেরে বাংলা ফজলুল হক সরকারি কলেজের অধ্যাপক ফিরোজ আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা রাত ১০টার পরে খবর পেয়ে বরগুনা থেকে কুষ্টিয়ার উদ্দেশে রওনা হই। তানভীরের মা আফরোজা বেগম অসুস্থতার কারণে আসেনি। ছোট ভাই এবং চিকিৎসক বোন কিছুক্ষণ পরপর কাঁদছেন। এই দূরের পথে স্থানীয়রা তাঁদের সান্ত্বনা দিচ্ছেন। তানভীরদের বরগুনা শহরের ডিকেপি সড়কের বাসায় শোকর ছায়া নেমে এসেছে। এখন সবাই শুধু তানভীরের লাশের অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু বিধিবাম, এখন পর্যন্ত কোনো সন্ধান মেলেনি।’ 

তানভীরের বাবা অধ্যাপক আব্দুল মালেক বলেন, ‘আমার সন্তান এইভাবে নিখোঁজ হবে কখনো ভাবিনি। আল্লাহর কাছে আকুল মিনতি, ছেলের লাশ যেন নিয়ে যেতে পারি।’ তিনি কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান এবং উদ্ধারকাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। 

স্থানীয় কয়া ইউপি চেয়ারম্যান আলী হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঘটনার পর থেকেই স্থানীয়দের পাশাপাশি খুলনা থেকে আসা ফায়ার সার্ভিসের ৬ ডুবুরি কাজ করছেন। আমার ইউনিয়নের চৌকিদার দিয়ে রাতে পাহারা দেব। সর্বাত্মক উদ্ধারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। কুমারখালী উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক সাইদুল ইসলাম সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিচ্ছেন।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত