বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দেওয়া বিরিয়ানির প্যাকেটে পাউরুটি-কেক

দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি 
প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০২২, ২১: ৩৬
আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২২, ২২: ১৯

বিভিন্ন আয়োজনে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদ্‌যাপন করেছে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা প্রশাসন। তবে উপজেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান ও অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, ‘স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ার জন্য সকাল ৬টায় উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় থেকে আমরা উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে উপস্থিত হই। কিন্তু উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করা হয়েছে।’ 

মুক্তিযোদ্ধাদের দেওয়া প্যাকেটে দেখা যায় বিরিয়ানির পরিবর্তে তাঁদের একটি রুটি, একটি ড্রাই কেক, একটি করে কমলা, লাড্ডু, শিঙারা দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন তাঁরা।   

মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, ‘প্রচণ্ড রোদের মধ্যে আমাদের বসার জায়গা করা হয়। পর্যাপ্ত ফ্যান ও শামিয়ানার ব্যবস্থা ছিল না। মুক্তিযোদ্ধাদের সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আলোচনা সভায় বসিয়ে রাখা হয়। উপজেলা প্রশাসনের অব্যবস্থাপনার কারণে অনেক মুক্তিযোদ্ধা দাঁড়িয়ে ছিল। আর চেয়ারে বসে ছিল সাধারণ মানুষ। তা ছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিরিয়ানির প্যাকেটে দেওয়া হয় পাউরুটি ও ড্রাই কেক। ইউএনও নির্ধারিত সময় শুরুর আগেই স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়েছে। এ ছাড়া ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দু-গ্রুপের মধ্যে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। সুন্দরভাবে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজনে ব্যর্থ হয়েছে উপজেলা প্রশাসন।’

উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বিষয়টি তদন্তের দাবি জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা। একই সঙ্গে তাঁরা অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। 

বিরিয়ানির প্যাকেটে পাউরুটি-ড্রাই কেক বিস্কুট হাতে দাঁড়িয়ে আছেন কয়েক জন মুক্তিযোদ্ধা। বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল গনি ও আবুল হোসেন বলেন, ‘পূর্ব ঘোষিত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার জন্য ভোরবেলায় আমরা উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে উপস্থিত হই। সকালে শহীদ মিনারে ফুল দিই। তারপর উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করি। স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করা হয়েছে। তাঁদের সকাল থেকে রোদের মধ্যে বসিয়ে রাখা হয়েছে। প্রচণ্ড রোদ ও গরমের মধ্যেও পর্যাপ্ত ফ্যান এবং শামিয়ানার ব্যবস্থা ছিল না। চেয়ার না পেয়ে অনেক মুক্তিযোদ্ধা দাঁড়িয়ে ছিলেন। আর খাবার দেওয়া হয়েছে পাউরুটি ও বিস্কুট। উপজেলা প্রশাসন ব্যাপক দুর্নীতি করেছেন। সরকার থেকে বাজেট থাকলেও তা আমাদের পেছনে খরচ করা হয়নি। মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান ও দুর্নীতিতে জড়িতদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি করছি।’ 

বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আলী বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা ভোর থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত উপস্থিত ছিলেন। রোদে তাঁদের অনেক কষ্ট হয়েছে। আর বিরিয়ানির প্যাকেট দেওয়া হয়েছে বিস্কুট পাউরুটি ও বরই। আমি সে নাশতা খাইনি, অন্য একজনকে দিয়ে দিয়েছি।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘অন্যবার উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন বড় বড় বেসরকারি কলকারখানা, ফ্যাক্টরি, প্রতিষ্ঠান ও ইটভাটা থেকে চাঁদা তুলে বিরিয়ানি অথবা ভালো খাবার দেওয়া হতো মুক্তিযোদ্ধাদের। এবার আগের মতো ভালো খাবার দেওয়া হয়নি। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ইউএনও নিজেই। মৌখিকভাবে আমি ভারপ্রাপ্ত উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকি। আজকের অনুষ্ঠানে প্রায় ৬০০ মুক্তিযোদ্ধা উপস্থিত ছিলেন।’

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগ অস্বীকার করে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আব্দুল জব্বার বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগ সঠিক নয়, বাজেট কম। আমার শক্তি ও সামর্থ্য অনুযায়ী আয়োজন করেছি। কারও কাছে থেকে কোনো কন্ট্রিবিউশন নেওয়া হয়নি। সরকারিভাবে ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। সেই টাকা দিয়েই আয়োজন করা হয়েছে। আমি বাজেটের বাইরে যাব কীভাবে? তাঁরা কি চান যে, আমি চাঁদাবাজি করি?’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত