মাগুরায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জলাবদ্ধতায় ভোগান্তি শিক্ষার্থীদের

ফয়সাল পারভেজ, মাগুরা
প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০: ১৩

কয়েক ঘণ্টা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় মাগুরার গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি দুটোই রয়েছে। দীর্ঘদিনের এই সমস্যা এখন স্থায়ীভাবে ভোগান্তি হিসেবে  মেনে নিয়েছে শিক্ষার্থীরা। তবে এর সমাধানে কেউ এগিয়ে আসছে না। 

মাগুরার পুরাতন হাইস্কুলগুলোর মধ্যে সরকারি বালক বিদ্যালয় অন্যতম। সরকারি এই স্কুলটি জেলার সব থেকে মেধাবীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে  সুনাম রয়েছে। ১৯৫৪ সালের এই প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাস জুড়ে রয়েছে একাডেমিক ভবনসহ একটি বড় পুকুর এবং আমবাগান ও পশ্চিমদিকে খেলার মাঠ। 

প্রতি বর্ষার সময়ে মাগুরা–ঝিনাইদহ মহাসড়কের পাশে স্কুলটির চারদিকে পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। একমাত্র প্রতিষ্ঠানটির ভবন ও চলাচলের সড়ক ছাড়া অন্য সব জায়গাতে জলাবদ্ধতা দীর্ঘদিনের। বিষয়টি সবার সামনে হয়ে থাকলেও পানি নিষ্কাশনের কোনো  ব্যবস্থা যুগ যুগ ধরেই করা হয়নি। 

 স্কুলটির এসএসসি পরীক্ষার্থী সায়েম, রাতুল সহ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, স্কুলে পাঁচ বছর পড়াশোনা করেছি। এই পাঁচ বছরে বৃষ্টি হলেই দেখেছি সাইকেল রাখার জায়গায় হাঁটু পানি। এমনকি বিদ্যালয়ের চারপাশে থই থই পানি ছাড়া কিছু দেখা যায় না। অনেক সময় আমরা স্কুলের পেছন দিকের পথ দিয়ে আসতে গিয়ে পুকুর আর রাস্তা কোনটা  তাও ভুলে যেতাম। এর ফলে গোসলও করতে হয়েছে। 

সরকারি বালক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিয়াউল ইসলাম জানান, স্কুলের মাঠে হাঁটু পানি ও জমে। পূর্ব পাশে মাগুরা ফায়ার ব্রিগেড অফিস এলাকার সব পানি স্কুলের সীমানা দিয়ে প্রবেশ করে। এ ছাড়া পশ্চিম দিকে আদর্শ কলেজে জমা পানিও এই প্রতিষ্ঠানে মাঠে ঢুকে পড়ে। ফলে পুড়ো স্কুলের চারপাশে পানি জমে থাকে। এ নিয়ে কয়েকবার সংশ্লিষ্টদের অবগত করেছি। তারা বলেছেন, পানি নিষ্কাশনের পরিকল্পনা রয়েছে। 

একই সমস্যা পাশে থাকা মাগুরা আদর্শ কলেজের ক্যাম্পাস। কলেজটির পুরান ভাবনসহ মাঠ জুড়ে পানিতে ভরপুর। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ার কারণে মাঠটি বছরের ছয় মাসই কর্দমাক্ত থাকে। 

কলেজটির ডিগ্রিতে পড়ুয়া লাবণী নামে এক শিক্ষার্থী জানায় কলেজের মাঠে বসা কিংবা হাঁটার কোনো  সুযোগ হয় না। সারা বছরই দেখি কাদা আর পানিতে ভরা। কলেজজীবনে ক্যাম্পাস যে হয় তা আমি পাইনি শুধুমাত্র পানি জমার কারণে। ক্লাস রুম ছাড়া মাঠটি বেশির ভাগ সময় পরিত্যক্ত হতে দেখেছি। 

আদর্শ কলেজের সহাকারী অধ্যাপক (বাংলা) আফজাল হোসেন জানান, কলেজের মাঠে প্রচুর পানি জমে কাদায় পরিপূর্ণ হয়। ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় এই বৃষ্টির পানি কোথাও যেতে পারে না। তাই পানি শুকাতে অনেক দিন লাগে। এ জন্য শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময় ভোগান্তিতে পড়ে। তারা খেলাধুলা সহ মাঠটিতে চলাচল করতে  পারে না। এটা নিয়ে কয়েকবার আমরা সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছি। কিন্তু এরপর কার্যকর কিছু হয়নি। 

মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের একমাত্র মাঠটিও পানিতে ডুবে থাকে বছরের চার মাস। বর্ষার সময় মাগুরার উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ এই বিদ্যা পিঠটির ক্যাম্পাসের সড়ক বাদে মাঠও খালি জায়গাতে পানি জমে উল্লেখযোগ্য হারে। 

বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থী সুস্মিতা রিয়া বলেন, কলেজে করোনার পর এলাম। এসেই দেখি যে মাঠে আমরা বসে আড্ডা দিতাম সেখানে পানিতে ঘাস দেখা যাচ্ছে না। আবার সড়কগুলোর পাশে যে বসার জায়গা সেখানেও কাঁদা এবং পানি। শহরে এত ড্রেন অথচ এসব পানি বের হয় না। আমাদের অনেকে বৃষ্টি হলে এ জন্য কলেজে আসে না। কারণ পানিতে স্যান্ডেল জুতা ভিজে যায়।  

গুরুত্বপূর্ণ এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আরও জানা গেছে জলাবদ্ধতা দূর করতে যে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা দরকার তা হয়নি। বারবার সংশ্লিষ্টদের জানানো হলেও এখনো জলাবদ্ধতাই রয়েছে। তবু শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কথা মাথায় রেখে কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বালুর বস্তা দিয়ে পানি কমানোর ব্যবস্থাও করা হয় বলে বলে জানা গেছে। 

এ বিষয়ে জেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মাজেদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষা প্রকৌশল দপ্তরে আবেদন করতে পারেন। অবকাঠামোগত উন্নয়নে প্রকৌশল সেকশন কাজ করে। জেলা কমিটি রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে। যেসব প্রতিষ্ঠানে পানি জমে জলাবদ্ধতা হয় তারা নিজেরা উদ্যোগী হয়ে ওই কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করলে আশা করা যায় এ বিষয়ে কার্যকর সিদ্ধান্ত হতে পারে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত