শ্রদ্ধা-গান-কবিতায় রুদ্রকে স্মরণ

মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি 
প্রকাশ : ২১ জুন ২০২৪, ১৬: ৪৩

‘ভালো আছি ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো’—গানটি ভীষণ পছন্দ স্কুলছাত্রী সোনিয়া শারমীন তনুর। আর তাইতো সকালের আলো ফুটতেই প্রিয় কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জানাতে চলে এসেছে তাঁর (কবির) গ্রামের বাড়িতে। আজ শুক্রবার সকাল ৯টায় ফুলের তোড়া নিয়ে রুদ্র স্মৃতি সংসদ কার্যালয়ে আসে শিরিয়া বেগম মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যাপীঠের তনুর মতো শতাধিক শিক্ষার্থী। 

শ্রদ্ধা, গান, কবিতা আর আলোচনায় কবির গ্রামের বাড়ি মোংলার মিঠাখালীতে একুশে পদকপ্রাপ্ত তারুণ্যের কবির ৩৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে। সকাল ১০টায় রুদ্র স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে সংসদ চত্বর থেকে শোভাযাত্রা সহকারে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর রুদ্রের বাড়িতে দোয়া অনুষ্ঠিত হয় এবং মিষ্টি বিতরণ করা হয়। 

বেলা ১১টায় রুদ্রের বাড়িতে স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়। স্মরণ সভায় সভাপতিত্ব করেন রুদ্র স্মৃতি সংসদের সভাপতি ও রুদ্রের ছোট ভাই সুমেল সারাফাত। মোংলা উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আবু তাহের হাওলাদার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন। 

সভায় আরও আলোচনা করেন, মিঠাখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান উৎপল কুমার মন্ডল, রুদ্র স্মৃতি সংসদের উপদেষ্টা মন্ডলীর সভাপতি মাহামুদ হাসান ছোটমনি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের মোংলা শাখার সভাপতি নূর আলম, চালনা বন্দর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসেন, রামপাল সরকারি কলেজের প্রভাষক নজরুল ইসলাম প্রমুখ। 

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন রুদ্র স্মৃতি সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান টিটো। আলোচনা শেষে রুদ্রের গান পরিবেশন করেন রুদ্রের গড়া সংগঠন অন্তর বাজাও। 

সভায় বক্তারা বলেন, রুদ্র ছিলেন তারুণ্য ও সংগ্রামের দীপ্ত প্রতীক। সমাজের সকল বৈষম্য, সাম্প্রদায়িকতা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি কলম ধরেছেন। দেশ ও জাতির সংকটে রুদ্রের কবিতা হয়ে উঠেছে তারুণ্যের হাতিয়ার। বুদ্ধ বৃত্তিক আপোষকামিতায় দেশ যখন আকণ্ঠ নিমজ্জিত, সত্য যখন নির্বাসনে এই রকম অস্থির সময়ে রুদ্রকে আমাদের নিজেদের জন্য, দেশের জন্য খুব প্রয়োজন ছিল। যত দিন বাংলাদেশ থাকবে তত দিন রুদ্র তার কবিতা, গান নিয়ে বেঁচে থাকবেন। 

রুদ্র-মোংলার মিঠাখালীতে একুশে পদকপ্রাপ্ত তারুণ্যের কবির রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর মৃত্যুবার্ষিকী পালিতপ্রসঙ্গত, মাত্র ৩৫ বছর বয়সে রুদ্র রচনা করেন সাতটি কাব্যগ্রন্থ ‘উপদ্রুত উপকূল’ (১৯৭৯), ‘ফিরে চাই স্বর্ণগ্রাম’ (১৯৮১), ‘মানুষের মানচিত্র’ (১৯৮৪), ‘ছোবল’ (১৯৮৭), ‘গল্প’ (১৯৮৭) ‘দিয়েছিলে সকল আকাশ’ (১৯৮৮) এবং ‘মৌলিক মুখোশ’ (১৯৯০)। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তী পরিস্থিতিকে অবলম্বন করে তিনি ‘বিষ বিরিক্ষের বীজ’ নামে একটি কাব্যনাট্যও রচনা করেন। এ ছাড়া তিনি বেশ কিছু গল্প লিখেছেন। 

তার রচিত ও সুরারোপিত ‘ভালো আছি ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো’—গানটি দুই বাংলায় অসম্ভব জনপ্রিয়। ১৯৮৭ সালে তসলিমা নাসরীনের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর মোংলায় বসে তিনি এ গানটি রচনা ও সুরারোপ করেন। পরবর্তীতে এ গানটির জন্য তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি প্রদত্ত ১৯৯৭ সালের শ্রেষ্ঠ গীতিকারের (মরণোত্তর) সম্মাননা লাভ করেন। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯১ সালে মৃত্যু হয় এই গুণী কবির।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত