কানে শোনার ভুল, বেঁচে আছেন সিরাজুল

প্রতিনিধি, কয়রা (খুলনা) 
প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০২১, ১৮: ০৭

সিরাজুল ইসলাম সরদার। পেশায় মৌয়াল। গত ১ এপ্রিল বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে মোট আটজন গিয়েছিলেন সুন্দরবনের গহীনে মধু সংগ্রহ করতে। সব ঠিকঠাক ছিল। গভীর অরণ্যে সিরাজুলরা যখন মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সে সময় তার বাড়িতে রটে যায় মৃত্যু সংবাদ। ভুল তথ্যে জানাজানি হয়, বাঘের আক্রমণে মারা গেছেন সিরাজুল। পুরো মৃতদেহ মেলেনি, মিলেছে এক হাত আর এক পা। এ খবর প্রকাশিত হয় কয়েকটি গণমাধ্যমেও।

সিরাজুলের শেষ বিদায়ের জন্য শোকে পাথর পরিবার কাফনের কাপড় আর বরফও কিনে আনে। তবে বাকি ছিল কবর খোঁড়া।

এরই মধ্যে মধু সংগ্রহ করে বাড়িতে ফোন দেন সিরাজুল। নিজের মৃত্যু সংবাদ শুনে হয়ে যান হতচকিত। এর পর সশরীরে গত বুধবার ফিরে আসেন বাড়িতে। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) তাঁর কথা হয় আজকের পত্রিকার সঙ্গে।

কয়রার গোবরা গ্রামের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম সরদার বলেন, মধু সংগ্রহের জন্য বনের গভীরে যাওয়ার আগে আটজনের একজনকে নৌকায় রেখে যান তাঁরা। তিনি কিছুক্ষণ থাকার পর নৌকায় বসে তাঁর এলাকার একজনকে ফোন করেন। ফোনে নৌকায় রেখে যাওয়া ব্যক্তি অন্যজনকে বলেন, আমাকে রেখে ছোট ভাইকে নিয়ে গেছে। এটা আবার অপর প্রান্তে যিনি ছিলেন, তিনি ভুল শুনেছেন। ভেবেছেন ছোটভাইকে (সিরাজুল) বাঘে নিয়ে গেছে।

এর পর থেকে একে একে ছড়িয়ে পড়ে সিরাজুলের মৃত্যু সংবাদ। বাড়ির লোকের কাছেও আসে খবর। কান্নাকাটি শুরু হয়। কাফনের কাপড়, আর বরফও কিনে আনেন তারা। শুধু কবরটা খুঁড়তে বাকি ছিল।

মধু সংগ্রহের সময় ব্যস্ত থাকায় পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি উল্লেখ করে সিরাজুল বলেন, ‘সুন্দরবনের অনেক ভেতরে চলে গিয়েছিলাম আমরা। মধু সংগ্রহ শেষে বাড়িতে ফোন করি। ফোন করেই জানতে পারি সব ঘটনা। আমাদের খুঁজতে নাকি ফরেস্ট অফিসের তিনটি টিমও বনের ভেতরে গিয়েছিল। পরে আমরা দ্রুত বাড়িতে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিই।’

এ ব্যাপারে সিরাজুলের বড় মেয়ে সেলিনা খাতুন বলেন, গত রোববার তাঁরা খবর পান তাঁর বাবার নৌকায় বাঘের হামলা হয়েছে। খালেক নামে গ্রামের এক ব্যক্তি এ খবর ছড়ান। তিনি বলেন, আব্বার একটা পা ও হাত পাওয়া গেছে। তাঁর লাশ আনা হচ্ছে। এই শুনে বাড়িতে মানুষ আসতে শুরু করে। বরফ, কাফনের কাপড়-চোপড়সহ সব কিনে আনা হয় রাতারাতি মাটি দেওয়া হবে বলে। পরে বুধবার বাবা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করার পর সবার ভুল ভাঙে বলে জানান সেলিনা।

এদিকে গ্রামের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সিরাজুলের মরদেহ উদ্ধারের বিষয়ে পোস্ট দিয়েছিলেন। সিরাজুলের ফেরার পর সেগুলোও মুছে ফেলেন তাঁরা।এ বিষয়ে সিরাজুল বলেন, ‘অনেকেই আমার মৃত্যুর বিষয়টি ছড়িয়েছে। ভুল বোঝাবুঝির কারণে স্থানীয়রা দ্রুত খবরটি ছড়িয়ে দেয়। তারা সাংবাদিকদেরও ভুল তথ্য দিয়েছে। আমি সুস্থ আছি, ভালো আছি।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত