প্রেম করে বিয়ে, বনিবনা না হওয়ায় বিচ্ছেদ, ২ পরিবারের দ্বন্দ্ব বাড়ছেই

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
আপডেট : ২১ জুন ২০২৪, ১৬: ৪৫
Thumbnail image

প্রেম করে বিয়ে, বনিবনা না হওয়ায় কিছুদিন যেতেই বিচ্ছেদ। ২০০৯ সালের এই ঘটনাটি মেয়ের পরিবার স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেনি। তারা এ জন্য মেয়ের নামে ৮০ শতক জমি লিখে দেওয়ার দাবি তোলে। কিন্তু ছেলেপক্ষ জমি লিখে না দেওয়ায় মেয়েপক্ষ ২০০ শতক জমি দখলসহ ছেলের নামে নারী নির্যাতনের মামলা করে। পরে ছেলেপক্ষও পাল্টা মামলা করে। এদিকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের সহায়তায় এত দিন ধরে পরিত্যক্ত জমিতে চলতি মৌসুমে ধান চাষ করে ছেলেপক্ষ। কিন্তু মেয়েপক্ষের বাধার মুখে সেই ধান ঘরে তোলা সম্ভব হয়নি, খেতেই নষ্ট হয়।

ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার রামগোপালপুর ইউনিয়নের পাঁচাশি গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। খেতে ধান নষ্ট হওয়ায় সম্প্রতি থানায় অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা (সাময়িক বরখাস্ত) আল মামুন রাজিব।

থানায় করা অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে নাসরিনের সঙ্গে আল মামুন রাজিবের বিয়ে হয়। বিয়েতে দেনমোহর ধরা হয় ৪ লাখ টাকা। কিন্তু বনিবনা না হওয়ায় মাত্র দুই মাস পর তাঁদের বিচ্ছেদ ঘটে। তখন নাসরিনের বাবা সিদ্দিক খাঁ দেনমোহরের ১ লাখ টাকা নেওয়ার পর বাকি টাকার পরিবর্তে ৮০ শতক জমি দাবি করেন রাজিবের পরিবারের কাছে। যার বাজারমূল্য প্রায় ২০ লাখ টাকা। রাজিব জমি না দিয়ে দেনমোহরের টাকা দিতে চান। কিন্তু সিদ্দিক খাঁ রাজিবের ৮০ শতক জমি দখল করে নেন। পাশাপাশি আরও তিন একর জমি ও ফিশারিজ দখল করে নেন তিনি। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সুরাহা না হওয়ায় আদালতে মামলা করে রাজিবের পরিবার।

এদিকে নাসরিন তাঁর সাবেক স্বামী রাজিবের বিরুদ্ধে আদালতে নারী নির্যাতন মামলা করেন। মামলার পর চাকরি থেকে রাজিবকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই পরিবার ও গোত্রের মাঝেও দীর্ঘস্থায়ী শত্রুতা শুরু হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর তাঁর চাচাতো ভাই সাজ্জাদুল হক প্রতিপক্ষের লোকজনের হাতে খুন হন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, এ বছর স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় বোরো মৌসুমে মেয়েপক্ষের দখল করা ২০০ শতক জমিতে ধান চাষ করেছিলেন রাজিব। পাকা ধান কাটতে জমিতে গেলে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করে সিদ্দিক খাঁর লোকজন। দেন-দরবার করেও সেই ধান আর ঘরে তুলতে পারেননি তিনি। তাতে ২০০ শতক জমির ধান মাঠেই নষ্ট হয়।

পাঁচাশি গ্রামের বাসিন্দা মো. আবুল কালাম ওরফে কালা মিয়া (৬৫) বলেন, দীর্ঘদিন ধরে জমিগুলো অনাবাদি পড়ে আছে। এবার বোরো ধান লাগানোর পর সিদ্দিক খাঁ পাকা ধান কাটতে দেননি। সেই ধান মাঠেই নষ্ট হয়েছে।

রামগোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল আমিন জনি বলেন, ‘দুই পরিবারের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। আমরা চেষ্টা করেছিলাম যাতে ফসলের জমিটা পতিত না থাকে। কিন্তু সিদ্দিকের পক্ষ কোনো কিছুই মানতে রাজি নয়। তাদের কারণে ২০০ শতক জমির ধান মাঠেই নষ্ট হয়েছে।’

তবে আল মামুন রাজিবের সাবেক শ্বশুর সিদ্দিক খাঁ বলেন, ‘দীর্ঘদিন প্রেম করে আমার মেয়েকে বিয়ে করেছিল রাজিব। সে আমার মেয়ের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। আমার মেয়ের জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছে। ডিভোর্সের পর মেয়ের নামে ৮০ শতক জমি লিখে দেওয়ার কথা থাকলেও আজও তা দেয়নি। আমরা তার জমি দখল করিনি। আমাদের জমির ওপর দিয়ে যেতে নিষেধ করেছি। নিজের কৃতকর্মের জন্য সে এখন ভয়ে জমিতে যায় না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গৌরীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন চন্দ্র রায় আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুই পরিবারের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। সিদ্দিক সাহেব তাঁর জমির ওপর দিয়ে যেতে রাজিবদের নিষেধ করেছেন। বিকল্প পথ না থাকায় তারা ধান কাটতে পারেনি। পরে ঝড় ও বৃষ্টিতে তা নষ্ট হয়ে গেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত