ময়মনসিংহে ফিলিং স্টেশনে অগ্নিকাণ্ড

‘শরীরে আগুন নিয়ে দৌড়ে বাঁচার চেষ্টা করেছিলেন বাবা’

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ১৯: ০৩
ময়মনসিংহ নগরীর রহমতপুর বাইপাস মোড়ে আজহার ফিলিং স্টেশনে গত সোমবার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ছবি: আজকের পত্রিকা

ময়মনসিংহ নগরীর রহমতপুর বাইপাস মোড়ে আজহার ফিলিং স্টেশনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত চারজন নিহত হয়েছেন। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের হারিয়ে স্বজনদের আহাজারি থামছে না। এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচার দাবি করছেন তাঁরা। পাশাপাশি সরকারের কাছে আর্থিক সহযোগিতা চেয়েছেন।

আজ বুধবার দুপুর ১২টার দিকে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তোফাজ্জল হোসেন (৪৫) নামের আরও একজনের মৃত্যু হয়। তোফাজ্জল হোসেন রহমতপুর বাইপাস এলাকায় আজহার ফিলিং স্টেশনে ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রী হিসেবে কাজ করতেন। তিনি নগরের নিজকল্পা গ্রামের আবদুস সালামের ছেলে।

এর আগে ঘটনাস্থলে প্রাইভেটকার চালক হিমেল মুন্সি (২৯), হাসাপতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আবদুল কদ্দুস (৮৫) ও আবুল হোসেন (৪৫) মারা যান।

বর্তমানে দগ্ধ দুজন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং বাকি তিনজন আশঙ্কাজনক অবস্থায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

স্বজনদের আহাজারি

অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয়ে নিহত চারজনের পরিবারেই অস্বচ্ছল। তাঁদের আয়ে চলতো সংসারের খরচ। এখনো পর্যন্ত তারা কোনো সহযোগিতা পাননি।

এর মধ্যে একজন প্রাইভেটকার চালক নগরীর কিসমত গ্রামের জামাল উদ্দিনের ছেলে হিমেল মুন্সী। তিনি দুর্ঘটনার সময় প্রাইভেটকারটি নিরাপদ স্থানে নিতে গিয়ে প্রাইভেটকারের ভেতরেই তার দেহ দগ্ধ হয়ে আঙ্গার হয়ে যায়। ১০ বছর বয়সী একটি মেয়ে সন্তানসহ স্ত্রী, মা ও ছোট ভাইয়ের সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিল নিহত হিমেল।

নিহত হিমেলের মামা সাজ্জাদ হোসেন খান মিলন বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও গাফিলতির কারণে এই ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় দায়ীদের বিচার চাই, পাশাপাশি সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।’

নিহত আবদুল কদ্দুস বৃদ্ধ বয়সেও জীবিকার জন্য ভাঙ্গারি কুড়িয়ে ও মানুষের কাছ হাত পেতে চলতেন। ঘটনার সময় তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে হোটেলে ভাত খেয়ে ফিলিং স্টেশনের পাশের একটি দোকানে চা খাচ্ছিলেন। তখন হঠাৎ অগ্নিকাণ্ডে তাঁর শরীরের আগুন ধরে গেলে দৌড়ে শরীরের আগুন নিভিয়ে বাঁচার চেষ্টা করেন। পরে তার স্বজনরা গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।

নিহত কদ্দুসের মেয়ে ময়না আক্তার বলেন, ‘আমার বাবার শরীরে আগুন নিয়ে দৌড়ে বাঁচার চেষ্টা করেছেন। বাবার মৃত্যুর জন্য জড়িতদের বিচার চাই।’

নগরীর ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের হারগুজিরপাড় এলাকার বাসিন্দা দুর্ঘটনায় নিহত আবুল হোসেন। তিনি দুর্ঘটনাকবলিত ফিলিং স্টেশন সংলগ্ন মুদি দোকানি। ঘটনার তিনিও দগ্ধ হন।

নিহত আবুল হাসেমের ছোট ভাই মিয়া হোসেন বলেন, ‘আমার ভাই তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। তার মৃত্যুতে পুরো পরিবার ভেঙে পড়েছে। এখন কে তার পরিবারকে দেখবে। সবাই সান্ত্বনা দিতে আসলেও কেউ দায়িত্ব নিচ্ছে না। পরিবারটি যেন চলতে পারে সেই ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছি।’

উল্লেখ্য, গত সোমবার ঢাকা থেকে আনা একটি এলপিজি গ্যাসের ট্যাংক লড়ি থেকে গ্যাস নামানো হচ্ছিল। এর খানিকটা দূরেই একটি প্রাইভেটকারে গ্যাস দেওয়া হচ্ছিল। এ সময় গ্যাস লিকেজ থেকে হঠাৎ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে বেলা ২টা ৩০ মিনিটের দিকে ফায়ার সার্ভিসের ৭টি ইউনিটের দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে ৭টি গাড়ি অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় তিনটি দোকান।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত