বালতিতে ভরে খাদ্য বান্ধবের চাল বিতরণ, ওজনে কম হওয়ায় ডিলারকে শোকজ

নেত্রকোনা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১২ এপ্রিল ২০২৩, ২৩: ৩৮

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির চাল ডিজিটাল স্কেলে না মেপে বালতিতে ভরে উপকারভোগীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। এতে ওজনে কম দেওয়ার অভিযোগে রেজাউল ইসলাম সোহেল নামের এক ডিলারকে শোকজ করেছেন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা। 

খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীদের ১৫ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি চাল দেওয়ার কথা। তবে ডিলার অনেক দিন ধরে সঠিক ওজনের চাল দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ উপকারভোগীদের। ডিজিটাল স্কেল ব্যবহার না করে বালতি দিয়ে চাল মেপে দেওয়া হচ্ছে। এতে ৩০ কেজির জায়গায় চাল ওজনে হচ্ছে ২৭ কেজি। ফলে প্রত্যেকে ৩ কেজি করে চাল কম পাচ্ছেন বলে অভিযোগ উপকারভোগীদের। 

আজ বুধবার দুপুরে মোহনগঞ্জ উপজেলার বড়কাশিয়া-বিরামপুর ইউনিয়নের বিরামপুর বাজারে থাকা ডিলার রেজাউল ইসলাম সোহেলের বিতরণ কেন্দ্রে গিয়ে অনিয়মের সত্যতা পান উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. লুৎফুর রহমান। এ ঘটনায় রেজাউলকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলেছেন (শোকজ) তিনি। এই ঘটনার সময় দায়িত্বরত ট্যাগ অফিসার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান সজিবকেও চাল বিতরণের স্থলে পাওয়া যায়নি। 

খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা গেছে, উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে মোট ৪ হাজার ৯৫৬টি খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির কার্ড রয়েছে। এর মধ্যে বড়কাশিয়া-বিরামপুর ইউনিয়নে ৬৯৫টি কার্ড রয়েছে। এই ইউনিয়নে মো. সুজন মিয়া ও রেজাউল ইসলাম সোহেল ডিলারের হিসেবে রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে সুজন শিবির বাজারে চাল বিতরণ করেন। তাঁর কার্ড সংখ্যা ৩২১টি। আর রেজাউল বিরামপুর বাজারে চাল বিতরণ করেন। তাঁর কার্ড সংখ্যা ৩৭৪টি। প্রতি কার্ডধারী ১৫ টাকা কেজি ধরে ৩০ কেজি চাল কিনতে পারেন। 

বিরামপুর বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, চাল নিতে আসা পানুর গ্রামের উপকারভোগী তরিকুল ইসলাম ডিলারের কাছ থেকে চাল নেওয়ার পর পাশের একটি দোকানে ডিজিটাল স্কেলে মাপেন। দেখেন বস্তায় ২৭ কেজি ৪০০ গ্রাম চাল আছে। 

তরিকুল বলেন, ‘প্রতিবার ডিলার বালতি দিয়ে চাল মেপে দেন। সব সময় ওজনে চাল কম হয়। ডিলারের কাছে মাপার ডিজিটাল যন্ত্র রয়েছে কিন্তু ওই যন্ত্রে কাউকেই চাল মেপে দেন না। বালতি দিয়ে সবাইকে চাল মেপে দেন। যন্ত্রটা জাস্ট দেখানোর জন্য রাখা আছে।’ 

পাবই গ্রামের উপকারভোগী হালেমা ও রোকেয়া আক্তারের চাল ডিজিটাল স্কেলে মাপার পর ২৭ কেজি ৪০০ গ্রাম ওজন হয়। তাঁরাও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এমন আরও অনেক উপকারভোগীর চাল ডিজিটাল স্কেলে মাপার পর চাল ওজনে তিন কেজি করে কম পাওয়া গেছে। 

খবর পেয়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মো. লুৎফুর রহমান ও গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) মোতাকাব্বির খান প্রবাস বিরামপুর বাজারে ডিলারের বিতরণ কেন্দ্রে ছুটে যান। পরে তাঁরাও উপকারভোগীদের চাল ডিজিটাল যন্ত্রে মেপে ওজনে কম দেখতে পান। পরে এই ঘটনায় ডিলার রেজাউলকে শোকজ করা হয়। 

বেশির ভাগ উপকারভোগীর চাল ডিজিটাল স্কেলে মেপে দেওয়া হয় বলে দাবি করেন ডিলার রেজাউল ইসলাম সোহেল। তিনি বলেন, ‘বালতি দিয়ে মেপে দিলেও চাল কম হয় না। তাড়াতাড়ি দিতে গিয়ে হয়তো এমনটা হয়েছে।’ 

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মো. লুৎফুর রহমান বলেন, ‘চাল কম দেওয়ার বিষয়টি সরেজমিনে সত্যতা পেয়েছি। বালতি দিয়ে চাল মাপা অনিয়ম। উপকারভোগীদের প্রায় ৩ কেজি চাল কম দেওয়া হচ্ছিল। এ ঘটনায় ডিলারকে শোকজ করা হয়েছে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে তাঁকে জবাব দিতে বলা হয়েছে। এরপর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ছাব্বির আহমেদ আকুঞ্জি বলেন, ‘বালতি দিয়ে চাল মাপার ঘটনায় ডিলারকে শোকজ করা হয়েছে। সন্তোষজনক জবাব না পেলে তাঁর লাইসেন্স বাতিল করা হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত