সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান বেতন নেন ২ প্রতিষ্ঠান থেকে

ইসলামপুর (জামালপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৮: ৪৮
আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২১: ৩৮

জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মো. আব্দুল খালেক আখন্দ একই সঙ্গে পৌর শহরের শহীদ মেজর জেনারেল খালেদ মোশারফ বীর উত্তম গার্লস হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ। নিয়মবহির্ভূতভাবে তিনি দুই প্রতিষ্ঠান থেকেই বেতন-ভাতা নিয়েছেন।

আব্দুল খালেক আখন্দ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বেও রয়েছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বিনা বেতনে ছুটি নেওয়ার বিধান থাকলেও তিনি সেটা মানেননি। বরং একই সঙ্গে দুটি পদে দায়িত্ব পালনসহ সুবিধা নিয়েছেন। বিধিবহির্ভূত এমন কাজ করলেও কেউ তাঁর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেননি।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১০ মার্চ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আব্দুল খালেক আখন্দ। ওই বছরের মে মাস থেকে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের স্বাক্ষরে ভাইস চেয়ারম্যান পদে সম্মানী ভাতা গ্রহণ শুরু করেন তিনি।

পাশাপাশি তিনি অধ্যক্ষ পদে থাকলেও কলেজ শাখাটি এমপিও ভুক্ত না হওয়ায় প্রধান শিক্ষক পদের বেতন–ভাতা উত্তোলন করেন।

এ ছাড়া চলতি বছরের গত ২১ মে পুনরায় ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে তিনি ভাতা উত্তোলন করেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত ১৯ আগস্ট উপজেলা পরিষদ থেকে ভাইস চেয়ারম্যানদের স্ব-স্ব পদ থেকে অপসারণের প্রজ্ঞাপন জারি করে।

উপজেলা পরিষদের নেজারত শাখা সূত্রে জানা যায়, ভাইস চেয়ারম্যান থাকাকালীন ৬৩ মাসের বেতন ও সম্মানী ভাতার টাকা সরকারি কোষাগার থেকে উত্তোলন করেছেন আব্দুল খালেক আখন্দ। ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতি মাসে অন্যান্য সুবিধাসহ ২৭ হাজার টাকা এবং প্রধান শিক্ষকের বেতনসহ বিভিন্ন সুবিধা নিয়েছেন। সপ্তম গ্রেডে ২৯ হাজার টাকা বেতন শুরু হলেও তা বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৩৮ হাজার টাকায়।

তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান জামাল আব্দুন নাছের বাবুল বলেন, খালেক আখন্দ প্রথমবার ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পরপরই সমন্বয় কমিটির মাসিক সভায় তাঁকে বিধি মোতাবেক বেতন-ভাতা উত্তোলন করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি দুই জায়গা থেকেই প্রথম মেয়াদের পাঁচ বছর ও দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হয়ে বেতন-ভাতা উত্তোলন করেন।

অভিযুক্ত উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক আখন্দ বলেন, ‘যথাযথ বিধি অনুসরণ করেই বেতন-ভাতার টাকা নিয়েছি। কর্তৃপক্ষ বাধা না দেওয়ায় দুই জায়গায় থেকেই বেতন-ভাতার টাকা উত্তোলন করেছি। এতে দোষের কিছু নেই। তবে এখন কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত নেবে, সেটাই মানব।’

দোলন-২উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আব্দুল খালেক আখন্দ একসঙ্গে দুই জায়গা থেকে বেতন-ভাতা নিয়েছেন কি না আমার জানা নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’

তৎকালীন ইউএনও (বর্তমানে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের একান্ত সচিবের দায়িত্বে থাকা সিনিয়র সহকারী সচিব) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমার আমল থেকেই ওই ভাইস চেয়ারম্যানের ভাতা দেওয়া শুরু হলেও পরবর্তী সময়ে অন্য ইউএনওরাও দিয়েছেন। তিনি যদি নীতিমালা-বহির্ভূতভাবে বেতন-ভাতা নিয়ে থাকেন, তাহলে সেটি তাঁর ব্যক্তিগত দায়। বিষয়টি অডিটে ধরা পড়লে অবৈধভাবে নেওয়া সমুদয় টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত দিতে হবে।’

স্কুল অ্যান্ড কলেজটির গভর্নিং বডির সভাপতি এবং বর্তমান ইউএনও মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বিধিবহির্ভূতভাবে তাঁর দুটি পদের বেতন-ভাতা উত্তোলন করার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তিনি একজন শিক্ষক হয়েও নীতিনৈতিকতাবিরোধী কাজ করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে আইন অনুসারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

আইনজীবী মুহাম্মদ মানিক মিয়া বলেন, ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০২১ অনুযায়ী এমপিওভুক্ত কোনো শিক্ষক-কর্মচারী একই সঙ্গে একাধিক পদে বা চাকরিতে বা আর্থিক লাভজনক কোনো পদে থাকতে পারবেন না। এ ছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বিনা বেতনে ছুটি নেওয়ার বিধান রয়েছে। তদন্তে প্রমাণিত হলে উত্তোলন করা টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত দেওয়াসহ সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের এমপিও বাতিলসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা আইনে বলা আছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত