ভেজা শরীরে ৩ ঘণ্টা হাসপাতালের বারান্দায় ফেলে রাখা হয় নারী রোগীকে 

প্রতিনিধি, মোহনগঞ্জ ( নেত্রকোনা)
প্রকাশ : ২৭ জুলাই ২০২১, ০২: ১২
আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২১, ১৩: ৩১

মাত্রাতিরিক্ত গুল খেয়ে জ্ঞান হারানো এক নারীকে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন স্বজনেরা। চিকিৎসক হাসপাতালের বারান্দায় ফেলে ওই নারীর পাকস্থলী ধৌত করেন। পরে অজ্ঞান অবস্থায় সেখানেই তাঁকে ফেলে রাখা হয়। সোমবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বারান্দায় ভেজা শরীরে অজ্ঞান অবস্থায় ফেলে রাখা হয় ওই নারীকে।

হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ওই নারীর নাম নাসিমা আক্তার (৩২)। নাসিমা পৌরশহরের উত্তর দৌলতপুরের বাবুল মিয়ার স্ত্রী। তবে নাসিমা মাত্রাতিরিক্ত গুল খেয়ে অজ্ঞান হয়েছেন নাকি গুল খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছেন, এ বিষয়টি কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারেননি।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রামেলা আক্তার বলেন, ‘এভাবে জনসমক্ষে বারান্দায় ফেলে একজন নারীকে চিকিৎসা দেওয়া অমানবিক। পুরো শরীর ভেজা একটা নারীকে অসংখ্য মানুষ ভিড় করে দেখছে। একটা পশুকেও আরও যত্ন করে চিকিৎসা করা হয়। এ ধরনের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে একটা কক্ষ থাকা দরকার। এত বড় হাসপাতাল থাকতেও এ চিকিৎসায় একটা কক্ষ নেই। কর্তৃপক্ষের বিষয়টাতে নজর দেওয়া দরকার।’

রোগীর স্বজন মোজাহিদ মিয়া জানান, হাসপাতালের বারান্দায় নাসিমাকে ওয়াশ করার পর ফেলে রাখা হয়। বিষয়টা দেখে হতবাক হন তিনি। এ কেমন চিকিৎসা। হাসপাতাল প্রধান কারও কথা শোনেন না বলে অভিযোগ করেন তিনি।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার শাহজাহান সিরাজ বলেন, ‘ওই নারীকে অজ্ঞান অবস্থায় তাঁর স্বামী ও স্বজনেরা নিয়ে আসছিল। অতিরিক্ত গুল খেয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন বলে জেনেছি। হাসপাতালে এ ধরনের চিকিৎসার জন্য আলাদা কোনো ওয়াশরুম নেই। তাই বারান্দায় রেখে ওয়াশ করা হয়েছে। শঙ্কা কাটেনি বিধায় ময়মনসিংহ পাঠানো হয়েছে।’

মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট বিপ্লব হোসেন বলেন, ‘এ ধরনের চিকিৎসার জন্য আলাদা একটি রুম করার জন্য টিএইচও স্যারকে আমরা বলেছি।’

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) সুবির সরকার বলেন, এ ধরনের চিকিৎসায় আলাদা রুম দরকার। বারান্দায় এভাবে চিকিৎসা করা ঠিক নয়। তবে হাসপাতালের এক পাশে আলাদা একটি রুম করে দেওয়ার জন্য উপজেলা পরিষদে আবেদন জানানো হয়েছে।

নারীকে হাসপাতালের বারান্দায় ফেলে রাখার বিষয়টি শুনে ক্ষুব্ধ হন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুজ্জামান। তিনি বলেন, এটি অমানবিক। এমনটা কাম্য নয়। এত বড় হাসপাতালের কোনো একটা কক্ষে এ চিকিৎসা করা সম্ভব ছিল। হাসপাতালের নানা অনিয়ম নিয়ে টিএইচওর উদাসীনতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, করোনাকালীন সংকটে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিচ্ছেন টিএইচও। হাসপাতালের কোনো সমস্যা নিয়ে ঊর্ধ্বতনের সঙ্গে পরামর্শ না করেই নিজের খেয়াল খুশিমতো কাজ করছেন তিনি। এতে জনগণ কষ্ট পোহাচ্ছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হবে বলেও জানান তিনি।

এদিকে খবর পেয়ে ছুটে যান মোহনগঞ্জ থানার এসআই হুমায়ন কবির। তিনি বলেন, কী উদ্দেশ্যে ওই নারী গুল খেয়েছেন, সেটা জানা যায়নি। এ নিয়ে কোনো অভিযোগ থাকলে তাঁর সঙ্গে থাকা লোকজনকে জানাতে বলেছি। তবে দুপুর পর্যন্ত থানায় কেউ কোনো অভিযোগ করেনি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত