শেরপুরে বন্যায় ভেসে গেছে সাড়ে ৬ হাজার ঘরবাড়ি, মানবেতর দিন কাটছে বানভাসিদের

শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১০ অক্টোবর ২০২৪, ১৯: ৫৯
আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০২৪, ২০: ৫৭

টানা বৃষ্টি ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় শেরপুরের নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার অন্তত সাড়ে ছয় হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে হাজারো পরিবার। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাটির ঘরে থাকা পরিবারগুলো। প্রশাসন বলছে, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করাসহ টিন ও অর্থ বরাদ্দ চেয়ে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে দ্রুত সেগুলো বিতরণ করা হবে। 

জানা গেছে, ৪ অক্টোবর ভোর থেকে স্মরণকালের ভয়াবহ এক পাহাড়ি ঢল দেখেছে শেরপুরবাসী। স্থানীয়দের দাবি, প্রতিবছর বর্ষায় দুই–তিনবার ঢলে ভাসলেও এর আগে এমন তাণ্ডবলীলা কেউ দেখেনি আগে। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই ভারতের মেঘালয়ের পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢল চারটি নদীপাড়ের মানুষের সব লন্ডভন্ড করে দেয়। গত তিন দিন থেকে বৃষ্টি না থাকায় ও উজানের পানি কমতেই ভেসে উঠছে তাণ্ডবলীলার চিত্র। 

বন্যার পানিতে ভেঙে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত ঘর। ছবি: আজকের পত্রিকাএ বন্যায় জেলার ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার অন্তত সাড়ে ছয় হাজার মাটির কাঁচা, আধা পাকা ও পাকা ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ঢলের স্রোতে যা যা পড়েছে সব মিশিয়ে দিয়েছে মাটির সঙ্গে, নয়তো নিয়ে গেছে ভাসিয়ে। সব হারিয়ে দিশেহারা এসব পরিবারগুলো। পানি কমায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে নিজ ঘরে ফিরছেন মানুষ, ভেঙে যাওয়া ঘর থেকে প্রয়োজনীয় আসবাব উদ্ধারের চেষ্টা করছেন তাঁরা। 

ঝিনাইগাতী উপজেলার ব্রিজপাড় এলাকার বাসিন্দা রাশেদা বেগম বলেন, ‘ঢলে আমার তিনটা ঘর ভেঙে গেছে। আমি গরিব মানুষ। এখন কীভাবে এই ঘর ঠিক করমু, চিন্তা করে কূল পাইতাছি না।’ 

‘ঢলের দিন আমার ছোট মেয়েটাকে কোনো রকমে ঘাড়ে নিয়ে ঘরের খুঁটি ধইরা গলা সমান পানিতে সারা রাত দাঁড়ায়া ছিলাম। মনে করছিলাম নিজেও বাঁচমু না, আর মাইয়াটারেও বাঁচাতে পারমু না। চোখের সামনে ঘরের সব জিনিস ভাসায়া নিয়ে গেছে, কিচ্ছু বাঁচাইতে পারি নাই। অটো চালায়া সংসার চালাইতাম, সেইটাও নষ্ট হয়ে গেছে গা। এহন কী যে করমু বুঝতাছি না।’ ছলছলে চোখে কথাগুলো বলেন নালিতাবাড়ী উপজেলার খলিশাকুড়া গ্রামের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম। 

বন্যার পানিতে ভেঙে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত ঘর। ছবি: আজকের পত্রিকাএকই এলাকার বাসিন্দা নাকুগাঁও স্থলবন্দরের শ্রমিক চিন্তাহরণ বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ দিন আইনা দিন খাই। আমার তিনটা ঘর ঢলে ভাইঙ্গা নিয়ে গেছে গা। ঘরের ধান-চাল সবই ভাসায়া নিয়ে গেছে গা। এখন কি খায়া বাঁচমু? সরকার আমগরে সাহায্য না করলে আর কোনো উপায় নাই।’ 

আরেক বাসিন্দা জুলহাস বলেন, ‘ঢলের পানিতে হাঁস, মুরগিসহ ঘরের সব ভাসায়া নিয়ে গেছে গা। ছোট ছোট পুলাপান নিয়া কোনো মতে জীবন বাঁচাইছি।’ 

তাঁদের মতো এমন অসহায়ত্বের গল্প দুই উপজেলার হাজার হাজার মানুষের। দিন এনে দিন খাওয়া এসব দরিদ্র মানুষ তাঁদের পেটের ক্ষুধার চেয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই নিয়ে বেশি চিন্তিত। প্রশাসন বলছে, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে তাঁদের পুনর্বাসনে সহায়তা করা হবে। 

বন্যার পানিতে ভেঙে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত ঘর। ছবি: আজকের পত্রিকাঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আশরাফুল আলম রাসেল জানান, প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত তথ্যে এ উপজেলায় ৫০০ ঘর পুরোপুরি বিধ্বস্ত এবং এক হাজারের মতো ঘর আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তাদের সহায়তা করা হবে। 

নালিতাবাড়ীর ইউএনও মো. মাসুদ রানা বলেন, এ উপজেলায় ৪ হাজার ৬৮টি ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত ও প্রায় ১ হাজার ২০০ ঘর আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। তাদের পুনর্বাসনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। 

শেরপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) তরফদার মাহমুদুর রহমান জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ির তালিকা তৈরির কাজ চলছে। ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে টিন ও নগদ অর্থ বরাদ্দ চেয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ করা হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত