বাঁশঝাড় তো নয়, যেন বাদুড়ের অভয়াশ্রয়

প্রতিনিধি
আপডেট : ২১ মে ২০২১, ১৬: ২৮
Thumbnail image

হালুয়াঘাট (ময়মনসিংহ): ময়মনসিংহের হালুয়ঘাট উপজেলা সদর থেকে ২ কিলোমিটার পথ পেরোলেই জয়রামকুড়া মিলন বাজার। সেখান থেকে সন্ধাকুড়া এলাকা যেতে ডান পাশে প্রায় ১ একর জায়গাজুড়ে নির্জন বাশঁঝাড়। শুধু বিস্তৃতির কারণেই নয়, এই বাঁশঝাড় বিশেষত্ব পেয়েছে এতে বাসা বাঁধা শত শত বাদুড়ের কারণে। বাঁশের পাতার ফাঁকে ফাঁকে ঝুলে থাকতে দেখা যায় শত শত বাদুড়। দেখে মনে হয় এ যেন বাদুড়দের এক রাজ্য।

বাঁশঝাড়ে থাকা বাদুড়গুলোর ডাকে সারাক্ষণ কোলাহলপূর্ণ থাকে সংলগ্ন গ্রামটি। সারা বছর এখানে নিশ্চিন্তে বাস করে বাদুড়েরা। সন্ধ্যা হলেই দলে দলে ছুটে যায় তারা খাবারের সন্ধানে। ঘুরে বেড়ায় এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায়; চলে দূর-দূরান্তে।

ভোরের আলো ফোটার আগেই দল বেঁধে আবার বাঁশঝাড়ে ফিরতে শুরু করে এই স্তন্যপায়ী প্রাণী। আবারও কোলহলপূর্ণ হয়ে ওঠে কিচিমিচির শব্দে চারপাশ। জয়রামকুড়া গ্রামের এ বাঁশঝাড়ে দিনের বেলায় পাতার ফাঁকে বাঁশের কঞ্চিতে হুকের মতো পা দুটো আটকে নিস্তব্ধতায় ঝুলতে দেখা যায়। দেখে মনে হবে, রাতের শ্রমে ক্লান্ত হয়ে তারা যেন একটু প্রশান্তির ঘুম খুঁজছে। হালুয়াঘাটে নিশাচর এই প্রাণীর আবাসস্থলটি যে কাউকেই মুগ্ধ করবে।

বাঁশঝাড়ের মালিক বিজয় রিছিল বলেন, ৫০ বছরের আগে থেকেই এই বাঁশঝাড়ে বাস করছে বাদুড়গুলো। আনুমানিক ২ হাজারের মতো বাদুড় ছিল আগে। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে এই বাদুড়গুলো। কিন্তু ফল বাঁচাতে তৈরি বিশেষ জালের ফাঁদের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে অনেক বাদুড় মারা পড়ছে। এভাবে চললে তারা অস্তিত্বের সংকটে পড়তে পারে।

এলাকায় লিচু, আম, বড়ই ইত্যাদি মৌসুমী ফলের সময় বাদুড় বা অন্য পাখি থেকে ফল রক্ষা করতে গাছের চারপাশে বিশেষভাবে তৈরি করা জালের ফাঁদ পাতা হয়। এতে অন্য পাখির সঙ্গে প্রচুর বাদুড়ও ফাঁদে আটকা পড়ে মারা যায়। রয়েছে কীটনাশকের প্রভাবও। সব মিলিয়ে বাদুড় ও বিভিন্ন পাখির জন্য এগুলো ভয়াবহ সংকট তৈরি করেছে।

এ বিষয়ে ওই এলাকার বাসিন্দা কবি পরাগ রিছিল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাদুড় মানবকল্যাণকারী ও পরিবেশবান্ধব একটি প্রাণী। এরা মানুষের উপকারই করে থাকে। বিশেষ করে কলা ও অ্যাভোকাডোসহ প্রায় ৩০০ রকমের গাছের বীজ ছড়াতে সাহায্য করে এরা। আবার কীটপতঙ্গ খেয়ে ফসল রক্ষা করে। তাই বাদুড় রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব।’

‘হালুয়াঘাট দর্পণ’ প্রতিকার সম্পাদক মাহমুদ আবদুল্লাহ বলেন, ‘বাদুড় নিয়ে আমাদের মাঝে কল্পকাহিনী আর কুসংস্কারের শেষ নেই। মানুষের প্রতিকূলতার মধ্যেও জয়রামকুড়া গ্রামের বিজয় রিছিলের বাড়ির নিভৃত বাঁশঝাড়ে নির্ভয়ে আবাস গড়ে তুলেছে শত শত বাদুড়। এগুলো রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। এজন্য প্রশাসনের উদ্যোগ খুবই জরুরি।’

বিষয়টি সম্পর্কে এত দিন প্রশাসন অবহিত ছিল না। বিষয়টি স্বীকার করে হালুয়াঘাট উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা শহিদুল আলম বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা অবগত ছিলাম না। আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত