‘ভাতার ট্যাহা কপালে জোটল না, আল্লাহ বিচার করবে’

হালুয়াঘাট (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি 
Thumbnail image
চেয়ারে বসে আছে বৃদ্ধ আবদুর রশিদ। ছবি: আজকের পত্রিকা

৮০ বছরের বেশি বয়স আবদুর রশিদের। বার্ধক্যজনিত কারণে শারীরিক নানা জটিলতায় দিন পার করছেন তিনি। অভাবের সংসারে চিকিৎসার খরচ কিছুটা হলেও মেটাতে পারতেন সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে দেওয়া বয়স্ক ভাতার টাকা দিয়ে। মোবাইল ব্যাংকিং সেবা নগদের নম্বরে তিন মাস পরপর এই টাকা আসে। প্রতিবারের মতো এবারও টাকা এলে স্থানীয় একটি এজেন্ট পয়েন্টে তা তুলতে গিয়ে জানতে পারেন অ্যাকাউন্টে টাকা নেই। অন্য কেউ তুলে নিয়েছে।

আবদুর রশিদের বাড়ি ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার বিলডোরা ইউনিয়নের মোজাকান্দা এলাকায়। ক্ষুব্ধ আবদুর রশিদ এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘মোবাইলে ট্যাহা আইছে হুইন্না দোহানে গেছি, পরে হুনি আমার ট্যাহা হ্যাকার লোকেরা তুইল্লা নিছেগা। ভাই, আমি চলুম কী দিয়া। ট্যাহা মোবাইলে আইলেও আমার কপালে জোটল না, যারা এই কাম করল, আল্লাহ তাগো বিচার করব।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই ভোগান্তি শুধু আবদুর রশিদের একার নয়। প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়ে এই উপজেলার অনেকেই এভাবে ভাতার টাকা খোয়াচ্ছেন। প্রতারক চক্র নানা কৌশলে তাঁদের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এ নিয়ে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে অনেকে মৌখিক অভিযোগ করেছেন। তবে সমাজসেবা কার্যালয় থেকে বলা হচ্ছে, এ ব্যাপারে তাঁরা বিভিন্নভাবে ভাতাভোগীদের সচেতন করে যাচ্ছেন। আরও সচেতন থাকা জরুরি।

সমাজসেবা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ১৬ হাজার ৬৯৩ জন বয়স্ক, ৬ হাজার ৫৮৯ জন বিধবা ও ৭ হাজার ৬৭১ জনের নামে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড রয়েছে। কার্ডধারী প্রত্যেক বিধবার নামে বরাদ্দ প্রতি মাসে ৫৫০ টাকা, বয়স্কদের ৬০০ টাকা ও প্রতিবন্ধীদের ৮৫০ টাকা হিসাবে তিন মাস পরপর মোবাইল ব্যাংকিং (নগদ) অ্যাকাউন্ট নম্বরে দেওয়া হয়।

আমজাদ হোসেন নামের এক ভাতাভোগী বলেন, ‘আমার নম্বরে টাকা ঢুকলেই প্রতারক চক্র সরব হয়। তারা কল করে অফিসের পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সমস্যার কথা বলে পিন নম্বর নেওয়ার চেষ্টা করে। মোবাইল ব্যাংকিং বাদ দিয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা দিলে এই ভোগান্তিতে পড়তে হবে না।’

শাকুয়াই ইউনিয়নের নরুল ইসলাম নামে এক তরুণ বলেন, ‘এই প্রতারক চক্রে স্থানীয় দোকানদাররা জড়িত আছে বলে মনে হয়। ভাতাভোগীরা অধিকাংশ মোবাইল ফোনের বিষয়ে তেমন কিছু জানে না। এই সুযোগ নিচ্ছে চক্রটি।’

বিলডোরা গ্রামের বয়স্ক ভাতাভোগী তাহির উদ্দিন বলেন, ‘আমার মুঠোফোনে এক ব্যক্তি সমাজসেবা অফিসের লোক বলে পরিচয় দিয়ে ছয় সংখ্যার একটি মেসেজ (খুদে বার্তা) দেন। সেই মেসেজের সংখ্যাটি আমাকে বলতে বলেন। সেই সংখ্যা বলার পর মুঠোফোন থেকে টাকা নাই হয়ে গেছে।’

হালুয়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের বলেন, ‘এ ব্যাপারে থানায় কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সানিয়াত সন্ধানি বলেন, ‘শুধু হালুয়াঘাটে নয়, সারা দেশে একই অবস্থা হচ্ছে। ভাতার টাকা মোবাইলে আসতেই তারা (প্রতারক চক্র) সক্রিয় হয়ে ওঠে। আমরা তথ্যপ্রমাণের অভাবে প্রতারক চক্রকে চিহ্নিত করতে পারছি না। ফলে তাদের দৌরাত্ম্য বন্ধ হচ্ছে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত