বশেফমুবিপ্রবিতে র‍্যাগিংয়ের শিকার ছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি   

মেলান্দহ (জামালপুর) প্রতিনিধি
Thumbnail image

জামালপুরে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেফমুবিপ্রবি) গণিত বিভাগের চতুর্থ বর্ষের এক ছাত্রীকে র‍্যাগিং দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ফিশারিজ বিভাগের একই বর্ষের ছয় শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। র‍্যাগিংয়ের শিকার ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পরীক্ষা অংশগ্রহণ করতে পারেনি বলে দাবি করেছেন।

গত ২৭ আগস্ট সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যানটিনের পাশে মাঠে র‍্যাগিংয়ের শিকার হন মেয়েটি। পরের দিন ২৮ আগস্ট এ ঘটনায় ওই বিশ্ববিদ্যালয় বুলিং ও র‍্যাগিং প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক মৌসুমী আক্তারের নিকট লিখিত অভিযোগ করেন ওই ছাত্রী।

এ ঘটনার পর ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী গণমাধ্যমে কথা বলতে চাননি। র‍্যাগিংয়ের ঘটনায় বিচার না হওয়ায় আজ রোববার দুপুরে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে অভিযোগ করে এ ঘটনার বিচারের দাবি করেন তিনি।

অভিযুক্তরা শিক্ষার্থীরা হলেন ফিশারিজ বিভাগের ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষের চতুর্থ বর্ষের ফাতেমা বিনতে হোসাইন নিশি, মোস্তাফিজুর রহমান মুরাদ, তাহরিন তাসমিয়া সিদ্দিকি হৃদী, মোহাম্মদ খাইরুল ইসলাম, ফারহানুল হক প্রান্ত, হাবিবুর রহমান অন্তর।

এই ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, ‘আমি আমার ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়ে মাঝে মধ্যেই রুমে কান্না করতাম। আমার রুমে নিশি আপুও থাকেন। সে বিষয়টি অনেকভাবে জানতে চাইলে পরবর্তীতে আপুকে আমার ব্যক্তিগত বিষয় শেয়ার করি। এরপর থেকেই নিশি আপু আমার গোপনীয় বিষয়টাকে পুজি করে মানসিকভাবে নির্যাতন করতো ও ভয়-ভীতি দেখান।’

ওই ছাত্রী বলেন, গত ২৭ আগস্ট সন্ধ্যায় আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনের মাঠে ফিশারিজ বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী নিশি, হৃদি, খাইরুল, প্রান্ত, মুরাদ ও অন্তর মিলে হলের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে মানুষিক নির্যাতন ও অপমান করে। পরের দিন ২৮ তারিখ আমার পরীক্ষার কথা জেনেও তাঁরা আমার সঙ্গে এমন আচরণ করে। এই ঘটনায় আমি মানসিকভাবে ভেঙে পরি। পরে প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। পরের দিন সকালে আমাকে জামালপুর জেনারেল হাপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর থেকেই আমার শরীরের বামপাশ অবশ হয়ে পড়ে।

তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে আমার অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ায় চিকিৎসক আমাকে ১২টি ইঞ্জেকশন দেয় এবং অন্যন্য চিকিৎসাসেবা দেয়। হাসপাতালে ভর্তি থাকায় আমি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারিনি। পরবর্তীতে বুলিং ও র‍্যাগিং প্রতিরোধ কমিটি বরাবর অভিযোগ করি। এ ঘটনায় আমি অভিযোগ করার পর থেকেই আমাকে কয়েকজন শিক্ষার্থী ভয় দেখাচ্ছেন এবং সমঝোতার জন্য বারবার চাপ দিচ্ছে।

তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা কথা বলতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে নুরুন্নাহার বেগম হল প্রভোস্ট ও সহকারী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ফরহাদ আলী বলেন, ‘গণিত বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীর রুমের একটু সমস্যার কথা শুনেছি। বিষয়টি শুনে তাঁর রুমমেটদেরকে নিয়ে আমরা তিনজন হলের যে দায়িত্বে আছি তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে এবং তাদের রুমের আশেপাশে কয়েকজনকে নিয়ে সমঝোতা করে দিয়েছি। এখনো ওই জায়গায় রয়েছে সে। এই বিষয়ে মেয়েটি আমাদেরকে কোনো লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ জানায়নি। উপাচার্য মহোদয়ের নির্দেশ মোতাবেক আমরা সমঝোতা করে দিয়েছি।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বুলিং ও র‍্যাগিং প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক ও ফিশারিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মৌসুমী আক্তার বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা তদন্ত শুরু করেছি। এ নিয়ে আমরা তিন চারটি মিটিং করেছি। এর সঙ্গে অভিযুক্ত যারা তাঁদের সাক্ষাৎকার নিয়েছি এবং এ বিষয়ে জেনেছি। এই ঘটনা নিয়ে গভীরভাবে আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। এ সপ্তাহের মধ্যেই আমরা একটি তদন্ত প্রতিবেদন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত