সমবায় সমিতিতে জমা ৮০ লাখ টাকা, ফেরত পেতে শতাধিক সদস্যের আত্মহত্যার হুমকি

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২৪, ১৭: ৫৩
Thumbnail image

‘আমার টাকা আমাকে দেন, নইলে ভবনের ছাদ থেকে লাফ দিব’—এমন হুমকি দিয়ে জমাকৃত টাকা ফেরত পেয়েছেন ময়মনসিংহের গৌরীপুরে কিংশুক বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের একজন সদস্য। এরপর সমিতিটির শতাধিক সদস্য একই কায়দায় হুমকি দেওয়া শুরু করেছেন। 

জানা গেছে, গৌরীপুর কিংশুক সমবায় বিকাশ কেন্দ্র দীর্ঘদিন যাবত কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও ৪০০ গ্রাহকের প্রায় ৮০ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে সমিতির কাছে। গৌরীপুর মধ্যবাজারের কার্যালয়ে টাকা ফেরতের দাবিতে প্রতিদিন ধরনা দিচ্ছেন পাওনাদার সদস্যরা। 

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে গৌরীপুর কার্যালয়ের হিসাবরক্ষক খালেদা বেগম বলেন, ‘একজনের দুই লাখ টাকা পাওনা ছিল, সে আত্মহত্যার হুমকি দেওয়ায় তাঁর টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। এখন আরও অনেকেই আত্মহত্যার হুমকি দিচ্ছে।’ 

তিনি আরও জানান, এ সমিতির সদস্য সংখ্যা প্রায় ৪০০। তাঁদের সঞ্চিত অর্থের পরিমাণ প্রায় ৮০ লাখ টাকা। প্রায় এক বছর ধরে সদস্যরা জমাকৃত অর্থের টাকা ফেরত চাচ্ছেন। কিন্তু সমিতির ক্রয়কৃত জমি বিক্রি না হওয়ায় টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। 

প্রতিবাদ সমাবেশে ভুক্তভোগীরা বলেন, ‘হয় টাকা দাও, নইলে এ ভবনের ছাদে উঠে আত্মহত্যা করব।’ 

সমিতির সদস্য সূর্য্যাকোনা গ্রামের সন্তুষ ভৌমিকের পুত্র সুমন ভৌমিক বলেন, ‘সঞ্চয় করেছিলাম যাতে একসঙ্গে টাকাটা পাই। কিন্তু দুই বছর ধরে ২-৩ হাজার করে ২৫ হাজার টাকা ফেরত পেয়েছি। এখনো প্রায় ১০ হাজার টাকা পাওনা রয়েছে।’ 

হাতেম আলী সড়কের ব্যবসায়ী মো. তৌহিদুল আমিন তুহিন বলেন, ‘১৭ হাজার টাকা পাই, আজ-কাল করে ছয় মাস ধরে ঘুরাচ্ছে।’ 

জানা গেছে, সমিতির ৩২৯১৮ নম্বর সদস্য জিয়াউর রহমান হিরার প্রায় ৫০ হাজার টাকা, নাজমা আক্তারের ৩৮ হাজার টাকা, সোলায়মানের ১৭ হাজার ৫০০ টাকা এবং মিন্টু সরকারের ৩২ হাজার টাকা পাওনা। তাঁরা বলেন, ‘প্রতিদিন এলেই বলে দিব, ম্যানেজারকে পাওয়া যায় না। আমরা আমাদের সঞ্চয়ের টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে শংকিত।’ 

সমিতির আরেক সদস্য হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘ব্যাংকের মতো চুক্তিভিত্তিক সাধারণ পলিসি, শিক্ষা পলিসি, মুদরারাবা সাধারণ ও শিক্ষা পলিসি, মুদারাবা লাখোপতি পলিসি খাতে ৩ বছর মেয়াদি ১৩ শতাংশ লাভ দেখিয়ে গ্রাহকদের থেকে প্রায় কোটি টাকা নেওয়া হয়েছে।’ 

সমিতির মাঠকর্মী তাহমিনা আক্তার বলেন, ‘আমরা বারবার কেন্দ্রীয় সমিতিকে অবহিত করেছি। আমাদের চাহিদা ৪০ লাখ, টাকা পাঠায় মাত্র ৫০ হাজার, তাই গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’ 

এ প্রসঙ্গে কিংসুক কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি হাজি মো. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমি তো ১০ মাস আগেই এ সমিতি ছেড়ে দিয়েছি।’ এ ছাড়া সমিতির হিসাব শাখায় কর্মকর্তার তালিকায় থাকা নুরুন নাহার বলেন, ‘আমিও চাকরি ছেড়ে দিয়েছি।’ 

সংগঠনের সভাপতি নাজমুল আলম ভূঁইয়া জুয়েল ও সাধারণ সম্পাদক মো. শরীফ উজ্জামানের মোবাইল নম্বরে একাধিক বার কল দিলেও তাঁরা রিসিভ করেননি। 

কেন্দ্রীয় সমিতির প্রশাসক মুহাম্মদ সাহাবুদ্দিন মৃধা জানান, ‘আপনি যে সমস্যার কথা বলছেন, তা সমাধানের সুযোগ আমার নেই। ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করে জরুরি পদক্ষেপ নিতে বলব।’ 

গৌরীপুর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা ফাহমিদা আক্তার লিমা বলেন, ‘কিংসুক জাতীয় পর্যায়ের সমিতি। এটা নিয়ন্ত্রণ করে সমবায় অধিদপ্তর। আমাদের কিছু করার নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত