Ajker Patrika

‘এমন কোনো দিন নাই দুয়েকটা গাড়ি উইলডেয়া পড়ে না’

মহিউদ্দিন রানা, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ)
ঈশ্বরগঞ্জের সুটিয়া-আঠারবাড়ি খালবলা সড়কের বেহাল দশা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঈশ্বরগঞ্জের সুটিয়া-আঠারবাড়ি খালবলা সড়কের বেহাল দশা। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘এমন কোনো দিন নাই যে দুয়েকটা গাড়ি গর্তে উইলডেয়া পড়ে না। আর গাড়িত থাহা যাত্রীরা আহত অয় না। মাঝেমধ্যে দেহি লোকজন আইয়া ফডো তোলে, হুইজ করলে কয় হ্যারা সাম্বাদিক। ভাঙ্গা সরহের নিউজ করতে আইছে। কত সাম্বাদিক আইল-গেল, রাস্তা আর পইলা অইল না।’ এভাবেই আক্ষেপের স্বরে কথাগুলো বলছিলেন স্থানীয় অটোরিকশাচালক মো. নূর ইসলাম।

এ সময় অটোরিকশায় থাকা হোসনে আরা খাতুন নামের এক যাত্রী বলেন, ‘এই রাস্তা দিয়া ডেলিভারির রোগী হাসপাতাল লাগাত নেওয়ন লাগে না। এর আগেই ডেলিভারি অইয়া যায়। খালি এইডাই না তো, শরীরের হাড্ডিগুড্ডিও দলা অইয়া পড়ে। সরহারের তো এইতা চোখে পড়ত না।’

দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় উঠে গেছে সড়কের কার্পেটিং। সরে গেছে দুই পাশের মাটি ও ইটের খোয়া। এতে সড়কের বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। যে গর্তে প্রতিদিন দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে কোনো না কোনো যানবাহন। আহত হচ্ছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন বয়সী যাত্রী। এমন বেহাল দশা তৈরি হয়েছে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার জাটিয়া ইউনিয়নের সুটিয়া-আঠারবাড়ি খালবলা সড়কের।

উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সুটিয়া বাজার থেকে আঠারবাড়ি খালবলা বাজার পর্যন্ত সড়কটি সাড়ে ৪ কিলোমিটারের। ২০০২ সালে সড়কটি পাকা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, অন্তত দেড় দশক ধরে সড়কটির এমন বেহাল অবস্থা থাকলেও তা মেরামতের উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন যানচালক ও একাধিক এলাকাবাসীর দেওয়া তথ্যমতে যানবাহন উল্টে গত তিন মাসে ৪৭টি দুর্ঘটনা ঘটেছে।

ঈশ্বরগঞ্জের সুটিয়া-আঠারবাড়ি খালবলা সড়কের বেহাল দশা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঈশ্বরগঞ্জের সুটিয়া-আঠারবাড়ি খালবলা সড়কের বেহাল দশা। ছবি: আজকের পত্রিকা

সরেজমিনে দেখা গেছে, খানাখন্দে ভরা সড়ক দিয়ে যানবাহন চলে হেলেদুলে। এলাকাবাসী জানান, উপজেলার জাটিয়া ইউনিয়নের সুটিয়া, জাটিয়া, বিজয়পুর, ফতেপুর, রোকনপুর, কাহেদগ্রাম, সাগুলী, ভাসাটি, পাইস্কা, হীরাধর গ্রামের মানুষের চলাচলের একমাত্র সড়ক এটি। পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী সরিষা ইউনিয়নের মাছিমপুর, কুর্শিপাড়াসহ আরও বেশ কয়েকটি গ্রামের একমাত্র যোগাযোগের প্রধান সড়কও এটি।

পানান ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার নবম শ্রেণির জান্নাতুল ফেরদৌস নামের এক শিক্ষার্থী বলে, ‘আমরা যখন অটো দিয়ে এই রাস্তা দিয়ে আসা-যাওয়া করি, তখন খুব ভয় লাগে। মনে হয়, এই বুঝি গাড়ি উল্টে যাচ্ছে। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, রাস্তাটি যেন দ্রুত মেরামত করে দেয়।’

পানান ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষক মো. আতাহারুজ্জামান বলেন, ‘রাস্তাটি ভাঙতে ভাঙতে এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। কয়েক দিন আগে সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী অটো থেকে পড়ে প্রচণ্ড ব্যথা পেয়েছে।’

ঈশ্বরগঞ্জের সুটিয়া-আঠারবাড়ি খালবলা সড়কের বেহাল দশা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঈশ্বরগঞ্জের সুটিয়া-আঠারবাড়ি খালবলা সড়কের বেহাল দশা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান আকন্দ বলেন, ‘এই সড়ক দিয়ে বিভিন্ন স্কুল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করে। জনগুরুত্বপূর্ণ একটি সড়কের এত জঘন্য অবস্থা তৈরি হয়েছে, তবু যেন দেখার কেউ নেই।’

বর্তমান জাটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শামছুল হক ঝন্টু বলেন, ‘সড়কটির বেহাল অবস্থার কথা একাধিকবার মিটিংয়ে উত্থাপন করেছি। তবু বিষয়টি আমলে নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) আমিনুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সড়কটির বেহাল অবস্থার কথা অবগত আছি। এর মেরামতকাজের জন্য শিগগির প্রস্তাব পাঠানো হবে। বরাদ্দ পেলে দ্রুত সংস্কার করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত