‘যে ভাইকে বাবার স্নেহ দিয়ে বড় করেছি, সে-ই আমার সন্তানকে হত্যা করল!’

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
আপডেট : ০৪ জুন ২০২৪, ০৯: ২২
Thumbnail image

‘যে ভাইকে বাবার স্নেহ দিয়ে বড় করেছি; সে-ই আমার সন্তানকে হত্যা করল! সেটা বিশ্বাস করতে পারছি না। আমার সন্তানকে না মেরে আমাকে মারত, তার কী এমন দোষ ছিল? শুধু কী আমার ছেলেই তোর মেয়েকে ভালোবেসেছে, তোর মেয়ে কী ভালোবাসে নাই। যদি তোর মেয়ে ভালো না-ই বাসত, তাহলে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় গিয়ে কেন আমার ছেলেকে বিয়ে করল?’ এসব কথা বলতে বলতে গতকাল রোববার রাতে ময়মনসিংহের কোতোয়ালি মডেল থানার একটি কক্ষে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন নিহত ওমর ফারুক সৌরভের (২৪) বাবা ইউসুফ আলী। 

উল্লেখ্য, গতকাল রোববার সকালে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার মনতলা সেতুর নিচ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওমর ফারুক সৌরভের চার খণ্ড করা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। 

ওমর ফারুক সৌরভের বাবা ইউসুফ আলী আরও বলেন, ‘ইলিয়াস আলী আমার ছোট ভাই; আর ভাইদের মধ্যে তাকেই আমি বাবার স্নেহ দিয়ে বড় করেছি। আজকে আমার ছেলেকে চার খণ্ড করে হত্যা করে প্রতিদান দিয়েছে। চার-পাঁচ বছর ইশরাত জাহান ইভার সঙ্গে প্রেমের পর গত ১২ মে তাকে বিয়ে করে। সে বিয়ে আমিও মেনে নেইনি; কিন্তু ছেলে-মেয়েরা তো ভুল করতেই পারে। বিয়ের পরপরই ইলিয়াস বিভিন্ন সময়ে আমাদের কল করে হত্যার হুমকি দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘১৬ মে নিজের মেয়েকে কানাডায় পাঠিয়ে দিয়ে সৌরভকে হত্যার ছক আঁকে। এরই অংশ হিসেবে শনিবার সৌরভকে কৌশলে ডেকে ময়মনসিংহে আনে, সৌরভ আমাদের কিছু না বলেই চলে আসে। পরে ওই দিন রাতে শুনতে পাই সে ময়মনসিংহে। কিন্তু রাত ১১টার পর যখন সৌরভের মোবাইল বন্ধ পাই, তখন থেকেই চিন্তা হচ্ছিল। পরে সকালে শুনি মনতলা ব্রিজের নিচে সৌরভের চার খণ্ড মরদেহ পাওয়া গেছে; কেন আমার ছেলেটাকে এভাবে হত্যা করল?

শুধু ইউসুফ আলী নয়, একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ তাঁর মা মাহমুদা আক্তার পারুল যেন কোনো কথাই বলতে পারছিলেন না।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘ভালোবেসে চাচাতো বোনকে বিয়ে করাই আমার ছেলের কাল হয়েছে। কিন্তু আমরা কোনো দিন ভাবিনি যে আপন চাচা তার ভাতিজাকে এভাবে হত্যা করবে। এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়েই আমার সাজানো সংসার ছিল। ইলিয়াস সবকিছু এলোমেলো করে দিল।’

সৌরভের সহপাঠী রবি সান বলেন, ‘সৌরভ প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। আমাদের চলাফেরা সব সময় একসঙ্গে ছিল। সৌরভ-ইভার প্রেমের সম্পর্ক ছিল দীর্ঘদিনের; কয়েক দিন আগে তারা বিয়েও করে। শনিবার সে ময়মনসিংহ এসেছে আমি তা জানতাম, কিন্তু ওই দিন রাত ১১টার পর থেকে তার মোবাইল বন্ধ ছিল। পরে সকালে শুনি সৌরভকে হত্যা করা হয়েছে; আসলে এটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। আমরা হত্যাকারীর বিচার চাই।’

ওমর ফারুক সৌরভের সঙ্গে ইশরাত জাহান ইভাএদিকে এ ঘটনায় রোববার রাতে অজ্ঞাতদের আসামি করে কোতোয়ালি মডেল থানায় নিহতের বাবা ইউসুফ আলী একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। পারিবারিক বিরোধের কারণেই সৌরভ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।’

এদিকে নিহত ওমর ফারুক সৌরভের মরদেহ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে গা-ঢাকা দিয়েছে ইলিয়াস আলীর পুরো পরিবার।

ওমর ফারুক সৌরভের সঙ্গে ইশরাত জাহান ইভাইলিয়াস আলী ময়মনসিংহ নগরীর গোহাইলকান্দিতে একটি ভাড়া বাসায় পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। তিনি সেনবাহিনীর নায়েক পদে থাকা অবস্থায় অবসরে যান। আর ইউসুফ আলী পরিবার নিয়ে ঢাকায় বসবাস করেন। তিনি ডাক বিভাগে কর্মরত রয়েছেন। তাঁদের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার তারাটি এলাকায়।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত