ইসলামপুরে ২ মাসেও মজুরি পাননি ইজিপিপি প্রকল্পের শ্রমিকেরা

ইসলামপুর (জামালপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৭ মার্চ ২০২৩, ২২: ০২

জামালপুরের ইসলামপুরে দরিদ্রদের জন্য সরকারের গৃহীত ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) অনুকূলে কর্মসৃজন কর্মসূচির (ইজিপিপি) ৪০ দিনের প্রথম পর্যায়ের প্রকল্প কাজ শেষ হওয়ার প্রায় দুই মাস পরও মজুরি পাননি শ্রমিকেরা। এতে প্রকল্পের শ্রমিকেরা অর্থাভাবে পরিবার-পরিজন নিয়ে রমজান মাসে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। 

কাজ শেষের এত দিন পরও মজুরি না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা। তবে, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) দাবি, শ্রমিকদের মজুরি বিল যথা সময়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।’ 

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ইজিপিপি প্রকল্পে দরিদ্র শ্রমিকদের মাথাপিছু ৪০০ টাকা দৈনিক মজুরিতে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কারে মাটি কাটার কাজ করানো হয়। ৪০ কর্মদিবসের প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে গত ২৬ নভেম্বর একযোগে উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ৫৫টি প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়। এতে ২ হাজার ৮১৪ জন সুবিধাভোগী শ্রমিকের বিপরীতে ৪ কোটি ৫৩ লাখ ২৪ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। 

প্রকল্প তত্ত্বাবধান করেন ইউপি চেয়ারম্যানগণ। প্রকল্পের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন ইউপির সদস্যরা। গত ২৮ জানুয়ারি প্রতিটি প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দের অর্ধেক টাকা উত্তোলন করেছে প্রকল্পের সভাপতিরা। গত ৩১ জানুয়ারি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু অদ্যাবধি এসব শ্রমিকের ২০ দিনের মজুরি পরিশোধ করা হয়নি। 

আজ সোমবার উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের প্রকল্পে কাজ করা শ্রমিকেরা জানান, তারা সপ্তাহে পাঁচ দিন কাজ করেছেন। প্রতি বৃহস্পতিবার এক সপ্তাহের কাজের বিল একসঙ্গে দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি। পুরো ৪০ দিন কাজ শেষ হলে মাত্র ২০ দিনের কাজের বিল দেওয়া হয়েছে। এরপর দুই মাস গত গেলেও বাকি বিল দেওয়া হয়নি। মাটি কাটার মতো কষ্টকর কাজ করেও বিল না পাওয়াটা খুবই দুঃখজনক বলে জানান শ্রমিকেরা। 

গাইবান্ধা ইউনিয়নের নতুন আগুনের চর গ্রামের শ্রমিক ফেক্কু মিয়া জানান, ‘আমরা দিন এনে দিন খাই। সপ্তাহে পাঁচ দিন হিসাবে ৪০ দিনের কাজে প্রায় দুই মাস লেগেছে। এ সময়ে অন্য কোনো কাজও করতে পারিনি। ধার করে, দোকানে বাকি রেখে খাওয়া-পরা চালিয়েছি। এখন সবাই টাকা চাচ্ছে। কিন্তু বিল না পেয়ে তাদের টাকা দিতে না পেরে খুব বিপদে আছি।’ 

সাপধরী ইউনিয়নের মণ্ডলপাড়া গ্রামের শ্রমিক রবিজল বলেন, ‘রোজা থেকে কাজ করতে পারি না। ৪০ দিনের কাজের বিলটা পেলে একটু শান্তিতে রোজা করতে পারতাম। কিন্তু বিল না পাওয়ায় রোজা থেকেও অন্যের জমিতে শ্রম দিতে হচ্ছে। এ কষ্টের কথা কার কাছে বলব।’

বেলগাছা ইউনিয়নের মুন্নিয়াচর গ্রামের মলিতন বেওয়া বলেন, ‘সন্তানদের কথা ভেবে কর্মসৃজন কর্মসূচির প্রকল্পে কাজ করেছি। কাজ শেষ হয়েছে দুই মাস আগে। কিন্তু এখনো অর্ধেক টাকা পাইনি। যে দোকান থেকে বাকি নিয়েছি, টাকা দিতে না পারায় তারাও আর চাল-ডাল দিচ্ছে না। ছেলেমেয়েরা প্রাইভেট পড়ে, তাদের বেতনও দিতে পারছি না।’ 

কুলকান্দী ইউনিয়নের সরদারপাড়া গ্রামের শ্রমিক মালেকা বেগম, পলবান্ধার সিরাজাবাদ গ্রামের মিনাল মিয়া, চরপুটিমারীর আলবেদা বেগম, ইসলামপুর সদরের ফকির আলী, চরগোয়ালিনীর সোলাইমান, চিনাডুলীর আক্কাস আলীসহ অনেকেই বলেন, ‘আমরা কামলা দিয়ে যা আয় করি, তা দিয়েই সংসার চলে। কিন্তু প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার দুই মাস পরও টাকা পাচ্ছি না। এখন টাকার অভাবে সংসার চালাতে পাচ্ছি না। দ্রুত মজুরি টাকা দেওয়া হোক।’ 

পাথর্শী ইউপি চেয়ারম্যান ইফতেখার আলম বাবলু বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার দুই মাস পরও টাকা না পাওয়ায় প্রতিদিনই শ্রমিকদের নানা কথা শুনতে হচ্ছে। এতে আমরা বিপাকে পড়েছি।’ 

গাইবান্ধা ইউপি চেয়ারম্যান মাকছুদুর রহমান আনছারী বলেন, ‘অতিরিদ্র শ্রমিকেরা তাদের মজুরি না পাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। মজুরি টাকার জন্য আমাদের কাছে সকাল-বিকেল ধরনা দিচ্ছে। আমরা পিআইওর কার্যালয়ে যোগাযোগ করলেও সমাধান মিলছে না।’ 

গোয়ালেরচর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুর রহিম বাদশা বলেন, ‘পার্শ্ববর্তী উপজেলার শ্রমিকেরা প্রায় মাসখানেক আগে মজুরি টাকা পেলেও আমাদের শ্রমিকেরা এখনো টাকা পায়নি। এতে আমরা প্লাস প্রকল্পে কাজ করাতে হিমশিম খাচ্ছি।’ 

বেলগাছা ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মালেক বলেন, ’ শ্রমিকেরা টাকার জন্য সকাল-বিকেল বাসায় আসছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ টাকা না দিলে আমাদের কি করার আছে? শ্রমিকদের টাকা না পেয়ে বড়ই কষ্টে দিনাতিপাত করছে।’ 

নোয়ারপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. রোমান হাসান বলেন, ‘দীর্ঘ সময়েও টাকা দিতে না পারায় শ্রমিকদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে।’ 

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মেহেদী হাসান টিটু বিল না পাওয়ায় শ্রমিকদের ভোগান্তির কথা স্বীকার করে বলেন, ‘শ্রমিকদের কাজের মজুরির বিল যথা সময়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে পাঠিয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বারবার যোগাযোগও করছি। আশা রাখি, কয়েক দিনের মধ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংক হয়ে প্রত্যেক শ্রমিকের মোবাইলে নম্বরে বিলের টাকা চলে যাবে।’ 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মু. তানভীর হাসান রুমান বলেন, ‘যাতে শিগগিরই শ্রমিকেরা তাদের মজুরির টাকা পান, সে বিষয়ে খোঁজখবর রাখছি।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত