ময়মনসিংহের সীমান্তে ৫০ গ্রাম প্লাবিত

ময়মনসিংহ ও হালুয়াঘাট প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ১৭: ৫০
আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ১৮: ৪৮

ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলা অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ১৭ ইউনিয়নের ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে দুই উপজেলার অন্তত ৮৫ হাজার মানুষ।

তবে ওই দুই উপজেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ ও মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক না থাকায় ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ পুনর্বাসন বিভাগের স্থাপিত কন্ট্রোল রুম। 

আজ শনিবার দুপুরে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. সানোয়ার হোসেন। 

তিনি বলেন, হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে এখন নারী শিশুসহ সাত শতাধিক মানুষ উঠেছে। তাদের শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। 

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে হালুয়াঘাট সীমান্তবর্তী চারটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে উপচে পড়ে দর্শা, মেনংছড়া, বোরারঘাট ও সেওলা নদীর তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়। পরে রাতেই বিভিন্ন স্থানে নদীর বাঁধ ভেঙে ও বাঁধ উপচে প্রবল বেগে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। 

এতে ভুবনকুড়া ইউনিয়নের মহিষলেটি, ধোপাজুড়া, কড়ইতলী, জুগলী ইউনিয়নের গামারীতলা, জিগাতলা, নয়াপাড়া, ছাতুগাও, কৈচাপুর ইউনিয়নের নলুয়া, জয়রামকুড়া এলাকাসহ গাজীরভিটা ইউনিয়নের বোরাঘাট নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সূর্যপুর, সামিয়ানাপাড়া হাজনিকান্দক, আনচিংগি, বোয়ালমারাসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়। 

স্থানীয়রা জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে বৃহস্পতিবার রাত থেকে ভুবনকুড়া ইউনিয়নের দর্শা, সেওলা ও মেনংছড়া এবং গাজিরভিটা ইউনিয়নের বোরারঘাট নদীর তীরবর্তী বাঁধে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙা অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করে কয়েক হাজার বাসাবাড়িতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া ভোগাই নদের বিভিন্ন অংশে বাঁধ উপচে ও পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এতে হালুয়াঘাট পৌর শহর, সদর ইউনিয়নসহ হালুয়াঘাট বাজারের বিভিন্ন অংশ পানি ঢুকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। 

হালুয়াঘাট উপজেলার গাজিরভিটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান বলেন, তাঁর এলাকার মহাজনিকান্দক, আনচিংগি, বোয়ালমারা এলাকায় পানি বেশি। তবে সকালে পাহাড়ি ঢলে সীমান্তে সড়কের উপড়ে তিন ফুট পানি ছিল। এলাকার পুকুরের মাছ সব চলে গেছে, আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে পানি কমা শুরু করলে আবার বৃষ্টি শুরু হওয়ার কারণে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। 

একই উপজেলার ভুবনকুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুরুজ মিয়া জানান, গতকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে নদীগুলোতে পানি বাড়ছে। গতকাল দুপুরের দিকে শেওয়াল ও মেনেং নদীর দুটি অংশে পাড় ভেঙে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। ঘরের ভেতর পানি না ঢুকলেও বাড়ির উঠানে পানি প্রবেশ করে। এতে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। 

আশ্রয়কেন্দ্রে ছাগল রাখা হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকাজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, ধানের জমি প্লাবিত হয়েছে ১৫ হাজার ৪৩৮ হেক্টর। এর মধ্যে পুরোপুরি ডুবে গেছে ৯ হাজার ৭৮ হেক্টর জমি, আংশিক ডুবেছে ৬ হাজার ৩৬০ হেক্টর এবং সবজি আংশিক প্লাবিত হয়েছে ১৫৮ হেক্টর। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। 

হালুয়াঘাট ইউএনও মো. এরশাদুল আহমেদ বলেন, ১৯৮৮ সালের দিকে হালুয়াঘাটে বন্যা হয়েছিল। এরপর আর বড় ধরনের বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তবে শুক্রবার বিকেল থেকে বৃষ্টি ও ঢলের পানি ঢুকেছে কয়েকটি ইউনিয়নে। উপজেলায় ৪টি ইউনিয়ন পুরোপুরি প্লাবিত হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৭০ হাজার মানুষ পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। 

৭ ইউনিয়নে ১৫ হাজার মানুষ বাস করে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওইটা আনুমানিক বলছি। কারণ, অনেক এলাকায় এখনো কোনো খোঁজখবর নিতে পারিনি। ওই সব এলাকার জনপ্রতিনিধিরা নৌকার অভাবে সব এলাকায় পৌঁছাতে পারেনি। তা ছাড়া, ওই সব এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় মোবাইলে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই, সঠিক তথ্য এখনো আমরা পাইনি। সঠিক তথ্য পেতে আরও সময় লাগবে। বন্যাদুর্গতদের খাবারের ব্যবস্থা করার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশনা দেওয়া আছে।’ 

হালুয়াঘাট ইউএনও মো. এরশাদুল আহমেদ বলেন, ১৯৮৮ সালের দিকে হালুয়াঘাটে বন্যা হয়েছিল। এরপর আর বড় ধরনের বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তবে শুক্রবার বিকেল থেকে বৃষ্টি ও ঢলের পানি ঢুকেছে কয়েকটি ইউনিয়নে। উপজেলায় ৪টি ইউনিয়ন পুরোপুরি প্লাবিত হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী রয়েছে। 

হালুয়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে হাঁটুপানি জমেছে। ছবি: আজকের পত্রিকাইউএনও আরও বলেন, নারী, শিশুসহ প্রায় সাত শতাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। এ ছাড়া শতাধিক গরু–ছাগলও আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। বন্যাদুর্গতদের জন্য ১০ হাজার টন খাদ্যসহায়তা ঘোষণা করা হয়েছে। খাদ্যসহায়তা বিতরণ চলমান আছে বলেও জানান তিনি। 

এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘মৎস্যচাষিদের কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার সঠিক কোনো তথ্য এখনো আমাদের জানা নেই। উপজেলা মৎস্য অফিসারদের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করে পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত