শরীরজুড়ে আঘাত, কুকুরকেও এভাবে মারে না মানুষ: সহিংসতায় নিহত পুলিশের মেয়ের আহাজারি

মহিউদ্দিন রানা, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) ও নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি 
আপডেট : ০১ আগস্ট ২০২৪, ২১: ৪০
Thumbnail image

‘ছেলে-মেয়েদের মুখের দিকে তাকাতেই পারছি না। বাবাকে হারানোর শোকে ছেলে-মেয়েরা পাথর হয়ে গেছে। ছেলে-মেয়েদের কান্না দেখে বুকটা ফেটে যায়।’ 

মোবাইল ফোনে আজকের পত্রিকাকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এভাবেই কথাগুলো বলেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘাতে নিহত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক মাসুদ পারভেজ ভূঁইয়ার স্ত্রী মেরিনা আক্তার বিনা। 

মাসুদ পারভেজ ভূঁইয়ার বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ি ইউনিয়নের কালান্দর গ্রামে। তিনি ওই এলাকার মৃত আব্দুল জব্বার ভূঁইয়ার ছেলে। রাজধানী বনশ্রীর ‘এ’ ব্লকের ৫ নম্বর রোডে থাকতেন তিনি। তাঁকে আহতাবস্থায় ফরাজী হাসপাতালের সামনের রোড থেকে উদ্ধার করা হয়। 

নিহত পুলিশ কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জে পিবিআইয়ের পরিদর্শক পদে কর্মরত ছিলেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১৯ জুলাই রাজধানীর বনশ্রী এলাকায় দুর্বৃত্তরা তাঁকে কুপিয়ে আহত করে। পরে রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২১ জুলাই তাঁর মৃত্যু হয়। ওই দিনই ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ি ইউনিয়নের কালান্দর গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। 

এদিকে স্বামীকে হত্যার ঘটনায় নিহত পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী বাদী হয়ে রাজধানীর খিলগাঁও থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। বিনা ময়নাতদন্তে দাফনের ১০ দিন পর ৩০ জুলাই (মঙ্গলবার) কবর থেকে মাসুদ পারভেজ ভূঁইয়ার লাশ উত্তোলন করা হয়। ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরীর উপস্থিতিতে পিবিআই কর্মকর্তা গোলাম আশরাফ লাশটি উত্তোলন করেন। পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে ফের কবর দেওয়া হয়। 

নিহত পিবিআই কর্মকর্তা মাসুদ পারভেজ ভূঁইয়া। ছবি: সংগৃহীত নিহত পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী মেরিনা আক্তার বিনা বলেন, ‘আমার দুই মেয়ে এবং এক ছেলেকে এতিম করে দিয়েছে হত্যাকারীরা। বড় মেয়েটা উম্মে মাইশা স্নেহা ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে প্রথম বর্ষে, ছোট মেয়ে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে এবং ছেলেটা অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। আমার স্বামী তো কারও কোনো ক্ষতি করেনি। তাহলে কেন ওরা আমার এই ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের এতিম করল? সরকারের কাছে আমার দাবি, আমার ছেলে-মেয়েদের যারা এতিম করেছে তাদের চিহ্নিত করে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনা হোক।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘১৯ জুলাই মাগরিবের নামাজ পড়ে বাসা থেকে সিভিল পোশাকে ওষুধ আনতে ফার্মেসিতে যায় মাসুদ। এরপর আনুমানিক ৮টা ১৫ মিনিটে ওনার নম্বর থেকেই কল আসে। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে কেউ একজন বলল, ‘‘আপনার স্বামীকে কে বা কারা মেরে রাস্তায় ফেলে গেছে।’’ এই বলেই ফোনটা কেটে দেয়। খবরটা শুনে আমার মাথায় তখন আকাশ ভেঙে পড়ে।’ 

তিনি বলেন, ‘উনার চাকরির বয়স ২৫ বছর। দীর্ঘ সময়ে কারও সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে দেখিনি। তা ছাড়া ওনার কর্মস্থল নারায়ণগঞ্জ, উনাকে মারা হয়েছে ঢাকায়। এই বিষয়টা কিছুতেই মাথাই আসতেছে না।’

বড় মেয়ে উম্মে মাইশা স্নেহা বলেন, ‘একটা নিরপরাধ মানুষকে শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গে যেভাবে আঘাত করে মারা হয়েছে, রাস্তার কুকুরকেও মানুষ এভাবে মারে না। আমার বাবাকে যারা নির্মমভাবে হত্যা করে, আমাদের এতিম এবং আমার মাকে বিধবা করেছে; তাদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।’ 

নারায়ণগঞ্জ পিবিআই পরিদর্শক শাকিল আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মাসুদ পারভেজ ভূঁইয়া নারায়ণগঞ্জ পিবিআইতে কর্মরত ছিলেন। তিনি ঢাকার বনশ্রী এলাকায় থাকতেন। ঘটনার দিন নারায়ণগঞ্জে আসার পথে হামলার শিকার হন। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত