গোদাগাড়ী পৌর কাউন্সিলরের ভাই শীর্ষ মাদক কারবারি টিপুকে খুঁজছে র‍্যাব

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
প্রকাশ : ০৭ মে ২০২৪, ২০: ০৩
আপডেট : ০৭ মে ২০২৪, ২০: ২২

রাজশাহীতে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার হেরোইনের একটি চালান জব্দ করেছে র‍্যাব। আজ মঙ্গলবার ভোরে এই অভিযান চালানো হয়। এ সময় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার দুজন রাজশাহীর শীর্ষ মাদক কারবারি আবদুর রহিম টিপুর (৩৬) সহযোগী। দুই সহযোগী ধরা পড়ার পর টিপু গা-ঢাকা দিয়েছেন। বেশ কিছু মামলার আসামি টিপুকে র‍্যাব গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে।

টিপুর বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ী পৌরসভার মাদারপুর মহল্লায়। ২০১৭ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক অধিশাখা-২ থেকে রাজশাহীর শীর্ষ ১৫ মাদক কারবারির নামের তালিকা রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে পাঠানো হয়। তালিকার ১০ জনের বাড়িই গোদাগাড়ী উপজেলায়। তাঁদের একজন আবদুর রহিম টিপু। 

ওই তালিকায় টিপু সম্পর্কে বলা হয়, টিপু আওয়ামী লীগের সমর্থক। তাঁর কাছে একাধিক দামি গাড়ি রয়েছে। তিনি বিপুল অর্থের মালিক। হেরোইনের বড় এই কারবারির মহিষালবাড়ি বাজারে ইলেকট্রনিকস ও মোবাইল ফোনের একাধিক দোকান রয়েছে। আছে মার্কেট ও জমিজমা। টিপু ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় থাকেন। তবে ২০১৮ সালে দেশজুড়ে মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার হলে টিপু আত্মগোপনে চলে যান। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এলাকায় ফেরেন। এখন আবার তাঁর মাদকের কারবার জমজমাট।

টিপুর বড় ভাই মনিরুল হক মনি এখন গোদাগাড়ী পৌরসভার কাউন্সিলর। ২০১৩ সালের ৬ এপ্রিল রাজশাহীর চারঘাট থানা-পুলিশ পৌনে ৪ কেজি হেরোইন ও একটি মাইক্রোবাসসহ মনিকে গ্রেপ্তার করেছিল। মামলাটি এখনো আদালতে চলমান। টিপুর নামেও একাধিক মামলা আছে। সবশেষ হেরোইনসহ দুই সহযোগী গ্রেপ্তারের পর টিপুর বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার ভোরে র‍্যাব-৫-এর রাজশাহীর একটি দল গোদাগাড়ীর ভারতীয় সীমান্ত সংলগ্ন চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের দিয়াড় মানিকচক থেকে এ দুজনকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তার দুজন হলেন দিয়াড় মানিকচক রাবনপাড়া গ্রামের মো. সোলায়মান (২০) ও রুহুল আমিন (৪০)। তাঁদের কাছ থেকে ৩ কেজি ৪০০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করা হয়েছে। মূলত এ দুজনের মাধ্যমে টিপু ভারত থেকে হেরোইন সংগ্রহ করতেন। তারপর পদ্মা নদী পার করে এসব হেরোইন গোদাগাড়ীর বিভিন্ন গ্রামে নেওয়া হতো। সেখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে হেরোইনের চালান পাঠানো হতো।

র‍্যাব-৫-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেন, চক্রটির একটি হেরোইনের চালান আসার খবর পেয়ে র‍্যাব সদস্যরা সোলায়মানের বাড়ি ঘেরাও করে তাঁকে আটক করা হয়। সে সময় রুহুল আমিন ওই বাড়ি থেকে বেরিয়েই দৌড় দেন। প্রায় এক কিলোমিটার ধাওয়া করে তাঁকে আটক করা হয়। এরপর সোলায়মানের বাড়ি তল্লাশি করে হেরোইন উদ্ধার করা হয়।

র‍্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে ওই দুজন জানিয়েছেন, আবদুর রহিম টিপুর চাহিদামতো হেরোইনগুলো ভারত থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। পরে টিপুকে গ্রেপ্তারের জন্য বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়। তবে টিপু র‍্যাবের অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে আত্মগোপন করেছেন। এ ঘটনায় গোদাগাড়ী থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হয়েছে। এ মামলায় টিপুকে পলাতক আসামি করা হয়েছে। গ্রেপ্তার দুই আসামিকে থানায় হস্তান্তর করা হলে পুলিশ তাঁদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে। টিপুকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলেও জানিয়েছেন র‍্যাব-৫-এর অধিনায়ক।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ২০১৮ সালে মাদক কারবারি আবদুর রহিম টিপু তাঁর নামে কেনা একটি নতুন মাইক্রোবাস স্থানীয় সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীকে দিয়েছিলেন। কালো রঙের গাড়িটি নিয়েই ওমর ফারুক চৌধুরী নির্বাচনে গণসংযোগ করেন। সেই থেকে গাড়িটি তাঁর কাছেই আছে। ২০২২ সালে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক উঠলে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, টিপুর কাছ থেকে গাড়িটি কিনে নিয়েছেন তাঁর ছেলে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত