থামেনি হুন্ডি মুকুলের মাটি লুট, অসহায় এলাকাবাসী

  • বালুমহাল ইজারা নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে মাটি
  • বিক্রির স্লিপেও বালু নয়, মাটি লেখা হচ্ছে
  • স্মারকলিপি, মানববন্ধনের পরেও ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন
  • প্রতিবাদকারীদের নামে টানানো হয়েছে ‘চাঁদাবাজ’ ব্যানার
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
প্রকাশ : ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০১: ৩৯
আপডেট : ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১১: ৩৬
Thumbnail image
ছবি: সংগৃহীত

বালুমহাল ইজারা নিয়ে মাটি লুট করছেন রাজশাহীর হুন্ডি কারবারি হিসেবে আলোচিত মুখলেসুর রহমান ওরফে মুকুল। এলাকাবাসী এক জোট হয়ে মাটি লুটের প্রতিবাদ করলেও তাঁরা মুকুলের ক্ষমতার কাছে অসহায়ত্ব বরণ করে নিয়েছেন। ফলে এখন বাধাহীনভাবে পদ্মাতীরের মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে ইটভাটায়। এ ব্যাপারে নিশ্চুপ স্থানীয় প্রশাসন।

মুকুলের প্রতিষ্ঠানের নাম মেসার্স মুন এন্টারপ্রাইজ। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ও সাবেক সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদের ‘কাছের লোক’ মুকুল। তিনি ১৪৩১ বঙ্গাব্দের জন্য গোদাগাড়ী উপজেলার দুটি বালুমহাল ইজারা পেয়েছেন। বালুমহাল দুটির একটি শেখেরপাড়া এবং অন্যটি ফুলতলা গ্রামে।

শুরু থেকে মহালে বালুর সঙ্গে মাটি কেটে বিক্রির অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে এলাকাবাসী গত ১৪ ও ২৪ নভেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। কয়েক দফা মানববন্ধনও করা হয়। এর জের ধরে সাইফুদ্দিন টমাস নামের এক ছাত্রনেতা হামলার শিকার হন।

তবে মাটি কাটা থামেনি।

গতকাল শনিবার সকালে ফুলতলা বালুমহালে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকটি এস্ককাভেটর দিয়ে মাটি কেটে তোলা হচ্ছে ট্রাক্টরে। বালুমহালের লোকজন ট্রাক্টরপ্রতি আদায় করছেন ১ হাজার ৩০০ টাকা। শুধু বালু তোলার নিয়ম থাকলেও মুন এন্টারপ্রাইজের বিক্রি স্লিপেও লেখা হচ্ছে ‘মাটি’।

মাটিবাহী একটি ট্রাক্টরের ছবি তুলতেই কয়েকজন তরুণ নিষেধ করেন। এক তরুণ ফোন করেন বালুমহালের ব্যবস্থাপক মেরাজুল ইসলামকে। সেই ফোনেই মেরাজুল প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমরা নিয়ম করেছি, বালুমহালের কোনো ছবি তোলা যাবে না।’ বালুমহালে মাটি কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে বাবু ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তিনিই বিষয়টা ম্যানেজ করছেন।’

বাবু হলেন হুন্ডি মুকুলের ভাই। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর মুকুল গা ঢাকা দিলে বাবু এবং তাঁর ভাতিজা সাজিম বালুমহাল দেখাশোনা করছেন। বাবু বলেন, ‘মাটি বলতে মাটি ও বালুর মিশ্রণ। সেগুলোই মাটি হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে।’

ফুলতলা বালুমহালের পাশেই স্থানীয় যুবদল নেতা রাকিব রাজিবের ফার্মেসি। ফার্মেসিতে বসেই রাকিব বলেন, ‘আসলে আমরা প্রতিবাদ করে পারলাম না। আমাদের নামেই তারা ব্যানার টাঙিয়ে দেয় যে আমরা নাকি চাঁদা দাবি করেছি।’

রাকিব আরও বলেন, ‘এবার প্রতিবাদ করে মাটি কাটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দলেরই কিছু লোক আবার এই সুযোগটা করে দিয়েছে।’

প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে রাকিব বলেন, ‘আমরা দুবার স্মারকলিপি দিলাম, মানববন্ধন করলাম। কিন্তু প্রশাসনের কোনো রা নেই।’

স্থানীয়দের অভিযোগ, ফুলতলা ও শেখেরপাড়া বালুমহাল ইজারা নিলেও হুন্ডি মুকুল বিদিরপুর এলাকায় আরেকটি অবৈধ বালুমহাল চালু করেছেন। সেখানেও মাটি কাটা হচ্ছে।

এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) শামসুল ইসলাম বলেন, ‘বালুমহাল থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এলাকাবাসী স্মারকলিপি দিয়েছিলেন ইউএনও স্যারের কাছে। বিষয়টি নিয়ে ইউএনও স্যারের সঙ্গে আলাপ করব। তিনি যে নির্দেশনা দেবেন, সেভাবে কাজ করব।’

ইউএনও আবুল হায়াতের মতামত জানতে গতকাল সকালে ফোন করলে তিনি একটি অনুষ্ঠানে আছেন, পরে কথা বলবেন বলে জানান। দুপুরে ফোন করলে অন্য একজন বলেন, ‘স্যার এখনো ব্যস্ত আছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত