Ajker Patrika

ঘুরেফিরে একই সমিতিকে পুকুর ইজারার প্রক্রিয়া

  • লাভবান সিন্ডিকেট, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও সাধারণ মানুষ বঞ্চিত
  • জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮: ৫৯
ঘুরেফিরে একই সমিতিকে পুকুর ইজারার প্রক্রিয়া

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে ঘুরেফিরে একই মৎস্যজীবী সমিতিকে সরকারি পুকুর ইজারা দেওয়া হচ্ছে। নীতিমালা অনুযায়ী, প্রতিটি সমিতি দুটি করে পুকুর ইজারা পাবে এবং তারপর অবশিষ্ট পুকুর খাস কালেকশনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে ইজারা দিতে হবে। কিন্তু গোদাগাড়ীর শক্তিশালী পুকুর সিন্ডিকেট সমিতির মাধ্যমে সব পুকুর নিয়ে নিচ্ছে। এতে জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতিমালা লঙ্ঘন হচ্ছে বলে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে।

উপজেলার পানিহার গ্রামের বাসিন্দা মিজানুর রহমান গত সোমবার জেলা প্রশাসক বরাবর এই লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগের অনুলিপি বিভাগীয় কমিশনার এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয়েও দেওয়া হয়েছে। আজকের পত্রিকার হাতে অনুলিপির কপি এসেছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, সরকার ২০০৯ সালে জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ও ২০১২ সালে সংশোধনী জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতিমালা গঠন করে ধারাবাহিকভাবে জলমহাল ইজারা দিতে রূপরেখা তৈরি করেছে। ২০০৯ সালের জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতিমালা অনুযায়ী, খাস পুকুর ইজারা গ্রহণের ক্ষেত্রে মৎস্যজীবী সমিতি অগ্রাধিকার পাবে। ২০১২ সালের সংশোধনী নীতিমালার ২(৪)(খ) ধারা অনুযায়ী ও (গ) ধারা মোতাবেক একরপ্রতি বার্ষিক ১ হাজার ৫০০ টাকায় দুটি করে পুকুর ইজারা পাবে। নীতিমালার ১৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, গোরস্থান, আদর্শগ্রামের অনুকূলে ইজারাবিহীন পুকুর উন্মুক্ত রাখার বিধান রয়েছে। এরপর অবশিষ্ট যতই পুকুর থাকুক না কেন, তা নীতিমালার ১৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী সাধারণ মানুষের কাছ থেকে খাস কালেকশন করতে হবে।

অভিযোগে বলা হয়, জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতিমালার ৬(৫) ধারায় উল্লেখ রয়েছে, কোনো সমবায় সমিতি দুটির বেশি জলমহাল ইজারা পাবে না। কিন্তু গোদাগাড়ী উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল হায়াত এবং সদস্যসচিব উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শামসুল ইসলাম তা অমান্য করছেন।

জানা গেছে, গোদাগাড়ীতে ৫ হাজার ৩৮টি সরকারি পুকুর ও দিঘি রয়েছে। এর মধ্যে শুধু খাস পুকুরের সংখ্যা ৩ হাজার ৬৫৭টি। ১ হাজার ৪২১টি পুকুর আগের দুই বছরে ইজারা দেওয়া আছে। বাকি ২ হাজার ২৩৬টি পুকুর বাংলা ১৪৩২ থেকে ১৪৩৪ সনের জন্য ইজারা প্রক্রিয়ায় রয়েছে। গোদাগাড়ীতে সমবায় সমিতি রয়েছে ৪৮টি। নিয়ম অনুযায়ী, মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির জন্য প্রতিটিতে সমিতিতে অন্তত ২০ জন জেলে কার্ডধারী মৎস্যজীবী থাকতে হবে। কিন্তু এসব সমিতির সবগুলোর তা নেই। তারপরও সব সমিতিই আগেই নীতিমালার বাইরে দুইয়ের বেশি সংখ্যক পুকুর ইজারা পেয়েছে। এখন ওই সমিতিগুলোর কাছেই শিডিউল বিক্রি করে পুকুর ইজারার জন্য দরপত্র জমা নেওয়া হয়েছে।

কোন সমিতির নামে কোন পর্যায়ে কতটি পুকুর ইজারা নেওয়া আছে, তা তালিকার মাধ্যমে তফসিলসহ পুরো বিবরণ জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগপত্রের সঙ্গে দেওয়া হয়েছে। এতে দেখা গেছে, ৪৮টি সমিতির মধ্যে ৩৮টিই দুই বা ততোধিক পুকুর ইজারা নিয়েছে। এর মধ্যে চারটি সমিতি ছয়টি করে পুকুর ইজারা নিয়ে আছে। নয়টি সমিতি ইজারা নিয়েছে পাঁচটি করে পুকুর। চারটি করে পুকুর ইজারা নিয়েছে ১২টি সমিতি। তিনটি করে পুকুর নিয়েছে পাঁচটি সমিতি। আটটি সমিতি নিয়েছে দুটি করে পুকুর। আর একটি করে পুকুর নিয়েছে দুটি সমিতি। এসব সমিতি ফের পুকুর ইজারা নিতে দরপত্র দাখিল করেছে।

গোদাগাড়ীর স্থানীয়রা জানান, গোদাগাড়ীর ৩ হাজার ৬৫৭টি পুকুরের মধ্যে দুটি করে মাত্র ৯৬টি পুকুর পায় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি। বাকি ৩ হাজার ৫৬১টি পুকুর ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, গোরস্তান, মসজিদ, মন্দির, আদর্শগ্রাম এবং সাধারণ মানুষের পাওয়ার কথা। কিন্তু প্রতিবছর অনিয়ম করে ঘুরেফিরে নামসর্বস্ব সমিতিকেই পুকুর দেওয়া হয়।

গোদাগাড়ীর খাস পুকুরগুলো স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়সহ সাধারণ মানুষকে বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে বেসরকারি সংস্থা সিসিবিভিও। সংস্থাটির কর্মকর্তা মো. আরিফ বলেন, ‘পুকুর সিন্ডিকেট সব পুকুর নিয়ে নেয়। তারপর তাদের কাছ থেকে সাধারণ মানুষকে চড়া মূল্যে পুকুর নিতে হয়। সেসব পুকুরে মাছ চাষ হয়। গ্রামের মানুষ দৈনন্দিন কাজে পুকুরে নামতে পারে না।’ তিনি বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতিনিয়ত নিচে নামছে। তাই ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন কমাতে গ্রামে গ্রামে এসব পুকুর উন্মুক্ত রাখা দরকার।

আরিফ জানান, অল্প কিছু পুকুর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী-অধ্যুষিত গ্রামগুলোয় তাদের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত ছিল। এবার ইজারার তালিকায় সেই পুকুরগুলোও আনা হয়েছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের প্রতিনিধিরা ভূমি অফিসে গিয়ে এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাঁরা দাবি করছেন, পুকুর সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে যেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ সাধারণ মানুষকে খাস কালেকশনের মাধ্যমে পুকুর দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে কথা বলতে উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও ইউএনও আবুল হায়াতকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। নীতিমালা না মেনে দুটির বেশি পুকুর পাওয়া সমিতির কাছে আবারও শিডিউল বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির সদস্যসচিব ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শামসুল ইসলাম একটি সভায় আছেন জানিয়ে পরে ফোন করতে চান। তবে তিনি ফোন করেননি।

মৎস্যজীবী সমবায় সমিতিকে নীতিমালার বাইরে দুইয়ের বেশি পুকুর ইজারা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) যোবায়ের হোসেন বলেন, ‘এটা দেখে বলতে পারব। নীতিমালার বাইরে কোনো কিছুই হবে না। আমি ঢাকায় আছি, ফেরার পর বিষয়টি দেখব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হবিগঞ্জে কৃষিজমির টপসয়েল কেটে অবাধে বিক্রি, পরিবেশ ও উৎপাদন হুমকিতে

সহিবুর রহমান, হবিগঞ্জ
জমির উপরিভাগ কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার শেরপুর এলাকার হাওর থেকে গতকাল তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জমির উপরিভাগ কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার শেরপুর এলাকার হাওর থেকে গতকাল তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি (টপসয়েল) কেটে অবাধে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের ভাষ্য, প্রতিবছর শীত মৌসুম এলেই একটি সংঘবদ্ধ মাটিখেকো চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে। গত কয়েক বছর ধরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এ অবৈধ কার্যক্রম চললেও শীত শুরু হলেই ব্রাহ্মণডোরা ইউনিয়নে তৎপরতা সবচেয়ে বেশি বেড়ে যায়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের কার্যকর তদারকির অভাবে চলতি মৌসুমে মাটিখেকোদের দৌরাত্ম্য কয়েক গুণ বেড়েছে। দিন-রাত শ্রমিক ও ভেকু (এক্সকাভেটর) ব্যবহার করে কৃষিজমির উপরিভাগের উর্বর মাটি কেটে ট্রাক্টরের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এতে কৃষিজমির উৎপাদনক্ষমতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্যও হুমকির মুখে পড়ছে। অতিরিক্ত ভারী যান চলাচলে গ্রামীণ সড়কগুলোরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, টপসয়েল কাটা ও পরিবহনের সঙ্গে একটি মধ্যস্বত্বভোগী চক্র জড়িত। অভিযোগ অনুযায়ী, ব্রাহ্মণডোরা এলাকার মুর্শেদ মিয়ার ছেলে কামাল মিয়া, শেরপুর এলাকার সামসু মিয়ার ছেলে সুমন মিয়া এবং অলিপুর এলাকার মন্নর মিয়া এ চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তারা কৃষিজমি থেকে টপসয়েল কেটে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, ব্রাহ্মণডোরা ইউনিয়নের শেরপুর, কেশবপুর ও ঋষিপাড়া এলাকা থেকে নিয়মিত মাটি কেটে ট্রাক্টরের মাধ্যমে পরিবহন করা হচ্ছে। মাটি ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি ট্রাক্টর টপসয়েল ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় কিনে পরে তা ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করছেন।

জমির উপরিভাগ কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার শেরপুর এলাকার হাওর থেকে গতকাল তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জমির উপরিভাগ কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার শেরপুর এলাকার হাওর থেকে গতকাল তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জনপ্রতিনিধি বলেন, ‘এই মাটিখেকো চক্রের সঙ্গে প্রভাবশালী মহল জড়িত থাকায় প্রকাশ্যে কিছু বলা কঠিন। সরকার পরিবর্তন হলেও প্রভাবশালীরা থেকে যায়।’

অভিযোগের বিষয়ে কামাল মিয়া বলেন, ‘আমরা যে জমি থেকে মাটি কাটি, তা মালিকের কাছ থেকে টাকা দিয়ে কিনে নেওয়া। যদি আইনি কোনো বাধা থাকে, তাহলে আর এসব কাজ করব না।’

আরেক অভিযুক্ত মন্নর মিয়া বলেন, ‘এই মৌসুমে মাত্র দুই দিন মাটি কেটেছি। এখন আর কাটছি না। যে গাড়ি এনেছিলাম, সেটিও ফেরত পাঠিয়েছি। এ বছর আর মাটি কাটব না।’

এ বিষয়ে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাহিদ হোসেন বলেন, ‘কৃষিজমি থেকে অবৈধভাবে মাটি কাটার বিষয়টি শুনেছি। যারা এ কাজে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আ.লীগের দুই নেতাকে বিএনপির মনোনয়ন

  • বাগেরহাট-১ আসনে মনোনয়ন পাওয়া কপিল কৃষ্ণ মণ্ডল ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি
  • বাগেরহাট-৪ আসনের প্রার্থী সোমনাথ দে গত বছরের আগস্টে আ.লীগ থেকে পদত্যাগ করেন
বাগেরহাট প্রতিনিধি
আ.লীগের দুই নেতাকে বিএনপির মনোনয়ন

বাগেরহাটের চারটি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। তবে চারটির দুটিতেই দলটির মনোনয়ন পেয়েছেন কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের দুই নেতা। বিএনপিতে যোগ দিয়ে এক বছরের মধ্যে দুটি আসনের মনোনয়ন পাওয়ায় বিএনপি বেশির ভাগ নেতা-কর্মীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে থাকা ঘনিষ্ঠ ছবি শেয়ার করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, বাগেরহাট-১ (ফকিরহাট-মোল্লাহাট-চিতলমারী) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন মতুয়া বহুজন সমাজ ঐক্যজোটের সাধারণ সম্পাদক কপিল কৃষ্ণ মণ্ডল। তিনি একই সঙ্গে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের মহাসচিব এবং বাংলাদেশ অশ্বিনী সেবা আশ্রমের সভাপতি। ছিলেন চিতলমারী উপজেলার কলাতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি।

অপর দিকে বাগেরহাট-৪ (শরণখোলা-মোরেলগঞ্জ) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন মতুয়া বহুজন সমাজ ঐক্য জোটের সভাপতি সোমনাথ দে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সাবেক সভাপতি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া তিনি মোরেলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। গত বছরের আগস্টের শেষ দিকে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নেন। এর আগে সোমনাথ দে জাতীয় পার্টি করতেন। পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সংখ্যালঘুবিষয়ক উপদেষ্টা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক ছিলেন তিনি। ২০১৮ সালের ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে বাগেরহাট-৪ (শরণখোলা-মোরেলগঞ্জ) আসন থেকে নির্বাচন করেছিলেন।

২০১৯ সালের শেষের দিকে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ২০২২ সালে গঠিত উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ কার্যনির্বাহী কমিটিতে তিনি ৩নং সদস্য হিসেবে স্থান পেয়েছিলেন। ‘দেশবিরোধী চক্রান্তের অভিযোগে’ কপিল কৃষ্ণ মণ্ডল চলতি বছরের মার্চে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন এবং অপর একটি মামলায় কারাভোগ করেছেন সোমনাথ দে। জেল থেকে বেরিয়ে সনাতন ধর্মের অনুসারীদের নিয়ে ২০ আগস্ট বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের হাতে ফুল দিয়ে বিএনপিতে যোগ দেন কপিল ও সোমনাথ।

এই নেতাকে মনোনয়ন দেওয়ায় শরণখোলার বাসিন্দা রাসেল আহম্মেদ ফেসবুকে সোমনাথ দের ছবি শেয়ার দিয়ে লিখেছেন, ‘জয় বাংলা, ধানের শীষে ভোট দিন।’ পোস্টের নিচে একজন লিখেছেন, ‘সাথে জাতীয় পার্টির স্লোগান যুক্ত করে দিন।’

গত শনিবার বিকেলে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয় থেকে প্রার্থী ঘোষণার পরে আসন দুটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। এ বিষয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এ টি এম আকরাম হোসেন তালিম বলেন, ‘কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বাইরে আমাদের আসলে করার কিছু নেই। তবে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। দীর্ঘদিন দল করে, জুলুম-নির্যাতন সহ্য করার পরে অন্য দলের কেউ এসে মনোনয়ন পাওয়ায় তাঁরা ক্ষোভে ফুঁসছেন। আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে এসব বিষয় কেন্দ্রকে জানিয়েছি।’

জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ সালাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের পদধারী নেতাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা এটি কীভাবে মেনে নেবে বলেন। তাঁরা দুজনই সুবিধাবাদী এবং শেখ হেলালের নিকটতম অনুসারী ছিলেন।’

তবে বাগেরহাট-১ আসনের মনোনয়নপ্রাপ্ত কপিল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, ‘কখনো অন্য কোনো দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না। এটিই আমার প্রথম রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া।’ আর বাগেরহাট-৪ আসনের প্রার্থী সোমনাথ দে বলেন, ‘আমি মনোনয়ন পাওয়ায় যাঁরা চাঁদাবাজ, জুলুমকারী, নির্যাতন করে, তাঁদের গাত্রদাহ হচ্ছে। কিন্তু যাঁরা সাধারণ মানুষ তাঁরা আমাকে সাদরে বরণ করেছেন। আমি জাতীয় পার্টি করেছি, আওয়ামী লীগ করেছি, ৫ আগস্টের পর জেল খেটেছি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয়, দলের হাইকমান্ড আমাকে মনোনীত করেছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘স্যাক্রোলাইটিস’ রোগে আক্রান্ত: মেধাবী ছাত্রী আসফির বাঁচার আকুতি

খুলনা প্রতিনিধি
আরিফা জান্নাত আসফি । ছবি: সংগৃহীত
আরিফা জান্নাত আসফি । ছবি: সংগৃহীত

খুলনা সরকারি মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী আরিফা জান্নাত আসফি পিইসি পরীক্ষায় বৃত্তিসহ এ+ এবং জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় এ+ পেয়েছেন। অত্যন্ত মেধাবী এই ছাত্রী গত চার বছর ধরে দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগছে।

চিকিৎসকের পরামর্শে এর আগে পরপর দুবার পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি। তবে এখনো শারীরিক অবস্থার আশানুরূপ উন্নতি না হওয়ায় পুনরায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।

আসফির পরিবার জানায়, আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে তার চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে তারা চরম সংকটে পড়েছে। ভারতে গিয়ে পুনরায় চিকিৎসা নিতে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকার প্রয়োজন হলেও দরিদ্র পরিবারের পক্ষে এ অর্থ জোগাড় করা সম্ভব নয়।

এ অবস্থায় ‘স্যাক্রোলাইটিস’ রোগে আক্রান্ত মেধাবী ছাত্রী আরিফা জান্নাত আসফি নিজের জীবন রক্ষার্থে সমাজের বিত্তবান ও সহৃদয়বান ব্যক্তিদের কাছে আর্থিক সহায়তার আবেদন জানিয়েছেন। সামান্য সহযোগিতাই হয়তো তার চিকিৎসা অব্যাহত রাখতে এবং একটি সম্ভাবনাময় জীবন রক্ষা করতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নকলায় ৭ অবৈধ ইটভাটায় অভিযান, সাড়ে ২২ লাখ টাকা জরিমানা

নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধি
অবৈধভাবে প্রস্তুত করা কাঁচা ইট বিনষ্ট করা হয় । ছবি: আজকের পত্রিকা
অবৈধভাবে প্রস্তুত করা কাঁচা ইট বিনষ্ট করা হয় । ছবি: আজকের পত্রিকা

শেরপুরের নকলায় অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে জেলা প্রশাসন। রোববার (২১ ডিসেম্বর) জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পরিবেশ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় দিনব্যাপী এ অভিযান পরিচালিত হয়।

অভিযানকালে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা সাতটি অবৈধ ইটভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালত বসানো হয়। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩-এর বিভিন্ন ধারায় ভাটামালিকদের মোট ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এ সময় অবৈধভাবে প্রস্তুত করা কাঁচা ইট বিনষ্ট করা হয় এবং সংশ্লিষ্ট ইটভাটাগুলোর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। পাশাপাশি অবৈধ ইটভাটার সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে মালিকপক্ষকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পরিবেশের ক্ষতি রোধ ও সরকারি আইন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযান নিয়মিতভাবে চলমান থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত