নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
রাজশাহীর ৬টি সংসদীয় আসনের পাঁচটিতেই জয় পেয়েছেন নৌকার প্রার্থীরা। আর একটিতে নৌকা ডুবে গেছে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাঁচির আঘাতে। গতকাল রোববার রাতে ফল ঘোষণার পর ভোটের এই ফল নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। কেন কোন প্রার্থী জিতলেন, আবার কে কেন জিততে পারলেন না—তা নিয়ে নানা আলোচনা হচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। এতে উঠে আসছে নানা কার্য-কারণ।
আওয়ামী লীগের দলীয় নেতা–কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজশাহীর পাঁচ আসনেই আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীরা জিতেছেন নৌকা প্রতীক নিয়ে। আর রাজশাহী-২ (সদর) আসনে নৌকাডুবি হয়েছে নৌকার ভোট না পাওয়ার কারণে। নৌকার ভোট না পেয়ে এখানে পরাজিত হয়েছেন শরিক দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা।
রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে টানা চতুর্থবারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়েছেন নৌকার প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরী। তাঁর সঙ্গে লড়াই ভালোই জমিয়েছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম রাব্বানী। এখানে ওমর ফারুক ১ লাখ ৩ হাজার ৫৯২ ভোট পেয়েছেন। আর রাব্বানী পেয়েছেন ৯২ হাজার ৪১৯ ভোট। এখানে আওয়ামী লীগের আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি ৯ হাজার ৯টি আর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সহধর্মিণী আয়েশা আখতার জাহান ডালিয়া ২ হাজার ৭১৮ ভোট পেয়েছেন। মাহি ও ডালিয়া যে ভোট পেয়েছেন তা রাব্বানীর কাঁচি প্রতীকে পড়লে তিনি অনায়াসেই জয়ী হয়ে যেতেন।
এই এলাকার লোকজন বলছেন, এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে দলীয় নেতা–কর্মীর অনেক ক্ষোভ আছে। ডালিয়া, রাব্বানী আর মাহি ফারুকবিরোধী ভোটই পেয়েছেন। তাদের তিনজনের ভোট ফারুকের একা পাওয়া ভোটের বেশি। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী কম থাকলে ফারুক চৌধুরী নির্বাচিত না হয়ে অন্য কেউ হতে পারতেন। গ্রামের অনেক সাধারণ মানুষ শুধু নৌকা প্রতীক দেখে ভোট দেন বলে ফারুক চৌধুরী এবারও নির্বাচিত হয়েছেন।
রাজশাহী-২ (সদর) আসনে জোটের প্রার্থী হয়েও নৌকা ডুবিয়েছেন ফজলে হোসেন বাদশা। আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা মনে করছেন, পর পর তিনবার ফজলে হোসেন বাদশা নৌকা প্রতীকে এমপি হলেও এ দলের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেননি। উল্টো সুযোগ পেলেই আওয়ামী লীগের স্থানীয় এক শীর্ষ নেতা আর তাঁর পরিবার সম্পর্কে আপত্তিকর কথা বলেছেন। বাদশার এই মুখের কথাই তাঁর ভরাডুবি ঘটিয়েছে। কেননা, বেফাঁস মন্তব্যের কারণে স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবার বাদশাকে সমর্থন দেয়নি। তাঁরা ভোট দিয়েছে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুর রহমান বাদশাকে এবং বড় ব্যবধানে তিনিই নির্বাচিত হয়েছেন।
মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ প্রামাণিক দেবু অবশ্য মনে করেন না মুখের কথার কারণে তাঁদের প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশার ভরাডুবি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ওই সব কথাবার্তার পরে তো আমরা এক হয়েছিলাম। সিটি নির্বাচনে একসঙ্গে কাজ করে নৌকার প্রার্থীকে জিতিয়েছিলাম। কিন্তু এবার আমরা সিটি করপোরেশনের সাপোর্ট পাইনি। সিটি করপোরেশনের প্রায় সকল কাউন্সিলর এবার ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে নৌকার বিপক্ষে কাজ করেছেন। আমাদের পরাজয়ের এটিই কারণ। অন্য কোনো কারণ আপাতত দেখতে পাচ্ছি না।’
রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকায় একচেটিয়া ভোট পেয়েছেন নৌকার প্রার্থী আসাদুজ্জামান আসাদ। তিনি ছাড়া এ আসনের অন্য ৫ প্রার্থীই জামানত হারিয়েছেন। এখানে বিএনএমের ভাইস চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মতি প্রার্থী থাকলেও লড়াইয়ে আসতে পারেননি। মাত্র ৩ হাজার ৫২৩ ভোট পেয়েছেন তিনি। অথচ মন্টু জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক। বিএনপি থেকে এ আসনে নির্বাচন করার তার প্রস্তুতিও ছিল।
রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের প্রার্থী আবুল কালাম আজাদও বড় ব্যবধানে জিতেছেন নৌকার সমর্থকদের ভোটে। এ আসনে স্বতন্ত্র হিসেবে হেভিওয়েট প্রার্থী ছিলেন নৌকা নিয়ে পর পর তিনবার এমপি হওয়া এনামুল হক। কিন্তু যারা প্রতীক দেখে ভোট দেন, তাদের ভোট না পাওয়ার কারণে এনামুল কুলিয়ে উঠতে পারেননি। ভোটে তিনি মাত্র ৫৩ হাজার ৮১২ ভোট পেয়েছেন। আর নৌকার প্রার্থী পেয়েছেন ১ লাখ ৭ হাজার ৯৮৩ ভোট। এনামুলের পরাজয়ের অবশ্য আরেক কারণ তাঁর নারীঘটিত ব্যক্তিগত বিতর্ক। ভোটের প্রচারণার সময় আবুল কালাম আজাদ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করে দলের ভেতরেই সমর্থন হারাতে শুরু করলেও শুধু তৃণমূলের নৌকা সমর্থকদের ভোটে তিনি নির্বাচিত হয়েছেন।
রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল আওয়ামী লীগ। একটি অংশ ছিল নৌকার প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারার দিকে। অপর অংশ ছিল জেলা যুবলীগের সাবেক সহসভাপতি ওবায়দুর রহমানের পক্ষে। নির্বাচনে দারা ৮৬ হাজার ৯১৩ ভোট পেয়েছেন। আর ওবায়দুর পেয়েছেন ৮৩ হাজার ৮৬২ ভোট। মাত্র ৩ হাজার ৫১ ভোটে জিতেছেন নৌকার প্রার্থী। স্থানীয়রা মনে করছেন, যারা শুধু নৌকা প্রতীক দেখে ভোট দেন, তাদের ভোট না পেলে দারাও পরাজিত হতেন।
রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনে চতুর্থবারের মতো নৌকা নিয়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ১ হাজার ৫৯৯ ভোট। এখানে দলেরই স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হক পেয়েছেন ৭৪ হাজার ২৭৮ ভোট। এখানেও ‘নৌকা মার্কা’ দেখে ভোট দেওয়া মানুষের ভোট না পেলে শাহরিয়ার আলমেরও জয় পাওয়া কষ্টকর হতো বলে মনে করছেন অনেকে।
তবে এ আসনের পরাজিত প্রার্থী রাহেনুল হকের দাবি, শাহরিয়ার আলমের অগাধ টাকার কাছে তিনি হেরে গিয়েছেন।
রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপির সমর্থকদের ভোট পাওয়ার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। বিএনপি ভোট বর্জন করলেও দলটির সাধারণ সমর্থকেরা এসে নৌকা বাদে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতীকে যেন ভোট দেন সেই কৌশল নেওয়া হয়েছিল। তবে অনেক ভোটকেন্দ্রেই বিএনপির সমর্থকদের যেতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভোটের দিন কয়েকটি কেন্দ্রে বিএনপির সমর্থকদের ঢুকতে বাধা দিতেও দেখা গেছে। এর বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকেরা কেন্দ্রের সামনে শক্ত অবস্থান রাখতে পারেননি। ফলে তাঁরা নৌকার সমর্থকদের ভোটের কাছে হেরে গিয়েছেন।
তবে ভোট নিয়ে কারচুপিরও অভিযোগ এসেছে সামনে। রাজশাহী-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান এমপি এনামুল হক বলেছেন, ১২২টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪০ টিতে তার এজেন্টদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। সকাল থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত কেন্দ্রে কেন্দ্রে ২০-২১ শতাংশ ভোটার ভোট দেন। ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত কেন্দ্রে ভোটারই ছিল না। ৪টার পর ঘোষণা দেওয়া হয় ৫০-৫২ শতাংশ ভোট পড়েছে। এটি অনেক বেশি সন্দেহের। ‘মেকি গেম’ করে তাকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে।
রাজশাহী-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম রাব্বানী ও আয়েশা আখতার জাহান ডালিয়াও অভিযোগ তুলেছেন। বিভিন্ন কেন্দ্র দখলের বিষয়ে গোলাম রাব্বানী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সহধর্মিণী ডালিয়া ফল প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, যা দেখেছেন এবং শুনেছেন তা দলের সম্মানার্থে বলবেন না।
রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল কুমার সরকার বলেছেন, ‘কিছু কিছু জায়গায় ভোটকেন্দ্রে ‘গোলমাল’ হয়েছে। তা না হলে স্বতন্ত্ররা আরও বেশি ভোট পেতেন। কেউ কেউ জিতেও যেতেন। কিন্তু রাজশাহী-১, রাজশাহী-৪ ও রাজশাহী-৬ আসনে ‘গোলমাল’ হয়েছে। তারপরেও ভোট হয়েছে। যারা নৌকায় ভোট দেন, তাঁরা দিয়েছেন। প্রার্থীরা জিতেছেন।’
তবে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে দাবি রিটার্নিং কর্মকর্তা শামিম আহমেদের। ফল ঘোষণার সময় তিনি বলেছেন, ‘শান্তিপূর্ণ পরিবেশে রাজশাহীতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে।’
রাজশাহীর ৬টি সংসদীয় আসনের পাঁচটিতেই জয় পেয়েছেন নৌকার প্রার্থীরা। আর একটিতে নৌকা ডুবে গেছে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাঁচির আঘাতে। গতকাল রোববার রাতে ফল ঘোষণার পর ভোটের এই ফল নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। কেন কোন প্রার্থী জিতলেন, আবার কে কেন জিততে পারলেন না—তা নিয়ে নানা আলোচনা হচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। এতে উঠে আসছে নানা কার্য-কারণ।
আওয়ামী লীগের দলীয় নেতা–কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজশাহীর পাঁচ আসনেই আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীরা জিতেছেন নৌকা প্রতীক নিয়ে। আর রাজশাহী-২ (সদর) আসনে নৌকাডুবি হয়েছে নৌকার ভোট না পাওয়ার কারণে। নৌকার ভোট না পেয়ে এখানে পরাজিত হয়েছেন শরিক দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা।
রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে টানা চতুর্থবারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়েছেন নৌকার প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরী। তাঁর সঙ্গে লড়াই ভালোই জমিয়েছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম রাব্বানী। এখানে ওমর ফারুক ১ লাখ ৩ হাজার ৫৯২ ভোট পেয়েছেন। আর রাব্বানী পেয়েছেন ৯২ হাজার ৪১৯ ভোট। এখানে আওয়ামী লীগের আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি ৯ হাজার ৯টি আর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সহধর্মিণী আয়েশা আখতার জাহান ডালিয়া ২ হাজার ৭১৮ ভোট পেয়েছেন। মাহি ও ডালিয়া যে ভোট পেয়েছেন তা রাব্বানীর কাঁচি প্রতীকে পড়লে তিনি অনায়াসেই জয়ী হয়ে যেতেন।
এই এলাকার লোকজন বলছেন, এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে দলীয় নেতা–কর্মীর অনেক ক্ষোভ আছে। ডালিয়া, রাব্বানী আর মাহি ফারুকবিরোধী ভোটই পেয়েছেন। তাদের তিনজনের ভোট ফারুকের একা পাওয়া ভোটের বেশি। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী কম থাকলে ফারুক চৌধুরী নির্বাচিত না হয়ে অন্য কেউ হতে পারতেন। গ্রামের অনেক সাধারণ মানুষ শুধু নৌকা প্রতীক দেখে ভোট দেন বলে ফারুক চৌধুরী এবারও নির্বাচিত হয়েছেন।
রাজশাহী-২ (সদর) আসনে জোটের প্রার্থী হয়েও নৌকা ডুবিয়েছেন ফজলে হোসেন বাদশা। আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা মনে করছেন, পর পর তিনবার ফজলে হোসেন বাদশা নৌকা প্রতীকে এমপি হলেও এ দলের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেননি। উল্টো সুযোগ পেলেই আওয়ামী লীগের স্থানীয় এক শীর্ষ নেতা আর তাঁর পরিবার সম্পর্কে আপত্তিকর কথা বলেছেন। বাদশার এই মুখের কথাই তাঁর ভরাডুবি ঘটিয়েছে। কেননা, বেফাঁস মন্তব্যের কারণে স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবার বাদশাকে সমর্থন দেয়নি। তাঁরা ভোট দিয়েছে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুর রহমান বাদশাকে এবং বড় ব্যবধানে তিনিই নির্বাচিত হয়েছেন।
মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ প্রামাণিক দেবু অবশ্য মনে করেন না মুখের কথার কারণে তাঁদের প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশার ভরাডুবি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ওই সব কথাবার্তার পরে তো আমরা এক হয়েছিলাম। সিটি নির্বাচনে একসঙ্গে কাজ করে নৌকার প্রার্থীকে জিতিয়েছিলাম। কিন্তু এবার আমরা সিটি করপোরেশনের সাপোর্ট পাইনি। সিটি করপোরেশনের প্রায় সকল কাউন্সিলর এবার ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে নৌকার বিপক্ষে কাজ করেছেন। আমাদের পরাজয়ের এটিই কারণ। অন্য কোনো কারণ আপাতত দেখতে পাচ্ছি না।’
রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকায় একচেটিয়া ভোট পেয়েছেন নৌকার প্রার্থী আসাদুজ্জামান আসাদ। তিনি ছাড়া এ আসনের অন্য ৫ প্রার্থীই জামানত হারিয়েছেন। এখানে বিএনএমের ভাইস চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মতি প্রার্থী থাকলেও লড়াইয়ে আসতে পারেননি। মাত্র ৩ হাজার ৫২৩ ভোট পেয়েছেন তিনি। অথচ মন্টু জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক। বিএনপি থেকে এ আসনে নির্বাচন করার তার প্রস্তুতিও ছিল।
রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের প্রার্থী আবুল কালাম আজাদও বড় ব্যবধানে জিতেছেন নৌকার সমর্থকদের ভোটে। এ আসনে স্বতন্ত্র হিসেবে হেভিওয়েট প্রার্থী ছিলেন নৌকা নিয়ে পর পর তিনবার এমপি হওয়া এনামুল হক। কিন্তু যারা প্রতীক দেখে ভোট দেন, তাদের ভোট না পাওয়ার কারণে এনামুল কুলিয়ে উঠতে পারেননি। ভোটে তিনি মাত্র ৫৩ হাজার ৮১২ ভোট পেয়েছেন। আর নৌকার প্রার্থী পেয়েছেন ১ লাখ ৭ হাজার ৯৮৩ ভোট। এনামুলের পরাজয়ের অবশ্য আরেক কারণ তাঁর নারীঘটিত ব্যক্তিগত বিতর্ক। ভোটের প্রচারণার সময় আবুল কালাম আজাদ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করে দলের ভেতরেই সমর্থন হারাতে শুরু করলেও শুধু তৃণমূলের নৌকা সমর্থকদের ভোটে তিনি নির্বাচিত হয়েছেন।
রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল আওয়ামী লীগ। একটি অংশ ছিল নৌকার প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারার দিকে। অপর অংশ ছিল জেলা যুবলীগের সাবেক সহসভাপতি ওবায়দুর রহমানের পক্ষে। নির্বাচনে দারা ৮৬ হাজার ৯১৩ ভোট পেয়েছেন। আর ওবায়দুর পেয়েছেন ৮৩ হাজার ৮৬২ ভোট। মাত্র ৩ হাজার ৫১ ভোটে জিতেছেন নৌকার প্রার্থী। স্থানীয়রা মনে করছেন, যারা শুধু নৌকা প্রতীক দেখে ভোট দেন, তাদের ভোট না পেলে দারাও পরাজিত হতেন।
রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনে চতুর্থবারের মতো নৌকা নিয়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ১ হাজার ৫৯৯ ভোট। এখানে দলেরই স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হক পেয়েছেন ৭৪ হাজার ২৭৮ ভোট। এখানেও ‘নৌকা মার্কা’ দেখে ভোট দেওয়া মানুষের ভোট না পেলে শাহরিয়ার আলমেরও জয় পাওয়া কষ্টকর হতো বলে মনে করছেন অনেকে।
তবে এ আসনের পরাজিত প্রার্থী রাহেনুল হকের দাবি, শাহরিয়ার আলমের অগাধ টাকার কাছে তিনি হেরে গিয়েছেন।
রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপির সমর্থকদের ভোট পাওয়ার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। বিএনপি ভোট বর্জন করলেও দলটির সাধারণ সমর্থকেরা এসে নৌকা বাদে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতীকে যেন ভোট দেন সেই কৌশল নেওয়া হয়েছিল। তবে অনেক ভোটকেন্দ্রেই বিএনপির সমর্থকদের যেতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভোটের দিন কয়েকটি কেন্দ্রে বিএনপির সমর্থকদের ঢুকতে বাধা দিতেও দেখা গেছে। এর বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকেরা কেন্দ্রের সামনে শক্ত অবস্থান রাখতে পারেননি। ফলে তাঁরা নৌকার সমর্থকদের ভোটের কাছে হেরে গিয়েছেন।
তবে ভোট নিয়ে কারচুপিরও অভিযোগ এসেছে সামনে। রাজশাহী-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান এমপি এনামুল হক বলেছেন, ১২২টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪০ টিতে তার এজেন্টদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। সকাল থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত কেন্দ্রে কেন্দ্রে ২০-২১ শতাংশ ভোটার ভোট দেন। ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত কেন্দ্রে ভোটারই ছিল না। ৪টার পর ঘোষণা দেওয়া হয় ৫০-৫২ শতাংশ ভোট পড়েছে। এটি অনেক বেশি সন্দেহের। ‘মেকি গেম’ করে তাকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে।
রাজশাহী-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম রাব্বানী ও আয়েশা আখতার জাহান ডালিয়াও অভিযোগ তুলেছেন। বিভিন্ন কেন্দ্র দখলের বিষয়ে গোলাম রাব্বানী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সহধর্মিণী ডালিয়া ফল প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, যা দেখেছেন এবং শুনেছেন তা দলের সম্মানার্থে বলবেন না।
রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল কুমার সরকার বলেছেন, ‘কিছু কিছু জায়গায় ভোটকেন্দ্রে ‘গোলমাল’ হয়েছে। তা না হলে স্বতন্ত্ররা আরও বেশি ভোট পেতেন। কেউ কেউ জিতেও যেতেন। কিন্তু রাজশাহী-১, রাজশাহী-৪ ও রাজশাহী-৬ আসনে ‘গোলমাল’ হয়েছে। তারপরেও ভোট হয়েছে। যারা নৌকায় ভোট দেন, তাঁরা দিয়েছেন। প্রার্থীরা জিতেছেন।’
তবে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে দাবি রিটার্নিং কর্মকর্তা শামিম আহমেদের। ফল ঘোষণার সময় তিনি বলেছেন, ‘শান্তিপূর্ণ পরিবেশে রাজশাহীতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, ‘আপনারা ভালো কাজ করলে আমাদের সমর্থন পাবেন। জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে এক সেকেন্ডও সময় নেব না আপনাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে। দায়সারা কথা বলে ছাত্র-জনতার সঙ্গে প্রহসন করবেন না।
১৪ মিনিট আগেলক্ষ্মীপুরে একটি তাফসিরুল কোরআন মাহফিল ও ইসলামি সংগীত সন্ধ্যা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আজ শুক্রবার লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার মোহাম্মদিয়া জামে মসজিদ মাঠে এই আয়োজন করা হয়েছিল। মাহফিলে জামায়াত নেতাকে প্রধান অতিথি করায় বিএনপি সেটি বন্ধ করে দেয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
১ ঘণ্টা আগেবগুড়া সদরের নুনগোলা ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি আবু ছালেককে হত্যায় মামলায় গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ। আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় বগুড়া সদরের ঘোড়াধাপ বন্দর এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
১ ঘণ্টা আগেবিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, রাষ্ট্র ও সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে ছাত্ররা কথা বলছেন, তবে এটি একটি কমিটির মাধ্যমে সম্ভব নয়। এর জন্য সাংবিধানিক বা সংসদের প্রতিনিধি প্রয়োজন। পাশাপাশি, সবার আগে প্রয়োজন সুষ্ঠু নির্বাচন।
২ ঘণ্টা আগে