Ajker Patrika

মুখের কথাই ডুবিয়েছে বাদশার নৌকা, বলছেন আ.লীগের নেতা–কর্মীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
মুখের কথাই ডুবিয়েছে বাদশার নৌকা, বলছেন আ.লীগের নেতা–কর্মীরা

রাজশাহীর ৬টি সংসদীয় আসনের পাঁচটিতেই জয় পেয়েছেন নৌকার প্রার্থীরা। আর একটিতে নৌকা ডুবে গেছে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাঁচির আঘাতে। গতকাল রোববার রাতে ফল ঘোষণার পর ভোটের এই ফল নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। কেন কোন প্রার্থী জিতলেন, আবার কে কেন জিততে পারলেন না—তা নিয়ে নানা আলোচনা হচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। এতে উঠে আসছে নানা কার্য-কারণ। 

আওয়ামী লীগের দলীয় নেতা–কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজশাহীর পাঁচ আসনেই আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীরা জিতেছেন নৌকা প্রতীক নিয়ে। আর রাজশাহী-২ (সদর) আসনে নৌকাডুবি হয়েছে নৌকার ভোট না পাওয়ার কারণে। নৌকার ভোট না পেয়ে এখানে পরাজিত হয়েছেন শরিক দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। 

রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে টানা চতুর্থবারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়েছেন নৌকার প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরী। তাঁর সঙ্গে লড়াই ভালোই জমিয়েছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম রাব্বানী। এখানে ওমর ফারুক ১ লাখ ৩ হাজার ৫৯২ ভোট পেয়েছেন। আর রাব্বানী পেয়েছেন ৯২ হাজার ৪১৯ ভোট। এখানে আওয়ামী লীগের আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি ৯ হাজার ৯টি আর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সহধর্মিণী আয়েশা আখতার জাহান ডালিয়া ২ হাজার ৭১৮ ভোট পেয়েছেন। মাহি ও ডালিয়া যে ভোট পেয়েছেন তা রাব্বানীর কাঁচি প্রতীকে পড়লে তিনি অনায়াসেই জয়ী হয়ে যেতেন। 
 
এই এলাকার লোকজন বলছেন, এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে দলীয় নেতা–কর্মীর অনেক ক্ষোভ আছে। ডালিয়া, রাব্বানী আর মাহি ফারুকবিরোধী ভোটই পেয়েছেন। তাদের তিনজনের ভোট ফারুকের একা পাওয়া ভোটের বেশি। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী কম থাকলে ফারুক চৌধুরী নির্বাচিত না হয়ে অন্য কেউ হতে পারতেন। গ্রামের অনেক সাধারণ মানুষ শুধু নৌকা প্রতীক দেখে ভোট দেন বলে ফারুক চৌধুরী এবারও নির্বাচিত হয়েছেন। 

রাজশাহী-২ (সদর) আসনে জোটের প্রার্থী হয়েও নৌকা ডুবিয়েছেন ফজলে হোসেন বাদশা। আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা মনে করছেন, পর পর তিনবার ফজলে হোসেন বাদশা নৌকা প্রতীকে এমপি হলেও এ দলের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেননি। উল্টো সুযোগ পেলেই আওয়ামী লীগের স্থানীয় এক শীর্ষ নেতা আর তাঁর পরিবার সম্পর্কে আপত্তিকর কথা বলেছেন। বাদশার এই মুখের কথাই তাঁর ভরাডুবি ঘটিয়েছে। কেননা, বেফাঁস মন্তব্যের কারণে স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবার বাদশাকে সমর্থন দেয়নি। তাঁরা ভোট দিয়েছে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুর রহমান বাদশাকে এবং বড় ব্যবধানে তিনিই নির্বাচিত হয়েছেন। 

মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ প্রামাণিক দেবু অবশ্য মনে করেন না মুখের কথার কারণে তাঁদের প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশার ভরাডুবি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ওই সব কথাবার্তার পরে তো আমরা এক হয়েছিলাম। সিটি নির্বাচনে একসঙ্গে কাজ করে নৌকার প্রার্থীকে জিতিয়েছিলাম। কিন্তু এবার আমরা সিটি করপোরেশনের সাপোর্ট পাইনি। সিটি করপোরেশনের প্রায় সকল কাউন্সিলর এবার ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে নৌকার বিপক্ষে কাজ করেছেন। আমাদের পরাজয়ের এটিই কারণ। অন্য কোনো কারণ আপাতত দেখতে পাচ্ছি না।’ 

রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকায় একচেটিয়া ভোট পেয়েছেন নৌকার প্রার্থী আসাদুজ্জামান আসাদ। তিনি ছাড়া এ আসনের অন্য ৫ প্রার্থীই জামানত হারিয়েছেন। এখানে বিএনএমের ভাইস চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মতি প্রার্থী থাকলেও লড়াইয়ে আসতে পারেননি। মাত্র ৩ হাজার ৫২৩ ভোট পেয়েছেন তিনি। অথচ মন্টু জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক। বিএনপি থেকে এ আসনে নির্বাচন করার তার প্রস্তুতিও ছিল। 

রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের প্রার্থী আবুল কালাম আজাদও বড় ব্যবধানে জিতেছেন নৌকার সমর্থকদের ভোটে। এ আসনে স্বতন্ত্র হিসেবে হেভিওয়েট প্রার্থী ছিলেন নৌকা নিয়ে পর পর তিনবার এমপি হওয়া এনামুল হক। কিন্তু যারা প্রতীক দেখে ভোট দেন, তাদের ভোট না পাওয়ার কারণে এনামুল কুলিয়ে উঠতে পারেননি। ভোটে তিনি মাত্র ৫৩ হাজার ৮১২ ভোট পেয়েছেন। আর নৌকার প্রার্থী পেয়েছেন ১ লাখ ৭ হাজার ৯৮৩ ভোট। এনামুলের পরাজয়ের অবশ্য আরেক কারণ তাঁর নারীঘটিত ব্যক্তিগত বিতর্ক। ভোটের প্রচারণার সময় আবুল কালাম আজাদ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করে দলের ভেতরেই সমর্থন হারাতে শুরু করলেও শুধু তৃণমূলের নৌকা সমর্থকদের ভোটে তিনি নির্বাচিত হয়েছেন। 

রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল আওয়ামী লীগ। একটি অংশ ছিল নৌকার প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারার দিকে। অপর অংশ ছিল জেলা যুবলীগের সাবেক সহসভাপতি ওবায়দুর রহমানের পক্ষে। নির্বাচনে দারা ৮৬ হাজার ৯১৩ ভোট পেয়েছেন। আর ওবায়দুর পেয়েছেন ৮৩ হাজার ৮৬২ ভোট। মাত্র ৩ হাজার ৫১ ভোটে জিতেছেন নৌকার প্রার্থী। স্থানীয়রা মনে করছেন, যারা শুধু নৌকা প্রতীক দেখে ভোট দেন, তাদের ভোট না পেলে দারাও পরাজিত হতেন। 

রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনে চতুর্থবারের মতো নৌকা নিয়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ১ হাজার ৫৯৯ ভোট। এখানে দলেরই স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হক পেয়েছেন ৭৪ হাজার ২৭৮ ভোট। এখানেও ‘নৌকা মার্কা’ দেখে ভোট দেওয়া মানুষের ভোট না পেলে শাহরিয়ার আলমেরও জয় পাওয়া কষ্টকর হতো বলে মনে করছেন অনেকে। 

তবে এ আসনের পরাজিত প্রার্থী রাহেনুল হকের দাবি, শাহরিয়ার আলমের অগাধ টাকার কাছে তিনি হেরে গিয়েছেন। 

রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপির সমর্থকদের ভোট পাওয়ার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। বিএনপি ভোট বর্জন করলেও দলটির সাধারণ সমর্থকেরা এসে নৌকা বাদে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতীকে যেন ভোট দেন সেই কৌশল নেওয়া হয়েছিল। তবে অনেক ভোটকেন্দ্রেই বিএনপির সমর্থকদের যেতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভোটের দিন কয়েকটি কেন্দ্রে বিএনপির সমর্থকদের ঢুকতে বাধা দিতেও দেখা গেছে। এর বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকেরা কেন্দ্রের সামনে শক্ত অবস্থান রাখতে পারেননি। ফলে তাঁরা নৌকার সমর্থকদের ভোটের কাছে হেরে গিয়েছেন। 

তবে ভোট নিয়ে কারচুপিরও অভিযোগ এসেছে সামনে। রাজশাহী-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান এমপি এনামুল হক বলেছেন, ১২২টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪০ টিতে তার এজেন্টদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। সকাল থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত কেন্দ্রে কেন্দ্রে ২০-২১ শতাংশ ভোটার ভোট দেন। ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত কেন্দ্রে ভোটারই ছিল না। ৪টার পর ঘোষণা দেওয়া হয় ৫০-৫২ শতাংশ ভোট পড়েছে। এটি অনেক বেশি সন্দেহের। ‘মেকি গেম’ করে তাকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। 

রাজশাহী-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম রাব্বানী ও আয়েশা আখতার জাহান ডালিয়াও অভিযোগ তুলেছেন। বিভিন্ন কেন্দ্র দখলের বিষয়ে গোলাম রাব্বানী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সহধর্মিণী ডালিয়া ফল প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, যা দেখেছেন এবং শুনেছেন তা দলের সম্মানার্থে বলবেন না। 

রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল কুমার সরকার বলেছেন, ‘কিছু কিছু জায়গায় ভোটকেন্দ্রে ‘গোলমাল’ হয়েছে। তা না হলে স্বতন্ত্ররা আরও বেশি ভোট পেতেন। কেউ কেউ জিতেও যেতেন। কিন্তু রাজশাহী-১, রাজশাহী-৪ ও রাজশাহী-৬ আসনে ‘গোলমাল’ হয়েছে। তারপরেও ভোট হয়েছে। যারা নৌকায় ভোট দেন, তাঁরা দিয়েছেন। প্রার্থীরা জিতেছেন।’ 

তবে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে দাবি রিটার্নিং কর্মকর্তা শামিম আহমেদের। ফল ঘোষণার সময় তিনি বলেছেন, ‘শান্তিপূর্ণ পরিবেশে রাজশাহীতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ধলেশ্বরী নদীতে ফেরি থেকে ট্রাকসহ ৫ যান নদীতে, নিহত ৩

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
ফতুল্লায় ধলেশ্বরী নদীতে ফেরিতে থাকা একটি ট্রাক হঠাৎ চালু হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারালে ট্রাকসহ পাঁচটি যান নদীতে পড়ে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ফতুল্লায় ধলেশ্বরী নদীতে ফেরিতে থাকা একটি ট্রাক হঠাৎ চালু হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারালে ট্রাকসহ পাঁচটি যান নদীতে পড়ে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লায় ধলেশ্বরী নদীতে ফেরিতে থাকা একটি ট্রাক হঠাৎ চালু হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারালে ট্রাকসহ পাঁচটি যান নদীতে পড়ে যায়। এই ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে সদর উপজেলার বক্তাবলী ও নরসিংপুর ঘাটের মাঝামাঝি এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

পুলিশ জানায়, নরসিংপুর ঘাট থেকে ছেড়ে আসা একটি ফেরি বক্তাবলী ঘাটের দিকে যাচ্ছিল। ফেরিটি মাঝনদীতে পৌঁছালে এতে থাকা একটি ট্রাক হঠাৎ স্টার্ট হয়ে যায়। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকটি সামনে থাকা দুটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, একটি মোটরসাইকেল ও একটি রিকশাভ্যানকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে ফেরির রেলিং ভেঙে ট্রাকসহ পাঁচটি যান নদীতে পড়ে যায়।

দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী রফিক গুরুতর আহত হন। পরে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

এদিকে রিকশাভ্যানচালক স্বাধীন (২৫) ও মাসুদ নামের দুজন দুর্ঘটনার পর নিখোঁজ হন। খবর পেয়ে রাতেই নৌ পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার অভিযান শুরু করে। পরে ঘটনাস্থল থেকে স্বাধীন ও মাসুদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

দুর্ঘটনার পর ফেরির কয়েকজন যাত্রী ও চালক সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হন।

বক্তাবলী নৌ পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক রকিবুজ্জামান বলেন, ‘ফেরিতে থাকা ট্রাকটি হঠাৎ নিজে থেকেই স্টার্ট হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারায়। এতে ফেরির রেলিং ভেঙে যানবাহনগুলো নদীতে পড়ে যায়। এই ঘটনায় একজন হাসপাতালে মারা গেছেন এবং পরে আরও দুজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘অপারেশন জিরো টলারেন্স ফর ফ্যাসিজম’ কর্মসূচি ঘোষণা রাকসুর জিএস আম্মারের

রাবি প্রতিনিধি  
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাহউদ্দিন আম্মার। ছবি: সংগৃহীত
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাহউদ্দিন আম্মার। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) আওয়ামীপন্থী ডিনদের পদত্যাগ ও ফ্যাসিজমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের অপসারণের দাবিতে ‘অপারেশন জিরো টলারেন্স ফর ফ্যাসিজম’ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাহউদ্দিন আম্মার। গতকাল শনিবার (২০ ডিসেম্বর) রাতে সালাহউদ্দিন আম্মার তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টের মাধ্যমে এই ঘোষণা দেন।

পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আগামীকাল সকাল ১০টায় রাকসু ভবনের সামনে থেকে কর্মসূচি শুরু হবে। আওয়ামীপন্থী ছয়জন ডিনের পদত্যাগ নিশ্চিত করা হবে। রাবি প্রশাসন দেড় বছর সময় পেয়েছে, এখন সময় বিপ্লবীদের।’ তিনি লেখেন, ‘শহীদ হাদির রক্ত আরো একবার শেখালো লীগের প্রতি নমনীয়তা আমাদের জন্য কতটা বিভৎস হতে পারে।’ আগামীকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সকাল ১০টায় রাকসু ভবনের সামনে উপস্থিত থাকার জন্যও অনুরোধ করেন তিনি

এ ছাড়া ফ্যাসিবাদের সঙ্গে জড়িত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চিহ্নিত করতে সাধারণ মানুষের সহযোগিতা কামনা করেন রাকসু জিএস। অভিযুক্তদের নাম, কর্মস্থল, বর্তমান পদবি, ঠিকানা এবং ফ্যাসিজমের সঙ্গে যুক্ত থাকার প্রমাণাদি সরাসরি তার ফেসবুক ইনবক্স অথবা নির্দিষ্ট একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে পাঠানোর অনুরোধ জানান তিনি।

আম্মারের দেওয়া ফেসবুক পোস্ট। ছবি: সংগৃহীত
আম্মারের দেওয়া ফেসবুক পোস্ট। ছবি: সংগৃহীত

এর আগে বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) এক পোস্টে তিনি আওয়ামীপন্থী ডিনদের পদত্যাগে এক কর্মদিবসের আলটিমেটাম দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাসন রাজার ১৭১তম জন্মদিন আজ

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩২
হাসন রাজা। ফাইল ছবি
হাসন রাজা। ফাইল ছবি

মরমি কবি হাসন রাজার ১৭১তম জন্মদিন আজ। আধ্যাত্মিক এই সাধকের জন্ম ১৮৫৪ সালের ২১ ডিসেম্বর। তিনি সুনামগঞ্জ শহরের সন্নিকটে সুরমা নদীর তীরবর্তী লক্ষণছিরি (লক্ষণশ্রী) পরগনার তেঘরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

প্রতাপশালী জমিদার দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরী ও হুরমত জাহানের দ্বিতীয় ছেলে তিনি। জন্মের পর তাঁর নাম দেওয়া হয়েছিল অহিদুর রাজা। এক ফারসি ভাষাভিজ্ঞ ব্যক্তির পরামর্শে তাঁর নাম হয় হাসন রাজা। দেখতে সুদর্শন হাসন জমিদার পরিবারের সন্তান হওয়ায় অল্প বয়সেই জমিদারির দায়িত্ব নেন। সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, রামপাশা, লক্ষণশ্রীসহ সিলেটের একাংশজুড়ে তাঁর জমিদারি ছিল।

হাসন কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ না করলেও ছিলেন স্বশিক্ষিত। সরল ভাষায় সহস্রাধিক মরমি গান রচনা করেছেন হাসন। তিনি গানের মাধ্যমে অগণিত মানুষের হৃদয় জয় করে নিয়েছেন।

তাঁর উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে আছে- ‘লোকে বলে বলেরে, ঘর বাড়ি ভালা নাই আমার’; ‘নেশা লাগিলরে, বাঁকা দুই নয়নে নেশা লাগিলরে’; ‘গুড্ডি উড়াইলো মোরে, মৌলার হাতের ডুরি’; ‘আঁখি মুঞ্জিয়া দেখ রূপ রে, আঁখি মুঞ্জিয়া দেখ রূপ রে’; ‘আমি যাইমুরে যাইমু, আল্লার সঙ্গে।’

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও হাসন রাজা রচিত গানের প্রশংসা করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাধিকবার তাঁর বক্তব্যে হাসন রাজার গানের অংশবিশেষ উদ্ধৃত করে হাসনের দর্শনচিন্তার কথা তুলে ধরেন। হাসন রাজার সৃষ্টিকর্ম আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও সমাদৃত।

বহু গানের রচয়িতা আধ্যাত্মিক সাধক হাসন রাজা ১৯২২ সালের ৬ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। হাসনের জন্মভিটায় প্রতিষ্ঠিত ‘হাসন রাজা মিউজিয়াম’ একটি পূর্ণাঙ্গ জাদুঘরে রূপান্তরের দাবি জানিয়েছেন তাঁর ভক্ত ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাগেরহাটের চিতলমারী: অবৈধ বালু উত্তোলনে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট

  • মধুমতী নদী থেকে বালু উত্তোলন
  • ঝুঁকিতে চিতলমারীর একাধিক গ্রাম
  • অভিযোগ স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে
বাগেরহাট ও চিতলমারী প্রতিনিধি
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ০২
ড্রেজার মেশিন দিয়ে মধুমতী নদী থেকে প্রতিদিন উত্তোলন করা হচ্ছে হাজার হাজার ফুট বালু। প্রতিকার চেয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট একাধিক সরকারি দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় পরিবেশবাদীরা। সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ড্রেজার মেশিন দিয়ে মধুমতী নদী থেকে প্রতিদিন উত্তোলন করা হচ্ছে হাজার হাজার ফুট বালু। প্রতিকার চেয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট একাধিক সরকারি দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় পরিবেশবাদীরা। সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাগেরহাটের চিতলমারীতে মধুমতী নদী থেকে অবৈধভাবে বিপুল বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ড্রেজার মেশিন দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার ফুট বালু উত্তোলন করায় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট।

অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে ভূমি মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় পরিবেশবাদীরা। সংশ্লিষ্ট হওয়ায় বাগেরহাট, পিরোজপুর ও গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসকের দপ্তরেও অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

বালুমহাল ইজারায় একটি নির্দিষ্ট সীমানা বা এলাকা নির্ধারণ করা থাকে। নাজিরপুর উপজেলার বালুমহালের বা বালু উত্তোলনের সীমানা ২৪ দশমিক ২১ একর। কিন্তু চিতলমারীর অতুলনগর, কুনিয়া ও শৈলদাহ গ্রামসংলগ্ন মধুমতী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হচ্ছে। এই কাজে যুক্ত পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার মাটিভাঙ্গা ও বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার শৈলদাহ এলাকার প্রভাবশালী কয়েক ব্যক্তি।

অভিযুক্ত ব্যক্তিদের একজন কলাতলা ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি মো. কামাল শেখ ওরফে কামাল মেম্বার। মূল ইজারাদারের কাছ থেকে কয়েকজনকে নিয়ে এই কাজ নিয়েছেন তিনি। তবে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের সীমানা থেকে বালু উত্তোলন করছি।’ যাঁর নামে সরকারি ইজারা আনা হয়েছে, তাঁর নাম অবশ্য জানাতে পারেননি কামাল মেম্বার। তিনি দাবি করেন, ওই ব্যক্তির নাম তাঁর মনে নেই।

চিতলমারীর শৈলদাহ এলাকার মো. ফরিদ শেখ, বিপুল বৈদ্য, আল-আমিন খান ও তুহিন শেখ জানান, কলাতলা ইউনিয়নের মধুমতী নদীর অতুলনগর, কুনিয়া ও শৈলদাহ এলাকায় ৩-৪টি বলগেট ও ড্রেজার মেশিন দিয়ে প্রতিদিন শতাধিক ট্রলার বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে ফসলি জমি, গাছপালা ও রাস্তাঘাট নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সংকীর্ণ হয়ে পড়ছে উপজেলার মানচিত্র। হুমকির মুখে পড়েছে কয়েক শ একর জমি ও বসতবাড়ি। এ ছাড়া প্রায় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মাটিভাঙ্গা সেতুও এখন ঝুঁকির মুখে।

পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন চিতলমারী উপজেলার প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট ফজলুল হক বলেন, এভাবে বালু উত্তোলনে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। উপজেলার মানচিত্র ছোট হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট একাধিক সরকারি দপ্তরে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

চিতলমারীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘পিরোজপুর থেকে ওরা বালুমহাল ইজারা নিয়েছে। রাতের আঁধারে এসে চিতলমারীর সীমানা থেকে বালু উত্তোলন করে। আমরা বেশ কয়েকবার অভিযানে গিয়েছি। কিন্তু অভিযানের খবর শুনে ওরা আগে থেকেই চলে যায়। পিরোজপুরের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে, ওরা যাতে সীমানায় না আসে সে জন্য কাজ করছি। অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন “জিরো টলারেন্স” নীতিতে কাজ করছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত