ছোটবেলা থেকেই সাহসী ফাহমিন প্রকৌশলী হতে চেয়েছিলেন, গুলিতে ঝাঁজরা হলো তাঁর দেহ 

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
প্রকাশ : ০২ আগস্ট ২০২৪, ১৭: ৫১
আপডেট : ০২ আগস্ট ২০২৪, ১৯: ০১

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ শুরু হলে শেখ ফাহমিন জাফর তাঁর বাবাকে ফোন করে বলেছিলেন, কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা হবে না। তিনি বাড়ি ফিরছেন। বাবা আবু জাফরের সঙ্গে ১৮ জুলাই এটিই ছিল টঙ্গী সরকারি কলেজের ছাত্র ফাহমিন জাফরের শেষ কথা। 

তাঁর বাবা আবু জাফর বলেন, ‘এটাই শেষবারের মতো আমার ছেলের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল। কিন্তু তখন আমি কখনোই ভাবিনি, এটাই শেষ কথা। ফাহমিনের বাড়ি ফিরে আসাটা যে এমন হবে, তা-ও ভাবতে পারিনি।’ 

রাজশাহী নগরীর রামচন্দ্রপুর মহল্লায় ভাড়া বাড়িতে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে ফাহমিনের বাবা এসব কথা বলেন। রাজশাহীতে একটি বিমা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আবু জাফরের গ্রামের বাড়ি নওগাঁর আত্রাই উপজেলার তারাটিয়ায়। 

গত বছর রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন ফাহমিদ। ছোটবেলা থেকে প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন দেখা ফাহমিদ ভর্তি হন টঙ্গী সরকারি কলেজে। গত ১৮ জুলাই উত্তরায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় নিহত হন ফাহমিন। 

তাঁর বাবা আবু জাফর দুঃখ করে বলেন, ‘আমার তিন ছেলের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ফাহমিন শৈশব থেকেই প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন দেখত। কিন্তু পুলিশের গুলিতে আমার ছেলের মৃত্যুতে আমাদের আশা ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে।’ তিনি বলতে থাকেন, ‘ফাহমিন ছোটবেলা থেকেই সৎ ও সাহসী ছিল। সে পরিবারের মধ্যেও কোনো ধরনের অন্যায়ের সঙ্গে কখনো আপস করেনি।’ 

আবু জাফর বলেন, ‘আমার কিছু বলার নেই। একটা দাবি আছে যে আমার ছেলে হত্যার বিচার নিশ্চিত করতে হবে। আমি চাই আর কোনো বাবা-মায়ের সন্তান যেন এভাবে প্রাণ না হারায়।’ 

ফাহমিনের ভাই শেখ ফারদিন জাফর রাজশাহী শহরে বাবার সঙ্গে থাকেন। উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি জানান, ফাহমিনের মোবাইল ফোন থেকে ১৮ জুলাই একজন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর ভাইয়ের দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং তাঁকে উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। 

ফারদিন বলেন, ‘যিনি ফোন করেছিলেন, তিনি তখন কিছু বলেননি যে আমার ভাই আগেই মারা গেছে। আমি ফাহমিনের সঙ্গে ঢাকায় বসবাসকারী আমার চাচা ও মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করি কিছু কাপড়চোপড় নিয়ে উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে যাওয়ার জন্য। তাঁরা গেলে বিকেল ৪টার দিকে জানতে পারি, আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে।’ 

ফাহমিন জাফরের বাবা আবু জাফরফারদিন জানান, তাঁর ভাইয়ের সারা শরীরে আড়াই শতাধিক ছররা গুলির চিহ্ন এবং মাথায় বেশ কয়েকটি রাবার বুলেটের চিহ্ন ছিল। 

ফারদিন বলেন, ‘ফাহমিন আমার কাছে ভাইয়ের চেয়েও বেশি ছিল। সে আমার ভালো বন্ধুও ছিল। একসঙ্গে গোসল করতাম, খেতাম, ঘুমাতাম। তাকে হত্যার পর আমি রাতে ঘুমাতে পারি না। প্রচণ্ড মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এ জন্য ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ খাচ্ছি।’ 

ফারদিন আরও বলেন, ‘ফাহমিনের অনেক প্রতিভা ছিল। সে এই বয়সে অনেক কবিতা লিখেছে। ছোটবেলায় বাড়িতে বসে রিমোট কন্ট্রোল গাড়ি খুলে আবার জোড়া লাগাত। তার ইচ্ছা ছিল, বুয়েটে পড়ে প্রকৌশলী হবে। আমাদের সবার স্বপ্ন পুলিশের হাতেই শেষ হয়ে গেল।’ 

পরিবারের সদস্যরা ১৯ জুলাই ফাহমিনকে তাঁদের নিজ গ্রাম নওগাঁর আত্রাই উপজেলার তারাটিয়ায় গ্রামের বাড়িতে দাফন করেন। ফাহমিনের বড় ভাই একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে পরিবারকে সহযোগিতার জন্য একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

শেখ হাসিনাকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে এম সাখাওয়াতের বিস্ফোরক মন্তব্য, কী বলেছেন এই উপদেষ্টা

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু, আহত ৩

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত