‘কি খায়া বাঁচমু, হামার বোরা ধানও ডুবি গেছে’

সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২২, ১৬: ৩৯

অসময়ে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধিতে বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দিতে ব্যাপক ফসলহানি হয়েছে। বিগত কয়েক দিন থেকেই বিপাকে কৃষকেরা। নদীর পানি বৃদ্ধিতে উপজেলার ১২২টি চরের নিম্নাঞ্চল ডুবে গেছে পানিতে।

রোববার সকালে সারিয়াকান্দি উপজেলার কাজলা ইউনিয়নের চরঘাগুয়া ও বেণিপুর চরে গিয়ে দেখা যায়—চরে কয়েক শ কৃষক-কৃষাণী ও দিনমজুর পানিতে কাজ করছেন। কেউ পানিতে ডুব দিয়ে অপরিপক্ব স্থানীয় জাতের কালো এবং সাদা বোরোধান কাটছেন, আবার কেউ অপরিপক্ব পেঁয়াজ তুলছেন, আবার কেউ তুলছেন অপরিপক্ব বাদাম। এসব অপরিপক্ব ফসল আবার শুকাতে দেওয়া হচ্ছে উঁচু চরে। 

চরঘাগুয়ার কৃষক আব্দুল কুদ্দুস জানান, বেণিপুর চরে তিনি ১৫ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করেছিলেন। এতে তাঁর খরচ হয়েছিল ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। বৃহস্পতিবার সকালে জমিতে এসে দেখেন, পানি প্রায় জমির কাছাকাছি চলে এসেছে। এ জন্য শুক্রবার তিনি পেঁয়াজ তোলার জন্য ৪০ জন দিনমজুর ঠিক করেন। পরদিন শনিবার জমিতে এসে দেখেন প্রায় সব পেঁয়াজই পানিতে তলিয়ে গেছে। কোনোমতে তিনি তাঁর মোট জমির ৩ ভাগের ২ ভাগ পেঁয়াজ তুলতে সক্ষম হন। রোববারও তিনি ৭ জন দিনমজুর ঠিক করেন।

আব্দুল কদ্দুস বলেন, ‘হামাগিরে বেণিপুর চরত প্রায় ৪৫ জন কিষক প্রায় ৫০০ বিঘা জমিত পিঁয়াজ করছিলেম। এর ৩ ভাগের ২ ভাগ হামরা কোনমুতে বাঁচাবের পালেম। আর সব পিঁয়াজ পানিতে তলি গেছে। এহনো প্রায় ৬শ গরিব মানুষ পানিত ডুবি ডুবি পিঁয়াজ তুলবের নাইগছে। ফসলের এল্লে ক্ষতি হামরা ক্যাংকা করে সহ্য করমু। কি খায়া বাঁচমু, হামার বোরা ধানও ডুবি গেছে।’

ডুবে যাওয়া জমি থেকে তোলা হচ্ছে অপরিপক্ব পেঁয়াজচালুয়াবাড়ী ইউনিয়নের কৃষক দুলাল শেখ জানান, তিনি তাঁর ৭ বিঘা জমিতে বোরোধান লাগিয়েছিলেন। তাঁর সব বোরোধানই পানিতে ডুবে গেছে। 

সারিয়াকান্দি কৃষি অফিসের জানিয়েছে, অসময়ে পানি বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে স্থানীয় জাতের কালো ও সাদা বোরোধানের। এ বছর উপজেলায় সর্বমোট ৬৫০ হেক্টর স্থানীয় জাতের কালো ও সাদা বোরোধানের আবাদ হয়েছিল। এর মধ্যে ২৫০ হেক্টর জমির ধান আগেই কর্তন করা হয়েছিল। পানি বৃদ্ধির কারণে পুরো উপজেলার প্রায় ৭০ হেক্টর কালো ও সাদা বোরোধান পানিতে তলিয়ে গেছে। এ বছর উপজেলায় ১৬৬০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছিল। এখন পর্যন্ত কত হেক্টর জমির পিঁয়াজ পানি দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে তা এখনো জানা যায়নি। তবে এর হিসাব চলমান রয়েছে। চিনাবাদামের ক্ষতির হিসাবও চলমান রয়েছে। 

সারিয়াকান্দির দায়িত্বে থাকা গেজ রিডার পরশুরাম জানিয়েছেন, গত শুক্রবার যমুনা নদীর পানির উচ্চতা ছিল ১১.২০ সেন্টিমিটার। শনিবার পানির উচ্চতা ছিল ১২.০০ সেন্টিমিটার। রোববার সকালে পানির উচ্চতা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২.৬০ সেন্টিমিটার। তবে যমুনা নদীর পানি এখনো বিপদসীমার ৩৯০ সেন্টিমিটারের নিচে রয়েছে। 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী গোলাম মোহাম্মদ তাসকিয়া জানান, যমুনায় পানি আরও ৩ / ৪ দিন বাড়তে পারে। এরপর পানি পুনরায় কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এত আগেই বন্যা হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। 

সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল হালিম জানিয়েছেন, যমুনায় অসময়ে পানি বৃদ্ধিতে স্থানীয় জাতের কালো ও সাদা বোরোধানের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। কৃষকদের সহায়তা করতে আমাদের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ যমুনার চরগুলোতে রয়েছেন। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত