হাসান পলাশ (রাজশাহী, পবা প্রতিনিধি)
বড়গাছি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র অন্যান্য ইউনিয়ন থেকে আলাদা। স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে বড়গাছি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র এখন এলাকাবাসীর একটি আস্থার প্রতিষ্ঠান। এই ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে মানুষ সহজেই চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে এবং তারা এতে সন্তুষ্ট। এলজিএসপি-৩ প্রকল্পের একটি উন্নয়নমূলক কাজই পুরো ইউনিয়নের স্বাস্থ্য সেবার চেহারা পাল্টে দিয়েছে। এই প্রকল্পের ব্যয়িত অর্থের পরিমাণ মাত্র ২০ লাখ টাকা। কিন্তু এই টাকার পরিকল্পিত ও সদ্ব্যবহারের ফলে টেকসই উন্নয়নে নতুন একটি ধারণার সৃষ্টি করেছে। এই সব ছোট ছোট প্রকল্পগুলো মানুষের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
বড়গাছি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে সেবা গ্রহণকারী মথুরা গ্রামের দিশা খাতুন বলেন, ‘পবা উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র গ্রামীণ জনপথের হত দরিদ্র ও অসহায় মানুষের স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রত্যন্ত গ্রামীণ জনপথে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিয়ে নিম্নআয়ের মানুষের জীবনে এনে দিয়েছে স্বস্তি। এখান থেকে যেকোনো ধরনের সাধারণ রোগের চিকিৎসা আমরা পাচ্ছি। কিছুদিন আগেও ছোটখাটো রোগের চিকিৎসা নিতে ২৫ কিলোমিটার দূরে শহরে যেতে হতো। যা এখন আর লাগে না। এর ফলে বদলে গেছে স্বাস্থ্যসেবার মান।’
অপর একজন সেবা গ্রহণকারী অন্তঃসত্ত্বা মাধবপুর গ্রামের নিলা খাতুন। তিনি বলেন, ‘এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি থাকায় নিয়মিত স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পাচ্ছি আমরা। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসকেরা বেশ কয়েক ধরনের ওষুধ বিনা মূল্যে দিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ৩০টি আয়রন ট্যাবলেট, ৩০টি ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স ট্যাবলেট ও ৩০টি ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট।’
নিলা খাতুন আরও বলেন, ‘আমার স্বামী দিনমজুর। সংসারে অর্থ কষ্ট রয়েছে। সন্তান প্রসব নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। বিনা মূল্যে ওষুধ ও স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পেয়ে বর্তমানে অনেকটা চিন্তা মুক্ত হয়েছি।’
পবার বড়গাছি ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য সূত্রে জানা গেছে, লোকাল গভর্ন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্ট (এলজিএসপি-৩) প্রকল্পের অর্থায়নে ও বড়গাছি ইউনিয়ন পরিষদ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতের আওতায় ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে বড়গাছি ইউনিয়নে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়েছে। ১২৯৫ বর্গফুট বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কেন্দ্রে মোট কক্ষ সংখ্যা পাঁচটি এবং টয়লেট তিনটি। পাঁচটি কক্ষের মধ্যে দুইটি ডাক্তারদের জন্য একটি ফার্মাসিস্ট, একটি গর্ভবতী মায়ের ডেলিভারি কক্ষ এবং একটি কক্ষ আগত রোগীদের ওয়েটিং রুম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণের পর একজন এমবিবিএস চিকিৎসক প্রতিদিন হাসপাতালে বসেন এবং রোগী দেখেন। এখানে জ্বর, সর্দি-কাশি, ডায়রিয়া ও মেয়েদের গর্ভকালীন সময়ে অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে বিনা মূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধ প্রদানের পাশাপাশি জটিল রোগের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। এই ইউনিয়ন ছাড়াও পার্শ্ববর্তী জয়নগর ইউনিয়নের জনগণও স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি থেকে সেবা গ্রহণ করতে আসেন। ফলে গ্রামীণ জনগণের স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।
রাজশাহী জেলা স্থানীয় সরকার শাখার তথ্য মতে—এলজিএসপি-৩ প্রকল্পটির আওতায় জেলায় ৭২টি ইউনিয়ন ও ১ হাজার ৯১৪টি গ্ৰাম নিয়ে কাজ করছে। ২০১৭ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ছয় বছরে এলজিএসপি-৩ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৪ কোটি ৬৭ লাখ ৩৭ হাজার ১২৩ টাকা। এরই মধ্যে জেলায় প্রায় ৭৪ কোটি ১১ লাখ ৩১ হাজার ২৭৬ টাকার কাজ বাস্তবায়িত হয়েছে। বাস্তবায়িত মোট প্রকল্পের সংখ্যা ৪ হাজার ৪৩৭টি। এর মধ্যে যোগাযোগ খাতে ১৭৮৬টি, পানি সরবরাহ খাতে ৫৪০টি, স্বাস্থ্য খাতে ২০৩টি, শিক্ষা খাতে ৪৭৬টি, প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা খাতে ২৪১টি, কৃষিও বাজার খাতে ৩৬টি, পয়োনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খাতে ৫০৯টি, মানবসম্পদ উন্নয়ন খাতে ১১৪টি কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। এই প্রকল্পের অগ্রগতি শতভাগ নিশ্চিত করা হয়েছে।
বড়গাছি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহাদাৎ হোসাইন সাগর জানান, এলজিএসপি-৩ প্রকল্পের অর্থায়নে ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়। এর আগে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র থাকলেও ভবন না থাকার কারণে এখানে কোনো চিকিৎসক নিয়মিত রোগী দেখার সুযোগ ছিল না। ফলে জ্বর, সর্দি-কাশি, ডায়রিয়া ও মেয়েদের গর্ভকালীন সময়ে অসুস্থ হলে ২৫ কিলোমিটার দূরে রাজশাহী শহরে আসতে হতো। স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির ভবন নির্মাণ হওয়ায় এলাকার জনগণকে বিনা মূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এর ফলে ইউনিয়নবাসীর চিকিৎসা সেবার দুর্ভোগের অবসান হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বড়গাছি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ সেবা গ্রহণ করছেন। সেবা গ্রহীতারা জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য খাতে গ্ৰামীন জনগণের দোরগোড়ায় চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে বড়গাছি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র নির্মাণ একটি যুগান্তকারী উন্নয়নমুখী প্রকল্প।
বড়গাছি ইউনিয়নের কালুপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ভ্যানচালক জব্বার মিয়া বলেন, ‘সকাল থেকে শরীরটা জ্বর-জ্বর লাগছে। জ্বর মাথায় করেও পেটের দায়ে ভ্যান চালাতে হচ্ছে। এখন জ্বরটা একটু বেশি বেশি লাগছে। তাই বিনা পয়সায় স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র থায়কা ওষুধ নিলাম।’
বড়গাছি বাজারের পাশে রুবেলের বাড়ি। তার পা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে চিকিৎসার নিতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘বড়গাছি স্কুল মাঠে ফুটবল খেলতে গিয়ে পায়ে আঘাত পেয়েছি। তাই চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসেছি। ডাক্তার ক্ষত স্থানে ওষুধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিল এবং ফ্রিতে ওষুধ দিয়ে দিল।’
বড়গাছি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রর মেডিকেল অফিসার ডা. সাদিয়া ইসলাম জানান, এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নারী ও শিশু রোগীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি। প্রতিদিন দেড় শতাধিক রোগীর চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকি। এসব রোগীরা মূলত গর্ভবর্তী মায়ের স্বাস্থ্যসেবা, শিশু স্বাস্থ্য ও সাধারণ স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসেন। বিনা মূল্যে ৩০ প্রকার ওষুধ বিতরণের পাশাপাশি স্বাস্থ্য, পরিবার-পরিকল্পনা ও পুষ্টি বিষয়ক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণকারীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে।
পবা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রাবেয়া বসরী জানান, গ্রামীণ জনপথের দরিদ্র ও সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় মানসসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে কমিউনিটি হেলথ কেয়ারের পাশাপাশি স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো কাজ করছে। মাতৃত্বকালীন ৫টি বিপদের আশঙ্কা, গর্ভবর্তী মায়ের স্বাস্থ্যসেবা, প্রসূতি মায়ের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা এবং মা ও শিশুর শারীরিক যত্নসহ স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন সুবিধা পাচ্ছে গ্রামীণ জনপথের নারীরা। তবে বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধ পেয়ে সাধারণ মানুষ খুব খুশি।
রাজশাহী জেলা স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক শাহানা আখতার জাহান বলেন, ‘এলজিএসপি-৩ প্রকল্পটি জেলায় ৭২টি ইউনিয়ন ও ১ হাজার ৯১৪টি গ্ৰাম নিয়ে কাজ করছে। এই প্রকল্পের আওতায় জেলায় স্বাস্থ্য খাতে ২০৩টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম বড়গাছি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রকল্প। বর্তমান সরকার স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে। গত ১০ বছরে সারা দেশে স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। এরই অংশ হিসেবে সরকারের এলজিএসপি-৩ প্রকল্পের আওতায় বড়গাছি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে।’
শাহানা আখতার জাহান আরও জানান, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষ্যে ‘সর্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা’ নিশ্চিত করতে হলে প্রয়োজন স্বাস্থ্য খাতকে শক্তিশালী করা, বাজেটে যথাযথ বরাদ্দ দেওয়া এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। এই কাজটি সরকার এলজিএসপির-৩ প্রকল্পের মাধ্যমে করছেন। তাই এই প্রকল্পের সুফল বড়গাছি ইউনিয়নের হতদরিদ্র মানুষ পাচ্ছেন।
এলজিএসপির-৩ প্রকল্পের জেলা সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, ‘প্রকল্পটি শুরু থেকেই হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর উপকারে আসে এবং সরকারের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। নারীর ক্ষমতায়নসহ পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদকে কার্যকর করতে এলজিএসপি-৩ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিভিন্ন উপজেলায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি উন্নয়ন ও দারিদ্র্য দূরীকরণে নানা প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় পবা উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়ন পরিষদের স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
আব্দুল জলিল আরও জানান, বর্তমান সরকারের স্বাস্থ্য খাতে অন্যতম পদক্ষেপ হলো কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন। ১৯৯৬ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় এসে এই কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পটি শেখ হাসিনা সরকার গ্রহণ করেন এবং প্রায় দশ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেছিলেন। এর অংশ হিসেবে এলজিএসপি-৩ প্রকল্পের আওতায় কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা হতদরিদ্র মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে বিভিন্ন ইউনিয়নে স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। বড়গাছি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র সরকারের চিকিৎসাবান্ধব কর্মসূচির সফল বাস্তবায়ন।
বড়গাছি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র অন্যান্য ইউনিয়ন থেকে আলাদা। স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে বড়গাছি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র এখন এলাকাবাসীর একটি আস্থার প্রতিষ্ঠান। এই ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে মানুষ সহজেই চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে এবং তারা এতে সন্তুষ্ট। এলজিএসপি-৩ প্রকল্পের একটি উন্নয়নমূলক কাজই পুরো ইউনিয়নের স্বাস্থ্য সেবার চেহারা পাল্টে দিয়েছে। এই প্রকল্পের ব্যয়িত অর্থের পরিমাণ মাত্র ২০ লাখ টাকা। কিন্তু এই টাকার পরিকল্পিত ও সদ্ব্যবহারের ফলে টেকসই উন্নয়নে নতুন একটি ধারণার সৃষ্টি করেছে। এই সব ছোট ছোট প্রকল্পগুলো মানুষের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
বড়গাছি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে সেবা গ্রহণকারী মথুরা গ্রামের দিশা খাতুন বলেন, ‘পবা উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র গ্রামীণ জনপথের হত দরিদ্র ও অসহায় মানুষের স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রত্যন্ত গ্রামীণ জনপথে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিয়ে নিম্নআয়ের মানুষের জীবনে এনে দিয়েছে স্বস্তি। এখান থেকে যেকোনো ধরনের সাধারণ রোগের চিকিৎসা আমরা পাচ্ছি। কিছুদিন আগেও ছোটখাটো রোগের চিকিৎসা নিতে ২৫ কিলোমিটার দূরে শহরে যেতে হতো। যা এখন আর লাগে না। এর ফলে বদলে গেছে স্বাস্থ্যসেবার মান।’
অপর একজন সেবা গ্রহণকারী অন্তঃসত্ত্বা মাধবপুর গ্রামের নিলা খাতুন। তিনি বলেন, ‘এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি থাকায় নিয়মিত স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পাচ্ছি আমরা। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসকেরা বেশ কয়েক ধরনের ওষুধ বিনা মূল্যে দিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ৩০টি আয়রন ট্যাবলেট, ৩০টি ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স ট্যাবলেট ও ৩০টি ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট।’
নিলা খাতুন আরও বলেন, ‘আমার স্বামী দিনমজুর। সংসারে অর্থ কষ্ট রয়েছে। সন্তান প্রসব নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। বিনা মূল্যে ওষুধ ও স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পেয়ে বর্তমানে অনেকটা চিন্তা মুক্ত হয়েছি।’
পবার বড়গাছি ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য সূত্রে জানা গেছে, লোকাল গভর্ন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্ট (এলজিএসপি-৩) প্রকল্পের অর্থায়নে ও বড়গাছি ইউনিয়ন পরিষদ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতের আওতায় ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে বড়গাছি ইউনিয়নে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়েছে। ১২৯৫ বর্গফুট বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কেন্দ্রে মোট কক্ষ সংখ্যা পাঁচটি এবং টয়লেট তিনটি। পাঁচটি কক্ষের মধ্যে দুইটি ডাক্তারদের জন্য একটি ফার্মাসিস্ট, একটি গর্ভবতী মায়ের ডেলিভারি কক্ষ এবং একটি কক্ষ আগত রোগীদের ওয়েটিং রুম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণের পর একজন এমবিবিএস চিকিৎসক প্রতিদিন হাসপাতালে বসেন এবং রোগী দেখেন। এখানে জ্বর, সর্দি-কাশি, ডায়রিয়া ও মেয়েদের গর্ভকালীন সময়ে অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে বিনা মূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধ প্রদানের পাশাপাশি জটিল রোগের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। এই ইউনিয়ন ছাড়াও পার্শ্ববর্তী জয়নগর ইউনিয়নের জনগণও স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি থেকে সেবা গ্রহণ করতে আসেন। ফলে গ্রামীণ জনগণের স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।
রাজশাহী জেলা স্থানীয় সরকার শাখার তথ্য মতে—এলজিএসপি-৩ প্রকল্পটির আওতায় জেলায় ৭২টি ইউনিয়ন ও ১ হাজার ৯১৪টি গ্ৰাম নিয়ে কাজ করছে। ২০১৭ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ছয় বছরে এলজিএসপি-৩ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৪ কোটি ৬৭ লাখ ৩৭ হাজার ১২৩ টাকা। এরই মধ্যে জেলায় প্রায় ৭৪ কোটি ১১ লাখ ৩১ হাজার ২৭৬ টাকার কাজ বাস্তবায়িত হয়েছে। বাস্তবায়িত মোট প্রকল্পের সংখ্যা ৪ হাজার ৪৩৭টি। এর মধ্যে যোগাযোগ খাতে ১৭৮৬টি, পানি সরবরাহ খাতে ৫৪০টি, স্বাস্থ্য খাতে ২০৩টি, শিক্ষা খাতে ৪৭৬টি, প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা খাতে ২৪১টি, কৃষিও বাজার খাতে ৩৬টি, পয়োনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খাতে ৫০৯টি, মানবসম্পদ উন্নয়ন খাতে ১১৪টি কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। এই প্রকল্পের অগ্রগতি শতভাগ নিশ্চিত করা হয়েছে।
বড়গাছি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহাদাৎ হোসাইন সাগর জানান, এলজিএসপি-৩ প্রকল্পের অর্থায়নে ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়। এর আগে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র থাকলেও ভবন না থাকার কারণে এখানে কোনো চিকিৎসক নিয়মিত রোগী দেখার সুযোগ ছিল না। ফলে জ্বর, সর্দি-কাশি, ডায়রিয়া ও মেয়েদের গর্ভকালীন সময়ে অসুস্থ হলে ২৫ কিলোমিটার দূরে রাজশাহী শহরে আসতে হতো। স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির ভবন নির্মাণ হওয়ায় এলাকার জনগণকে বিনা মূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এর ফলে ইউনিয়নবাসীর চিকিৎসা সেবার দুর্ভোগের অবসান হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বড়গাছি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ সেবা গ্রহণ করছেন। সেবা গ্রহীতারা জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য খাতে গ্ৰামীন জনগণের দোরগোড়ায় চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে বড়গাছি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র নির্মাণ একটি যুগান্তকারী উন্নয়নমুখী প্রকল্প।
বড়গাছি ইউনিয়নের কালুপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ভ্যানচালক জব্বার মিয়া বলেন, ‘সকাল থেকে শরীরটা জ্বর-জ্বর লাগছে। জ্বর মাথায় করেও পেটের দায়ে ভ্যান চালাতে হচ্ছে। এখন জ্বরটা একটু বেশি বেশি লাগছে। তাই বিনা পয়সায় স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র থায়কা ওষুধ নিলাম।’
বড়গাছি বাজারের পাশে রুবেলের বাড়ি। তার পা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে চিকিৎসার নিতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘বড়গাছি স্কুল মাঠে ফুটবল খেলতে গিয়ে পায়ে আঘাত পেয়েছি। তাই চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসেছি। ডাক্তার ক্ষত স্থানে ওষুধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিল এবং ফ্রিতে ওষুধ দিয়ে দিল।’
বড়গাছি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রর মেডিকেল অফিসার ডা. সাদিয়া ইসলাম জানান, এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নারী ও শিশু রোগীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি। প্রতিদিন দেড় শতাধিক রোগীর চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকি। এসব রোগীরা মূলত গর্ভবর্তী মায়ের স্বাস্থ্যসেবা, শিশু স্বাস্থ্য ও সাধারণ স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসেন। বিনা মূল্যে ৩০ প্রকার ওষুধ বিতরণের পাশাপাশি স্বাস্থ্য, পরিবার-পরিকল্পনা ও পুষ্টি বিষয়ক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণকারীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে।
পবা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রাবেয়া বসরী জানান, গ্রামীণ জনপথের দরিদ্র ও সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় মানসসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে কমিউনিটি হেলথ কেয়ারের পাশাপাশি স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো কাজ করছে। মাতৃত্বকালীন ৫টি বিপদের আশঙ্কা, গর্ভবর্তী মায়ের স্বাস্থ্যসেবা, প্রসূতি মায়ের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা এবং মা ও শিশুর শারীরিক যত্নসহ স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন সুবিধা পাচ্ছে গ্রামীণ জনপথের নারীরা। তবে বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধ পেয়ে সাধারণ মানুষ খুব খুশি।
রাজশাহী জেলা স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক শাহানা আখতার জাহান বলেন, ‘এলজিএসপি-৩ প্রকল্পটি জেলায় ৭২টি ইউনিয়ন ও ১ হাজার ৯১৪টি গ্ৰাম নিয়ে কাজ করছে। এই প্রকল্পের আওতায় জেলায় স্বাস্থ্য খাতে ২০৩টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম বড়গাছি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রকল্প। বর্তমান সরকার স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে। গত ১০ বছরে সারা দেশে স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। এরই অংশ হিসেবে সরকারের এলজিএসপি-৩ প্রকল্পের আওতায় বড়গাছি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে।’
শাহানা আখতার জাহান আরও জানান, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষ্যে ‘সর্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা’ নিশ্চিত করতে হলে প্রয়োজন স্বাস্থ্য খাতকে শক্তিশালী করা, বাজেটে যথাযথ বরাদ্দ দেওয়া এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। এই কাজটি সরকার এলজিএসপির-৩ প্রকল্পের মাধ্যমে করছেন। তাই এই প্রকল্পের সুফল বড়গাছি ইউনিয়নের হতদরিদ্র মানুষ পাচ্ছেন।
এলজিএসপির-৩ প্রকল্পের জেলা সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, ‘প্রকল্পটি শুরু থেকেই হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর উপকারে আসে এবং সরকারের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। নারীর ক্ষমতায়নসহ পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদকে কার্যকর করতে এলজিএসপি-৩ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিভিন্ন উপজেলায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি উন্নয়ন ও দারিদ্র্য দূরীকরণে নানা প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় পবা উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়ন পরিষদের স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
আব্দুল জলিল আরও জানান, বর্তমান সরকারের স্বাস্থ্য খাতে অন্যতম পদক্ষেপ হলো কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন। ১৯৯৬ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় এসে এই কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পটি শেখ হাসিনা সরকার গ্রহণ করেন এবং প্রায় দশ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেছিলেন। এর অংশ হিসেবে এলজিএসপি-৩ প্রকল্পের আওতায় কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা হতদরিদ্র মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে বিভিন্ন ইউনিয়নে স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। বড়গাছি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র সরকারের চিকিৎসাবান্ধব কর্মসূচির সফল বাস্তবায়ন।
অন্তর্বর্তী সরকারের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ এম হাসান আরিফ বলেছেন, ‘আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত ভিসার ব্যাপারে কিছুটা কড়াকড়ি করেছে। তারা আমাদের ভিসা দেবে কি না, এটা তাদের বিষয়।’
২ ঘণ্টা আগেনাটোরের বড়াইগ্রামে আওয়ামী লীগের এক সমর্থককে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠেছে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। মারধরের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ আহত ওই যুবককেই আটক করে। পরে তিনি জামিনে ছাড়া পান
২ ঘণ্টা আগেঅন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, ‘আপনারা ভালো কাজ করলে আমাদের সমর্থন পাবেন। জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে এক সেকেন্ডও সময় নেব না আপনাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে। দায়সারা কথা বলে ছাত্র-জনতার সঙ্গে প্রহসন করবেন না।
৩ ঘণ্টা আগেলক্ষ্মীপুরে একটি তাফসিরুল কোরআন মাহফিল ও ইসলামি সংগীত সন্ধ্যা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আজ শুক্রবার লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার মোহাম্মদিয়া জামে মসজিদ মাঠে এই আয়োজন করা হয়েছিল। মাহফিলে জামায়াত নেতাকে প্রধান অতিথি করায় বিএনপি সেটি বন্ধ করে দেয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
৪ ঘণ্টা আগে