তানোরে বৃষ্টিতে ১৬৩ পুকুর উপচে ভেসে গেছে দেড় কোটি টাকার মাছ 

তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২৩, ১৯: ৩৩

অনবরত বৃষ্টিতে রাজশাহী নগরীসহ আশপাশের উপজেলার মানুষেরা ভোগান্তিসহ বেশ ক্ষয়ক্ষতিতে পড়েছেন। এর মধ্যে তানোর উপজেলায় একদিকে ঘের ও পুকুর তলিয়ে মাছ ভেসে গেছে অন্যদিকে পানির নিচে তলিয়ে গেছে রোপা আমনের চারা। আর এতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন মৎস্যচাষিরা। 
 
উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার রাত থেকে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত অতিবর্ষণের প্রভাবে তানোরে প্রায় ১৬৩টি পুকুরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। এতে করে ১ কোটি ৩৯ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য দিয়েছে মৎস্য বিভাগ। 

উপজেলার কামারগাঁও ইউনিয়নের পুকুর মালিক মৃদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে এবার পুকুর চাষ করেছি। এতে আমাদের প্রায় সাড়ে ৭ লাখ টাকার পোনা মাছ দেওয়া আছে। কিন্তু একদিনের বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে সব মাছ ভেসে গেছে।’ 

একই এলাকার আরেকজন পুকুর মালিক তাজমুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েক দিন যাবৎ আবহাওয়া স্বাভাবিক থাকায় বুঝে উঠতে পারিনি। হঠাৎ করেই বিরামহীন বৃষ্টি পানি বেড়ে গিয়ে ক্ষতিটা হয়ে গেল। আমার প্রায় ৩ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে।’ 

এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বাবুল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে একটি ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করেছি। এতে উপজেলা বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু পুকুর ডুবে যাওয়ার তথ্য পেয়েছি। পাশাপাশি এসব পুকুরের মাছ ভেসে গিয়ে ক্ষতি নির্ধারণ করা হয়েছে।’ 

অন্যদিকে উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে জানা যায়, চলতি রোপা আমন মৌসুমে উপজেলার সাত ইউনিয়নে ও দুই পৌরসভা মিলিয়ে ২২ হাজার ৪৩৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে, উপজেলার কামারগাঁও, পাঁচন্দর, তানোর পৌরসভা, চান্দুড়িয়া ও কলমা ইউনিয়নের প্রায় ৬১ হেক্টর ফসলি জমি সম্পূর্ণ পানির নিচে নিমজ্জিত হয়েছে। 

এ ছাড়াও এসব এলাকার আরও প্রায় ১৮০ হেক্টর জমির ফসল আংশিক পানিতে তলিয়ে গেছে। বৃষ্টি আরও ২-৪ দিন বিলম্বিত হলে বীজ পচে নষ্ট হয়ে যাবে। এতে তানোরে অতিবর্ষণে কৃষিতে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ ২০ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। 
 
উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল্লাহ আহম্মেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এক-দুদিনের মধ্যে ফসলি জমি থেকে পানি নেমে গেলে তেমন ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা থাকবে না। মাঠ পর্যায়ের সকল কর্মকর্তাদের কৃষকদের পাশে থাকার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’ 

এ নিয়ে উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যসচিব ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) এইচ এম কাইছার বলেন, ‘অতিবর্ষণে তানোর উপজেলা জুড়ে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত প্রতিবেদন তৈরি করে জেলায় পাঠানোর কাজ চলছে।’ 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিল্লাল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তানোর উপজেলায় অতিবর্ষণে ক্ষয়ক্ষতি নির্ণয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর সমূহকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা সঠিক তথ্য সংগ্রহে কাজ করছে। তথ্য পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ 

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক আনোয়ারা বেগম জানান, বুধবার রাত ১০টা থেকে রাজশাহীতে বৃষ্টি শুরু হয়। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এ বৃষ্টিপাত অব্যাহত আছে। আজ দুপুর ২টা পর্যন্ত রাজশাহীতে ২৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। তবে ভারী বৃষ্টিপাতের কোনো সম্ভাবনা নেই। এটি এ বছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত