রাবিতে বেড়েছে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১০ জানুয়ারি ২০২২, ১৮: ৪০
আপডেট : ১১ জানুয়ারি ২০২২, ১৩: ১৩

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। গত এক সপ্তাহে ৪টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। তবে সিসি টিভি ফুটেজ থাকা সত্ত্বেও ছিনতাইকারীদের শনাক্ত করতে না পারায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা বলছেন, বারবার ছিনতাইয়ের ঘটনায় দায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি এড়াতে পারে না। তবে পুলিশের দাবি, লিখিত অভিযোগ না পাওয়ায় ব্যবস্থা নিতে পারছে না তারা। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর লিয়াকত আলী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় নিয়মিত ক্যাম্পাসে অভিযান পরিচালনা করছি। গত দুই দিনে বেশ কিছু বাইক আটক করা হয়েছে, কাগজপত্র না থাকায় মামলা দেওয়া হয়েছে।’ 

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ৩১ ডিসেম্বর ক্যাম্পাসে দিনের বেলা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে ছিনতাইয়ের শিকার হয় ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতির মাইশা জান্নাত। মোটরসাইকেলে চেপে দুজন এসে রিকশা থামিয়ে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে মোবাইল ফোন, আইডি কার্ড, নগদ টাকা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে পালিয়ে যান। এরপর গত ৩ জানুয়ারি প্যারিস রোডে উপাচার্য বাসভবনের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী উম্মে সালমা ছিনতাইয়ের শিকার হন। একই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদ সংলগ্ন এলাকায় ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেন স্থানীয় এক যুবক। ভুক্তভোগীর চিৎকারে লোকজন এসে ওই ছিনতাইকারীকে আটক করে। 

সবশেষ ৫ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে ১০০-১৫০ গজ পশ্চিমে চলন্ত রিকশা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এক ছাত্রীর ব্যাগ ছিনিয়ে নেন মোটরসাইকেল আরোহী দুই যুবক। 

শিক্ষার্থীরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব প্রক্টরিয়াল বডির। গত কয়েক দিনের ছিনতাইয়ের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়নি। ক্যাম্পাসে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ ছিনতাইকারীদের শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে। 

এদিকে এক সপ্তাহের মধ্যে কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনার প্রতিবাদে গত মঙ্গলবার মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের ব্যর্থতাকে দায়ী করে তাঁর পদত্যাগের দাবি তোলেন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে ১০০-১৫০ গজ পশ্চিমে ছিনতাইয়ের শিকার হন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী তাছনিমা খানম। তিনি অভিযোগ করেন, মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিতে গেলে, মতিহার থানা-পুলিশের ডিউটি অফিসার তাঁকে সাধারণ ডায়েরি করার পরামর্শ দেন। এমনকি সাধারণ ডায়েরিতে মোবাইল ছিনতাই না লেখে হারিয়েছে লিখতে বলেন। এ ছাড়া সাক্ষী না থাকায় অভিযোগ নিতেও পুলিশ অস্বীকার করে বলে দাবি করেন ওই শিক্ষার্থী। 

এদিকে ছিনতাই না লিখে হারিয়ে লেখার বিষয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ওই ছাত্রী যখন থানায় এসেছিল। তখন আমি বাইরে ছিলাম। পরে আপনাদের (গণমাধ্যমকর্মী) মাধ্যমে জেনেছি। আমি ওই ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বাড়িতে আছেন। রাজশাহী আসলে অভিযোগ দেবেন। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’ 

ক্যাম্পাসে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার আলী তুহিন বলেন, ‘বিষয়টি আমার অবগত। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিংবা ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী কেউই লিখিত অভিযোগ করেনি। ফলে আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না।’ 

সার্বিক বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত