Ajker Patrika

সাদকে টর্চার করে মাকে হত্যার স্বীকারোক্তি আদায় করে র‍্যাব, অভিযোগ বাবার

বগুড়া প্রতিনিধি
Thumbnail image
বগুড়ায় মাকে হত্যা করে লাশ ডিপ ফ্রিজে রাখা ছেলে গ্রেপ্তার। ছবি: আজকের পত্রিকা

আমার ছেলেটাকে টর্চার করে মাকে হত্যার স্বীকারোক্তি আদায় করেছে র‍্যাব। এমন অভিযোগ করেছেন বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় নিজ বাড়িতে নিহত উম্মে সালমার স্বামী আজিজুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘গত ১১ নভেম্বর জানাজার পর আমাকে ও ছেলে সাদ বিন আজিজুর রহমানকে র‍্যাব তাদের কার্যালয়ে নিয়ে যায়। এরপর সাদকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। তখন আমি পাশের রুমে বসে ছিলাম। সাদকে অনেক টর্চার করা হচ্ছে আমি বুঝতে পারি। মনে হয় এ কারণেই সাদ তার মাকে হত্যার স্বীকারোক্তি দিয়েছিল।’

আজ শনিবার আজিজুর রহমান সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন। তিনি দুপচাঁচিয়া দারুসসুন্নাহ কামিল মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ ও উপজেলা জামে মসজিদের খতিব।

এর আগে গত রোববার উপজেলার ‘আজিজয়া মঞ্জিল’ বাসার ডিপ ফ্রিজ থেকে উম্মে সালমার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় নিহতের ছোট ছেলে সাদকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে মাকে হত্যার স্বীকারোক্তি দেয় বলে জানায় র‍্যাব। পৃথক তদন্তে পুলিশ বাড়ির ভাড়াটিয়া মাবিয়াসহ তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর ঘটনায় নতুন মোড় নেয়।

আজিজুর রহমান বলেন, ‘স্ত্রীকে হারানোর পরদিনই মাকে হত্যার অভিযোগে ছোট ছেলেকে গ্রেপ্তার করা হয়। একদিনের ব্যবধানে এমন ঘটনায় আমি মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ি। কোনোভাবেই মানতে পারছিলাম আমার শান্তশিষ্ট ছেলেটা নিজের মাকে হত্যা করবে? আমি বারবার চাচ্ছিলাম স্ত্রী (সালমা) হত্যার আসল রহস্য উদ্ঘাটন হোক।

এ জন্য র‍্যাব এবং পুলিশকে তাদের চাহিদা মতো তথ্য দিয়েছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুই সংস্থাকেই ভাড়াটিয়া মাবিয়া সুলতানার কথা বারবার বলেছি। কিন্তু র‍্যাব মাবিয়ার বিষয়টি আমলে নেয়নি।’

তিনি বলেন, ‘মাবিয়া নামের ওই নারী চার মাস আগে আমার বাড়ি ভাড়া নেয়। শুরু থেকেই তার আচরণ আমাদের কাছে সন্দেহজনক ছিল। আমার স্ত্রী গত সপ্তাহে বলেছিল, ওকে (মাবিয়া) রাখা যাবে না; বের করে দাও। আমি তাকে বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলেছিলাম। সে সময় চেয়েছিল।

এরই মধ্যে একদিন আমার স্ত্রীর সঙ্গে মাবিয়ার ঝগড়া হয়। সেসময় আমার স্ত্রী তাকে বলেছিল, আপনি চলে যান। আপনার ভাড়া দেওয়া লাগবে না। পরবর্তীতে মাবিয়া আমার স্ত্রীকে জোর করে বের করে দিতে পারবে না বলে হুমকি দেয়।’

আজিজুর রহমান বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের দুই দিন আগেও আমার স্ত্রী আমাকে বলেছিল, তুমি ওকে বের করে দাও। সে যেকোনো অঘটন ঘটাতে পারে। আমি তাকে বের করে দেওয়ার উদ্যোগও নিয়েছিলাম। কিন্তু, তার আগেই এই ঘটনা ঘটে গেল।’

তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর র‍্যাব তদন্তে এলে মাবিয়ার বিষয়টি বলেছিলাম। কিন্তু তারা আমলে নেয়নি। পরে পুলিশকে জানিয়েছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুই সংস্থাকেই বলেছি, হত্যার আসল রহস্য বেরিয়ে আসুক। এতে যদি আমার ছেলে অপরাধ করেছে প্রমাণিত হয়, তাহলে তার শাস্তি হবে। কিন্তু নিরপরাধ কেউ যেন শাস্তি না পায়।’

ছেলে সাদের বিষয়ে উপাধ্যক্ষ আজিজুর রহমান বলেন, ‘র‍্যাব যখন সংবাদ সম্মেলন করে জানাল, সাদ তার মাকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। আমরা খুব অবাক হয়েছি। এ ঘটনায় ছেলের ও আমার ব্যাপক সম্মান ক্ষুণ্ন হয়েছে, আমরা সামাজিকভাবে হেয় হয়েছি। আমার ছেলের মানসিক অবস্থা এখন কী একমাত্র সেই বলতে পারবে। পুলিশ প্রাথমিকভাবে হত্যাকাণ্ডে সাদের কোনো সম্পৃক্ততা পায়নি।’

র‍্যাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল একটা বাহিনী এমন কাজ করবে কখনো আশা করিনি।

এদিকে র‍্যাব-১২ এর বগুড়া কোম্পানির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমের কাছে কেউ মুখ খুলছেন না। র‍্যাব কর্মকর্তাদের বিভিন্ন মোবাইল নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও রিসিভ করা হয় না।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কোম্পানি কমান্ডার মেজর এহতেশামুল হক খান বদলি হয়ে বগুড়া থেকে চলে গেছেন। গত ১২ নভেম্বর সালমা হত্যাকাণ্ড নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করার পর বিকেলে তিনি নতুন কর্মস্থল র‍্যাব হেডকোয়ার্টারে যোগদানের উদ্দেশ্যে বগুড়া ত্যাগ করেন। আগের দিন ১১ নভেম্বর তার বদলির আদেশ হয়। আজ (শনিবার) নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তা র‍্যাব-১২ এর বগুড়া কোম্পানি কমান্ডার হিসেবে যোগদান করেছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশসহ ৩ দেশে উন্নয়ন সহায়তা বন্ধের সিদ্ধান্ত সুইজারল্যান্ডের

বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের পদত্যাগ

তিন ভোটের কর্মকর্তাদের বিষয়ে অনুসন্ধানে দুদক

মেডিকেলে ভর্তি: সনদ যাচাইয়ে অনুপস্থিত মুক্তিযোদ্ধা কোটায় উত্তীর্ণ ৪৯ শিক্ষার্থী

২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ফেসবুক প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তন কর্মসূচি শুরু

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত