বগুড়ায় ‘চাঁদাবাজি বন্ধে’ পরিবহন খাতে ফের অস্থিরতা

  • চাঁদাবাজি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই অস্থিরতা বলে দাবি মালিকদের
  • বগুড়া থেকে দেশের বিভিন্ন রুটে গড়ে প্রতিদিন ৬৫০ বাস চলাচল করে
গনেশ দাস, বগুড়া
Thumbnail image
ফাইল ছবি

বগুড়ায় পরিবহন খাতে আবার অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। পাল্টাপাল্টি কমিটি ঘোষণা আর পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছে দুই পক্ষ। চাঁদাবাজি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই অস্থিরতা বলে দাবি সাধারণ মালিকদের।

পরিবহন খাত সূত্রে জানা গেছে, উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ পরিবহনমালিকদের সংগঠন বগুড়া জেলা বাস মিনিবাস ও কোচ পরিবহন মালিক সমিতি। এই সংগঠনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন রুটে গড়ে প্রতিদিন ৬৫০ বাস চলাচল করে। আগে আওয়ামী লীগের নেতারা সংগঠনটি নিয়ন্ত্রণ করতেন। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলে ৬ আগস্ট বিশেষ সাধারণ সভা ডেকে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয় জামায়াত পরিচালিত শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন বগুড়া শহর শাখার সহসভাপতি ও সংগঠনের উপদেষ্টা এরশাদুল বারী এরশাদকে। এরপরই সংগঠনের সভাপতি আক্তারুজ্জামান ডিউক ও সাধারণ সস্পাদক আমিনুল ইসলাম আত্মগোপন করেন। তাঁদের অনুপস্থিতিতে সহসভাপতি ফজলুর রহমান তালুকদার ও এরশাদুল বারী এরশাদ সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন।

এর মধ্যে ৩ ডিসেম্বর ফজলুর রহমান তালুকদার শহরের একটি অডিটরিয়ামে বগুড়া বাস মিনিবাস ও কোচ পরিবহন মালিক সমিতি সাধারণ সভা আহ্বান করেন। সভায় ফজলুর রহমান তালুকদার নিজেকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং বগুড়া জেলা বিএনপির সহকোষাধ্যক্ষ আব্দুল জলিল বাকীকে সাধারণ সম্পাদক করে একটি কমিটি ঘোষণা করেন।

এরপর থেকে দেখা দেয় অস্থিরতা। দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এরশাদুল বারী এরশাদ এই কমিটি ঘোষণাকে অবৈধ উল্লেখ করে পত্রিকায় প্রতিবাদ ছাপান। তিনি বলেন, আব্দুল জলিল বাকী বগুড়া জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সদস্য না হয়েও নিজেকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা দেওয়া অবৈধ। এ ছাড়া রাজশাহী শ্রম দপ্তর থেকে অনুমোদন করা মনোগ্রাম অবৈধভাবে ব্যবহার করে নিজেকে বগুড়া বাস মিনিবাস ও কোচ পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা অবৈধ বলে দাবি করেন তিনি।

অপরদিকে আব্দুল জলিল বাকী বলেন, ‘আমার বাস রয়েছে এবং জয়পুরহাট ও রংপুর রুটে বাস চলাচল করে। সাধারণ সভায় উপস্থিত পরিবহন মালিকদের সম্মতিতে আমাকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়।’

এদিকে সাধারণ বাসমালিকেরা বলছেন, মালিক সমিতির দ্বন্দ্ব নিয়ে ২০১৯ সালের ১৪ এপ্রিল সমিতির সাবেক নেতা ও সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম শাহীনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ছাড়া সমিতি দখল করা নিয়ে ২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি চারমাথা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশসহ অনেকে আহত হয়। পুড়িয়ে দেওয়া হয় বেশ কয়েকটি বাস। এখন আবার মালিক সমিতির দ্বন্দ্ব সেদিকে যাচ্ছে। তাঁদের ভাষ্য, বিগত সময় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষে সংঘর্ষ হয়েছে। আর এখন বিএনপি নেতা এবং জামায়াত নেতা পরিবহন মালিক সমিতি নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন।

বগুড়া বাস মিনিবাস ও কোচ পরিবহন মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, এই সংগঠনের মালিকদের ৮৫০টি বাস রয়েছে। এগুলোর মধ্যে প্রতিদিন গড়ে চলাচল করে ৬৫০টি বাস। বাসগুলো টার্মিনাল থেকে বের হওয়ার আগেই চেইন চাঁদা হিসেবে আদায় করা হয় ১৫০ টাকা। সেই হিসাবে প্রতিদিন ৬৫০টি বাস থেকে ৯৭ হাজার ৫০০ টাকা আদায় করা হয়। গত ৫ আগস্টের আগে চেইন চাঁদা আদায় করা হতো ২৫০ টাকা করে। এর ১৫০ টাকা সংগঠনের থাকলেও ১০০ টাকা হিসেবে প্রতিদিন ৬৫ হাজার টাকা নেতাদের মধ্যে ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নেওয়া হতো।

সাধারণ মালিকদের মধ্যে আরিফ বিল্লাহ অনিক ও আফজাল হোসেন বলেন, ৫ আগস্টের আগে তাঁদের বাস থেকে প্রতিদিন ২৫০ টাকা চেইন চাঁদা নেওয়া হতো। বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ১০০ টাকা কমিয়ে ১৫০ টাকা চেইন চাঁদা নির্ধারণ করেছেন। ফলে প্রতিটি বাসমালিককে দিনে ১০০ টাকা হিসাবে মাসে ৩০০০ হাজার টাকা চাঁদা কম দিতে হচ্ছে। এতে করে মালিকেরা উপকৃত হচ্ছেন। তবে কয়েক দিন ধরে মালিক সমিতি নিয়ে অস্থিরতা দেখা দেওয়ায় তাঁরা শঙ্কিত।

বগুড়া জেলা বাস মিনিবাস ও কোচ পরিবহন মালিক সমিতির দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এরশাদুল বারী এরশাদ বলেন, আগামী ফ্রেব্রুয়ারিতে সংগঠনের নির্বাচন। ডিসেম্বর মাসে সংগঠনের কার্যালয়ে সাধারণ সভা হওয়ার কথা। গত ১৬ নভেম্বর সহসভাপতি ফজলুর রহমান তালুকদারের সভাপতিত্বে নির্বাহী কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু হঠাৎ ৩ ডিসেম্বর অন্য একটি স্থানে সভা করে কমিটি ঘোষণা অবৈধ। এরই মধ্যে রাজশাহী বিভাগীয় শ্রম দপ্তর থেকে ফজলুর রহমান তালুকদারকে চিঠি দিয়ে ৩ ডিসেম্বর বিশেষ সাধারণ সভার আয়োজনের বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

এরশাদ দাবি করেন, দায়িত্ব নেওয়ার পরদিন থেকেই চেইন চাঁদার সঙ্গে অতিরিক্ত ১০০ টাকা চাঁদা আদায় বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি। মহাসড়কে বিভিন্ন স্থানে চাঁদা আদায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যার কারণে অনেকের সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। একটি মহল বৈধ ১৫০ টাকা চেইন চাঁদা বন্ধের মাধ্যমে অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য টার্মিনালের কর্মচারীদেরকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। বিষয়টি সংগঠনের পক্ষ থেকে পুলিশ ও জেলা প্রশাসন ছাড়াও সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোকে জানানো হয়েছে বলে তিনি জানান।

বগুড়ার পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা বলেন, ‘আমরা দুই পক্ষকে ডেকে তাদের বক্তব্য শুনেছি। সহিংসতায় না জড়িয়ে আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য অনুরোধ করেছি। সৃষ্ট জটিলতা নিরসন করতে আমরাও কাজ করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত