ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে ২ লাখ টাকা দাবি, পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
প্রকাশ : ০৫ মে ২০২৪, ১৯: ১৪
আপডেট : ০৫ মে ২০২৪, ১৯: ৫২

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্য পরিচয়ে এক তরুণকে তুলে নিয়ে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে। গতকাল শনিবার রাতে উপজেলার গোগ্রাম বাজার থেকে ওই তরুণকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে গোগ্রাম বাজারে গোদাগাড়ীর প্রেমতলী তদন্তকেন্দ্রের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আনোয়ার হোসেনকে পেয়ে তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। তাঁকে উদ্ধারে পুলিশের একটি গাড়ি গেলে ইটপাটকেল মেরে গাড়িটি ভাঙচুর করে স্থানীয়রা। তখন পুলিশের লাঠিপেটায় কয়েকজন আহত হন।

অপহরণের শিকার তরুণের নাম সোহান। সে গোগ্রামের কাপড় ব্যবসায়ী মুর্তজার ছেলে। সোহান ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে জুয়া পরিচালনা করে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে সোহানের অভিযোগ, রাত ৮টার দিকে দোকান বন্ধ করে সে বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিল। এ সময় দুটি মোটরসাইকেলে চারজন এসে নিজেরা ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। এরপর নাম জিজ্ঞাসা করে। নাম-ঠিকানা বলার পর তাকে জোর করে মোটরসাইকেলে তুলে নেওয়া হয়। কিছু দূর যাওয়ার পর হ্যান্ডকাপ পরানো হয়।

এরপর সোহানকে প্রেমতলী পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের পাশে পদ্মা নদীর পাড়ে নিয়ে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। এ সময় তাঁরা বলেন, ‘তোর বাপকে ফোন দিয়ে টাকা আনতে বল। নইলে মাদক মামলায় চালান দিয়ে দিব।’ টাকা না দিলে রাত সাড়ে ১১টার দিকে বসন্তপুর-খেতুরধামের রাস্তায় ফাঁকা জায়গায় নামিয়ে দেয়। সেখান থেকে তিনি একা গোগ্রাম বাজারে চলে যান।

গোগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বলেন, ডিবি পুলিশ পরিচয়ে সোহানকে অপহরণের পর এএসআই আনোয়ার সাদাপোশাকে গোগ্রাম বাজারে গেলে স্থানীয় লোকজন তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখে। খবর পেয়ে প্রেমতলী তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ ওসমান গণি অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে সেখানে গিয়ে স্থানীয় জনতাকে লাঠিপেটা করেন। তাতে সাত-আটজন আহত হন। পুলিশের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে লোকজন। তাতে পুলিশের গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মতিন ও গোদাগাড়ী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সোহেল রানা গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন।

ইউপি চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বলেন, ‘উত্তেজিত জনতা পুলিশের কাছে সোহানকে ফেরত চায়। এ সময় সোহানের মোবাইল ফোনে অপহরণকারীদের সঙ্গে কথা বলেন ওসি আব্দুল মতিন। এরপর তারা সোহানকে ছেড়ে দেয়। এখন পুলিশই সোহানকে অপহরণ করেছিল কি না তা জানি না। বিষয়টি নিয়ে আমরা রাতেই পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসেছিলাম। সোহানকে কারা অপহরণ করেছে, সেটি তদন্ত করে বের করতে বলেছি। এর সঙ্গে পুলিশ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। আমরা এ ঘটনার বিচার দাবি করেছি।’

এ বিষয়ে এএসআই আনোয়ার বলেন, ‘সোহানকে নিয়ে যাওয়ার ঘটনার বিষয়ে আমি জানি না। রাতে আমার ডিউটি শেষে গ্রোগ্রাম বাজার পার হয়ে কিছুটা গেলে কয়েকজন এসে আমার সঙ্গে কথা বলেন এবং সোহানের বিষয়ে জানতে চান। এ সময় অনেক লোকজন জড়ো হয়ে যায়। পরে আমি প্রেমতলী কেন্দ্রের ইনচার্জকে ফোন করে বিষয়টি জানাই।’ তবে রাতে সাদাপোশাকে গোগ্রাম বাজারে কেন গিয়েছিলেন এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গোদাগাড়ী মডেল থানার ওসি আব্দুল মতিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, কারা সোহানকে তুলে নিয়ে গিয়ে চাঁদা দাবি করেছে, সেটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও গুরুত্বসহ দেখছেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত