‘রিকশা চল্যা পাঁচ’শ টাকা দিত, সেই ছোলকে ওরা পাখির মতো গুলি করে মারলো’ 

শিবগঞ্জ (বগুড়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০২৪, ০০: ০১

কোটা সংস্কারের আন্দোলন চলাকালে ঢাকার সাভারে গুলিবিদ্ধ হয়ে গত ২০ জুলাই নিহত হন রিকশাচালক রনি প্রামাণিক (৩০)। পরদিন তাঁর মরদেহ বগুড়ার শিবগঞ্জের পঞ্চদাশ গ্রামে দাফন করা হয়। উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন রনির মৃত্যুতে এখন অথৈ সাগরে ভাসছে পুরো পরিবার। ঘটনার সপ্তাহ পেরোলেও থামেনি স্বজনদের শোক-আহাজারি।

‘হামার দুনিয়াত আর কেউ থাকলোনা। ছোল ঢাকাত রিকশা চল্যা সপ্তায় পাঁচ’শ টাকা পাটাতো। সেডা দিয়া ওষুধ কিনতাম। হামার সেই ছোলকে ওরা পাখির মতো গুলি করে মারলো।’

আজ শনিবার বিকেলে শিবগঞ্জ উপজেলার বুড়িগঞ্জ ইউনিয়নের পঞ্চদাস গ্রামে এভাবেই বিলাপ করছিলেন রনির মা শাহানা বেগম (৬৭)।

রিকশাচালক ছেলের পাঠানো টাকায় ওষুধ আর দু’বেলার খাবার জুটতো স্বামীহারা শাহানা আক্তারের। আন্দোলন চলছে জেনে ছেলেকে রিকশা নিয়ে বের হতে বারণও করেছিলেন হতভাগা এই মা। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে মা শাহানা বেওয়া এখন পাগলপ্রায়। কখনো নিজের ঝুপড়ি ঘরে আবার কখনো মাটিতে বসে ছেলের স্মৃতিচারণ করে বিলাপ করে যাচ্ছেন তিনি।

পঞ্চদাশ গ্রামের মৃত দিলবর প্রামাণিকের ছেলে রনি মিয়া। স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে ঢাকার সাভারে ভাড়া বাসায় থেকে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

পরিবারের সদস্যরা জানায়, কোটা সংস্কার আন্দোলনে কমপ্লিট শাটডাউনে দুইদিন রিকশা বন্ধ থাকায় ঘরে ওষুধ ও চাল-ডাল ছিল না। তাই, সন্তানদের পেটের ক্ষুধা মেটাতে গত ২০ জুলাই দুপুরে রনি রিকশা নিয়ে সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যান। দুটো টাকা রোজগারের আশায় বের হওয়া রনি হঠাৎ সহিংসতার মাঝে পড়েন। পুলিশের গুলিতে হন নিহত।

প্রতিবেশী ও স্বজনদের দাবি, রনির মৃত্যুর সঠিক বিচারের পাশাপাশি সরকার অসহায় এই পরিবারের পাশে এসে দাঁড়ালে তাঁর বৃদ্ধ মা ও বিধবা স্ত্রী দুই শিশু সন্তান নিয়ে বেঁচে থাকার পথ খুঁজে পাবে।

পঞ্চদাস গ্রামের বাসিন্দা বাবলু সরকার জানান, চার বছর আগে রনির বাবা মারা গেছেন। তাঁর মা শাহানা খাতুন সরকারি খাসজমিতে ঝুপড়ি ঘর তুলে খুব কষ্টে বসবাস করছেন। মানুষের দুয়ারে সাহায্য চেয়ে তাঁর জীবিকা চলে।

রনির স্ত্রী সাথি বেগম বলেন, ‘ছোট ছেলের গায়ে খুব জ্বর জ্বর ছিল। ওর বাবার শরীরও ভালো ছিল না না। আন্দোলনের কারণে দুই দিন রিকশা চালাতে না পারায় ঘরে চাল-ডাল ছিল না। ওষুধ কেনার টাকাও ছিল না। এ জন্য সকাল ৯টার দিকে মহাজনের কাছ থেকে রিকশা নিয়ে বের হয়। দুপুর ১২টার দিকে এক প্রতিবেশী ফোন করে বলে, তোমার স্বামীর বুকে গুলি লাগছে। এখন হাসপাতালে আছে। শোনামাত্র ইভানকে কোলে নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে স্বামীর নিথর দেহ দেখতে পাই। তাঁর বুকে-পিঠে অসংখ্য গুলির চিহ্ন ছিল।’

স্থানীয় বুড়িগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম চঞ্চল বলেন, ‘অসহায় পরিবারটির দায়িত্ব সরকার নিলে তাঁর বৃদ্ধ মা, স্ত্রী ও দুই ছেলে বেঁচে থাকার পথ পাবে। আমি ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করব।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত