দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি: মেসে কমেছে খাবারের মান, বেড়েছে খরচ

নওগাঁ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৮ আগস্ট ২০২৩, ১৩: ৪৯
আপডেট : ২৮ আগস্ট ২০২৩, ১৫: ২৬

খাবারের তালিকা থেকে বহু আগেই বাদ পড়েছে গরুর মাংস। পাতে মাছ থাকলেও আকার ছোট হয়ে এসেছে। স্বল্প মূল্যে আমিষের চাহিদা মেটানো ব্রয়লার মুরগি ও ডিম; এটিও চলে গেছে সাধ্যের বাইরে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে কমেছে খাবারের মান। খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে মেসে থাকা ব্যাচেলরদের।

চাকরি কিংবা পড়াশোনার জন্য নওগাঁ শহরের বিভিন্ন এলাকায় অনেকেই মেসে থাকেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাঁদের খাবারের খরচ বেড়েছে। চাহিদামতো খাবার খেতে পারছেন না তাঁরা।

শহরের উকিলপাড়া ছাত্রাবাসসহ কয়েকটি ছাত্রাবাসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে মেসের চুলায় রান্না হয় না গরুর মাংস। আমিষের চাহিদা মেটাতে মেসগুলোতে ব্রয়লার মুরগির মাংস খাওয়া হলেও সেটিও প্রায় বন্ধের উপক্রম। বাধ্য হয়েই অনেক মেসে দুপুরে ডিম-সবজি ও রাতে সবজি-ডাল খেয়ে কোনো রকম টিকে আছেন। এর মধ্যে ডিমের দাম বৃদ্ধির কারণে সেটিও বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা। 

উকিলপাড়া ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থী আল আমিন হোসেন বলেন, ‘আগে সপ্তাহে তিন দিন ডিম, দুই দিন মুরগির মাংস আর দুই দিন মাছ খেতে পারতাম। কিন্তু দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন সপ্তাহে এক দিন করে ডিম ও মুরগির মাংস খেতে হচ্ছে। বাকি পাঁচ দিনের মধ্যে তিন দিন মাছ আর দুই দিন সবজি খাচ্ছি।’

আরেক শিক্ষার্থী সুমন হোসেন বলেন, ‘দাম বেশি হওয়ার কারণে অনেক আগে থেকেই গরু কিংবা খাসির মাংস খাওয়া হয় না। আমিষ বলতে ডিম, মুরগির মাংস এবং মাছই আমাদের ভরসা। বর্তমানে বেড়েছে ডিম ও মাছের দামও। এ কারণে আমাদের পক্ষে প্রয়োজনীয় আমিষ গ্রহণ করাও আর সম্ভব হচ্ছে না।’

মেসের শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন বাজার করে থাকেন শহরের বড় কাঁচাবাজার, ডিগ্রী মোড় ও সিও অফিস বাজারে। বাজারগুলো ঘুরে দেখা যায়, এক হালি ব্রয়লার মুরগির ডিম কিনতে লাগছে ৫০ টাকা। এ ছাড়া আলু, পটোল, লাউ এবং কাঁচা পেঁপে ছাড়া ৬০ টাকা কেজির নিচে মিলছে না কোনো সবজি।

নওগাঁ শহরের উকিলপাড়া এলাকার এক ছাত্রাবাসের দুপুরের খাবারনওগাঁ সরকারি কলেজের অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘বাজারের ঊর্ধ্বগতিতে সমস্যায় পড়ছি। মেস ভাড়া, খাবার ও বিদ্যুৎ বিলসহ সব খরচ বেড়েছে। খাবারের মানও দিন দিন খারাপ হচ্ছে, তবুও সব মিলিয়ে মাসে ৪ হাজারেরও বেশি টাকা খরচ হচ্ছে।’ 

উকিলপাড়ায় মেসে থাকেন একটি কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি বাপ্পি মন্ডল। তিনি বলেন, আগে মাসে এক দিন গরুর মাংস খাওয়া হতো মেসে। এখন সেটিও হয় না। ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ায় ডিমও খাওয়া হচ্ছে না। মাছের দাম বৃদ্ধির পর আগে যে পরিমাণ মাছ খাওয়া হতো বর্তমানে সেখানেও অর্ধেক খাওয়া হচ্ছে। 

শহরের এক ছাত্রাবাসের দায়িত্বে থাকা (মনিটর) শিক্ষার্থী জোবায়ের হোসেন বলেন, প্রতিদিনের খাবার মেনুতে কাটছাঁট করতে হচ্ছে। নিজেদের খরচ কমাতেই এটি করা হচ্ছে। তবে খরচ কমাতে গিয়ে আমিষের ঘাটতি ও পুষ্টিহীনতার অভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে আমাদের মতো শিক্ষার্থীরা। 

নওগাঁর সিভিল সার্জন আবু হেনা মুহাম্মাদ রায়হানুজ্জামান সরকার বলেন, প্রোটিনের একমাত্র উৎস মাছ-মাংস নয়। ডিম, ডাল, বিভিন্ন শাকসবজির মধ্যেও ভিটামিন রয়েছে। এ ছাড়া প্রতিদিন একটি করে ডিম খাওয়া যেতে পারে। ডিমের দাম খুব একটা বেশি নয়। 

জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নওগাঁর সহকারী পরিচালক রুবেল আহমেদ বলেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। কোনো অজুহাতে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বেশি রাখলে জরিমানা করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত